ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

থাইল্যান্ড

ডলফিন কাণ্ড (ভিডিও)

জেসমিন পাপড়ি, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৬
ডলফিন কাণ্ড (ভিডিও) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফুকেট (থাইল্যান্ড) থেকে: বনের পশু-পাখিই শুধু নয়, মানুষের কাছে পোষ মানে সাগরের প্রাণীও। তেমনই প্রাণী ডলফিন ও শুশুক।

নাচ, গান থেকে শুরু করে মানুষকে আনন্দ দেওয়া- কতো কি উপায়ই শেখানো যায় তাদের!

তারই নমুনা দেখা গেল থাইল্যান্ডের ফুকেট শহরের পাতং বিচের ডলফিন শো’তে।

শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের দর্শনার্থী আসেন এক ঘণ্টার শো’তে। স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের আনন্দ একটু বেশি, তবে উপভোগ করেন সবাই। আর দর্শকদের একটি বিরাট অংশ বিদেশি পর্যটক।

আসন অনুযায়ী নির্ধারিত ভাড়ার টিকিট নিয়ে শো’তে প্রবেশের আগেই আয়োজকরা সাবধান করেন, কেউ কোনোভাবেই যেন আসন না ছাড়ে। বিশেষ করে শিশুদের সাবধানে রাখার অনুরোধ জানিয়ে দর্শনার্থীদের নির্দিষ্ট আসনে বসানো হয়।

একটি কৃত্রিম জলাশয়ের চারপাশে গোলাকার স্টেডিয়ামের মতো বসার আসন। জলাশয়ের পাশের সারিকে ধরা হয় ভিআইপি আসন। এর ভাড়া অন্যগুলোর চেয়ে বেশি।

সাগরের মতোই নীল পানির জলাশয়ে বেশ কয়েকটি ডলফিনকে মনের সুখে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। পাড়ে তখন নানা কীর্তি দেখাচ্ছে দুটি শুশুক। প্রশিক্ষকদের কথামতো হাততালি দিচ্ছে, নাচ দেখাচ্ছে। আচরণ যেন মানুষের মতোই। ওদিকে মাইকেও বারবার বলা হচ্ছে, ‘এরা আমাদের মতোই। এরা আমাদেরই সন্তান’।

প্রশিক্ষকদের কথামতো শুশুক দু’টি শারীরিক কসরত করেই যাচ্ছে। তবে একটি পর্ব শেষ না হতেই খাবারের জন্য প্রশিক্ষকদের কাছে গিয়ে হা করছে তারা। প্রশিক্ষকও ওয়াদা পালনের মতো একটি পর্ব শেষ না হতেই তাদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন। গোলাকার রিংয়ের মধ্য দিয়ে নাচ, বল খেলা, নানা সুরের গানের সঙ্গে নাচসহ অনেক ধরনের কসরত দেখালো তারা।

এরপরের পর্ব ছিল আরো চমকপ্রদ। প্রথম সারির দর্শকদের সামনে দিয়ে গানের তালে তালে শুশুক দু’টি নেচে গেল। প্রশিক্ষক তাদেরকে থেমে চুমু খেতে বললেই সামনে থাকা দর্শকের গালে আদুরে চুমু বসিয়ে দিচ্ছিল দারুণভাবে প্রশিক্ষিত শুশুকরা। এ কারণেই সামনের আসনগুলো ভিআইপি। শিহরিত দর্শনার্থীরাও গাল বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন শুশুকের চুমু খেতে। লোভনীয় দৃশ্য।

এভাবে নানা কসরত আর ভেলকি দেখিয়ে বিদায় নিলো শুশুক দু’টি।

তখনও মনের আনন্দে সামনের গোলাকার জলাশয়ে চরে বেড়াচ্ছিল ডলফিনগুলো। হঠাৎ প্রশিক্ষকদের ডাক পেয়ে লাফিয়ে ওঠে তারা। কোনো ধরনের আঘাত কিংবা ইঙ্গিত ছাড়া মাইকে ডাক দিতেই তাদের এ সাড়া যেন অবিশ্বাস্যই মনে হচ্ছিল।

এবার তিনজন প্রশিক্ষকের সামনে এসে দাঁড়ালো একে একে পাঁচটি ডলফিন। আদর পেতে নিটোল শরীর এগিয়ে দিচ্ছিল প্রশিক্ষকদের কাছে। তারাও গায়ে হাত বুলাচ্ছিলেন পরম মমতায়।

এবার মুখে খাবার নিয়ে পানিতে নেমে গেল ডলফিনগুলো। একের পর এক কীর্তি দেখাতে লাগলো গ্যালারি ভর্তি দেশি-বিদেশি দর্শকদের।

প্রতিটি প্রদর্শনী দুই থেকে তিন মিনিটের। বল নিয়ে খেলা, মুখে করে পানির মধ্যে প্রশিক্ষকদের ঘোরানো, ওপর থেকে নেমে আসা রিংয়ের মধ্য দিয়ে লাফ, ডাঙায় উঠে মানুষের মতো দুই পায়ে ভর করে নাচ, হাততালি- কি পারে না তারা!

হঠাৎ করেই দর্শকদের উদ্দেশ্যে অুনষ্ঠান ঘোষণাকারী বললেন, ‘আপনারা কি ডলফিনের গান শুনতে চান?’ এরপর গোলাকার জলাশয়ের ভেতর দিয়ে অদ্ভূত সুরে গান গাইতে গাইতে ডলফিনগুলো ঘুরে বেড়ানো শুরু করে দিলো। সে গানে কথা ছিল না হয়তো, তবে অন্যরকম এক সুর ছিল। যা মুগ্ধ করেছিল উপস্থিত দর্শকদের, সে সময়কার করতালিই তার প্রমাণ দেয়।

এবার মাইকে ঘোষণা, ছবি এঁকে দেখাবে ডলফিন। পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একজন প্রশিক্ষক একটি ক্যানভাস ধরে রাখলেন। পানির মধ্যে শরীর ডুবিয়ে রেখে মুখটা বের করে তাতে তুলি ধরে সেই ক্যানভাসে যা আঁকলো ডলফিনটি, তা মোটেই কোনো পেশাদার আঁকিয়ের চেয়ে কম নয়।

মিনিটের মধ্যে আঁকা শেষ করে আবারও পানিতে শারীরিক কসরত দেখাতে থাকলো পাঁচজনের ডলফিন দলটি। ওদিকে আঁকা ছবিটি ততোক্ষণে নিলামে উঠেছে। একশ’ বাথ দিয়ে শুরু হলো নিলাম। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন দাম বলতে থাকেন। অবশেষে সাতশ এক বাথে বিক্রি হলো ডলফিনের ছবিটি।

এরপর আবারও তাদের কসরত দেখানো। আবারও কিছু খেলা। এভাবেই চোখের পলক না পড়তেই কেটে গেলো এক ঘণ্টা। শেষ হলো ডলফিন শো’।

তীরে এসে প্রশিক্ষকদের সঙ্গে তারাও বিদায় নিলো দর্শকদের কাছ থেকে। তবে ঘোষণা এলো, ডলফিন দলের সঙ্গে আন্তরিক ভঙ্গিতে ছবি তুলতে হলে চারশ’ বাথের বিনিময়ে তা সম্ভব। অনেকেই তখন এগিয়ে গিয়ে ছবি তুললেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৬
জেপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

থাইল্যান্ড এর সর্বশেষ