ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে: নিজের জন্যেই রয়েছে সুসজ্জিত অফিস। তা সত্ত্বেও খানিক বাদেই কক্ষ থেকে বের হন তিনি।
তিনি পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার। মুকিত হাসান খাঁন। ঢাকায় হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের ‘গ’ পালার অফিসার ইনচার্জ।
দলগত কাজের নেতৃত্বের মাধ্যমে নিজের মেধা, চেষ্টা আর আন্তরিকতায় হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের চিত্রটাই পাল্টে দিচ্ছেন ‘মুকিতরা’।
প্রথমবারের মতো এ বিমানবন্দরে সন্দিগ্ধ ও সন্দেহভাজন যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ভেরিফিকেশনের জন্য চালু হয়েছে ‘ডিপোর্টেশন ও ইন্টেরোগেশন সেল’।
বিমানবন্দরে পা দিলেই ইমিগ্রেশন হয়রানি। দীর্ঘদিনের এ অপবাদ ঘুঁচিয়ে ‘মুকিতদের’ হাত ধরেই আন্তর্জাতিক আর উন্নত ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনার পথে হাঁটতে শুরু করেছে দেশের প্রধান এ বিমানবন্দর।
বিদেশি বিনিয়োগকারী, বায়ার ও পর্যটকদের বিশেষ আগমনী ও বর্হিগমনী কাউন্টার, ভিআইপি ডেস্ক, অসুস্থ যাত্রীদের জন্য হুইলচেয়ার, ট্রানজিট যাত্রী ও বিমানের ক্রুদের জন্য এটিআর/ডিটিআর সেবা। বিভিন্ন দেশ থেকে আউটপাস নিয়ে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদেরও ইমিগ্রেশন সেবা ব্যবস্থাপনার সব কিছু নিয়েই প্রস্তুত স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন পুলিশ।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের মুখে সম্প্রতি আলোচনায় আসা নামটিই স্পেশাল ব্রাঞ্চের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মুকিত হাসান খাঁন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ বিষয়ে অধ্যয়ন শেষে বিসিএস দিয়ে ২০১২ সালে যোগ দেন পুলিশে।
বিদেশে আসা-যাওয়ায় ইমিগ্রেশন অতিক্রমে বিড়ম্বনার আরেক নাম ‘ইডি’ (অ্যাম্বারকেশন-ডিসঅ্যাম্বারকেশন) কার্ড। আগে উড়োজাহাজ রানওয়ের মাটি স্পর্শ করলে বা ইমিগ্রেশন অতিক্রমের আগেই ইডি কার্ড পূরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এখন সেটা নেই। ঝক্কি ঝামেলা না থাকায় এখন স্বস্তি ও স্বল্প সময়ে ইমিগ্রেশন অতিক্রম করতে পারছেন আগমনী ও বহির্গামী যাত্রীরা।
এছাড়াও চলতি বছর থেকেই সর্বপ্রথম হজযাত্রীদের জন্য চালু হয়েছে অনলাইন ভেরিফিকেশন সিস্টেম। যে কারণে দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারছেন লক্ষাধিক হজযাত্রী।
মুকিত বলেন, ইমিগ্রেশন বিভাগের এ বদলে যাওয়ার কারিগর স্পেশাল ব্রাঞ্চের অতিরিক্ত আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী স্যার। তার সদয় নির্দেশনা ও ইমিগ্রেশন সেলের এস এস মাহবুবুর রহমান স্যারের তত্ত্বাবধানেই আমরা দলগতভাবে কাজ করছি।
মুকিত হাসান খাঁন বাংলানিউজকে জানান, স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইমিগ্রেশন পুলিশ বছরে গড়ে ৬৫ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয়। যার মধ্যে কেবল ৫২ লাখ যাত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
এই কর্মকর্তা জানান, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রতিদিন গড়ে ১৮ হাজার যাত্রীর ইমিগ্রেশন সেবা দেওয়া সত্যিই চ্যালেঞ্জের। এখন বলার সময় এসেছে উন্নত দেশের ইমিগ্রেশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখন আমরাও যাত্রীদের নির্ভুল ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারছি। যে কারণে বিগত বছরের তুলনায় মানবপাচার, বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচারের মতো অপরাধ কমে গেছে ৯৫ শতাংশ।
বড় কথা আমাদের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ বেড়েছে ইন্টারপোল, বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাস, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতালয়, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জনশক্তি ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসের সঙ্গে। যে কারণে অবৈধ ও অসাধু আদম ব্যবসায়ী, দালালদের আতংকের নাম ইমিগ্রেশন পুলিশ। জানান তিনি।
এছাড়া ইমিগ্রেশনে যাত্রী হয়রানি বন্ধের জন্য স্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ সেন্টার।
তিনি বলেন, পর্যটন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা- যাই বলুন না কেন দেশের অর্থনীতি বা ইমেজে অবদান রাখতে পারে। বিদেশি অতিথি ছাড়াও বিশ্ব এজতেমায় আগত বিদেশি, যাদের দেশে আমাদের দূতাবাস নেই তাদের আমরা সর্বোচ্চ ৩০ দিনের অন অ্যারাইভাল ভিসা সুবিধা দিচ্ছি।
চট্রগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরেও ডিজিটাল ইমিগ্রেশন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে সব স্থল ও নৌবন্দরের ইমিগ্রেশন সিস্টেম ডিজিটালাইজড করার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। যোগ করেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মুকিত হাসান খাঁন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৬
এএ