ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

আলোর মুখ দেখেনি ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
আলোর মুখ দেখেনি ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট ছবি: মাছুম কামাল

ঢাকা: পরিকল্পনা ২০১২ সালে শুরু হলেও গত ১ দশকের আলোর মুখ দেখেনি ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টের (টিএসএ) কাজ। পরিকল্পনা শুরুর পর কয়েক দফায় পদক্ষেপ নেওয়া হলেও শুধুমাত্র পরিসংখ্যান ব্যুরোর ম্যানুয়াল একটি প্রকাশনা ছাড়া নেই কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, পর্যটকদের সঠিক পরিসংখ্যান নির্ণয়ে ২০১২ সালে একবার টিএসএ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক, ইমিগ্রেশন পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সহায়তা না পাওয়ায় তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। পরে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণার পরও আবারও পর্যটকদের পরিসংখ্যান নির্ণয়ে ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট (টিএসই) চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরো এই কাজটি করার  উদ্যোগ নেয়। কিন্তু, পরবর্তীতে দায়সারা গোছের প্রকাশনাতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায় টিএসএ তৈরির কাজ।

এ বিষয়ে খোঁজ নিলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য দানকারী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বাংলানিউজকে জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইটে খুঁজলেই এটি পাওয়া যাবে। আদতে তিনি যা বলেছেন, সেটি একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রকাশনা বৈ ভিন্ন কিছু নয়।

পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, টিএসএ বাস্তবায়ন করা গেলে কতজন বিদেশি পর্যটক দেশে আসেন, তারা কী পরিমাণ অর্থ খরচ করেন, কোথায় বেড়াতে যান, হোটেল, পরিবহন ও অন্যান্য খাতে কী পরিমাণ আয় হয় তা সহজেই সঠিকভাবে জানা যাবে। একইসঙ্গে জানা যাবে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি পর্যটকদের তথ্যও।  

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পর্যটন ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমানের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটন নিয়ে কাজ করছেন তিনি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, টিএসএ ধারণাটা প্রথম প্রবর্তন করে জাতিসংঘ পর্যটনসংস্থা ২০০৮ সালে। এরপর সদস্য দেশগুলোকে এটি বাস্তবায়নে অনুরোধ করে তারা। অনেক দেশ সেটি বাস্তবায়নও করেছে। বাংলাদেশে এটি তৈরিতে দুবার বাজেট হলেও, কাজটি সম্পন্ন হয়নি। এটি যদি বাস্তবায়ন করা যেত, তাহলে অভ্যন্তরীণ পর্যটক কত, বিদেশি পর্যটক কত, এই খাতে ম্যানপাওয়ার কত, জিডিপিতেইবা অবদান কত জানা যেত৷ কিন্তু এখন এই বিষয়গুলোর কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য জানা যায় না। ফলে, এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আসে না বা সরকারও সেভাবে সহায়তা করে না।  

তিনি বলেন, এই কাজটি মূলত ট্যুরিজম বোর্ডের করার কথা। এর আগে যারা ট্যুরিজম বোর্ডের দায়িত্বে ছিলেন, তারা কেউ এই কাজটা নিয়ে গুরুত্ব দেননি। কেন দেন নাই সেটা একটা রহস্যময় ঘটনা। হয়ত, একটা নতুন কাজ শুরু করলে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, একটা শ্রমসাধ্য বিষয়, তাই গুরুত্ব দেন নাই। তবে, ট্যুরিজম বিকাশের স্বার্থে এটি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে কথা হলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম অ্যাক্সপ্লোরার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিইএ) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের দাবি ছিল পর্যটক, গবেষক, সাংবাদিকরা যাতে ট্যুরিস্ট সম্পর্কিত সঠিক ডাটা পান, সেজন্য টিএসএ বাস্তবায়ন করা। এখন আমরা পর্যটন নিয়ে যে ডাটা পাচ্ছি, এটি আসলে পুরোটাই মনস্তাত্ত্বিক। টিএসএ বাস্তবায়ন হলে, অটোমেটিক সমস্ত তথ্য সঠিকভাবে পাওয়া যেত। শুধু পর্যটন নয়, পর্যটনশিল্প সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোর পরিবেশ রক্ষায়ও এটি কাজে আসত। গত ১০-১২ বছর ধরেই আমরা এ দাবি জানিয়ে আসছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের বাংলানিউজকে বলেন, স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট আসলে আমাদের না। এটা পরিসংখ্যান ব্যুরোরই কাজ। তারা এটা করেছে তো। কিন্তু এটা যেভাবে হওয়ার কথা, আধুনিকভাবে সেভাবে তো হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, যখন তারা এটা তৈরি করে, স্বাভাবিক সিচুয়েশন ছিল না। তখন বিদেশি পর্যটক আসে না, আমাদের এখানে তখন বিমান চলে না, এরকম একটা সিচুয়েশনে তারা এটা করেছে। তাদের সম্ভবত একটা সুনির্দিষ্ট সময় ছিল এটা করার জন্য। এখন আবার ট্যুরিজম স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি যে এটাকে আপডেট করতে হবে। প্রতিবছরই একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর এটা করতে হবে। আমরা যেটা করেছি, আমরা একটা গবেষণা করেছি, শুধুমাত্র হিউম্যান রিসোর্স নিয়ে। যে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই সেক্টরে কর্মরত লোকের সংখ্যা হবে ৭২ লাখ। এটা ৭টি সেক্টরে হবে। এটা হচ্ছে ন্যাশনাল ট্যুরিজম হিউম্যান ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট স্ট্রাটেজি। ধরেন, কক্সবাজার একটা জায়গা, এটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আছে। কিন্তু শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকলেই তো হবে না। এখানে যখন একজন মানুষ যাবে, তার খাবার দরকার হবে, তার ট্রান্সপোর্ট দরকার হবে, তার অ্যামিউসমেন্ট দরকার হবে। তো এসব বিষয় নিয়ে আমরা মনে করি যে হিউম্যান ডেভেলপমেন্টটা খুব জরুরি। আমরা চেষ্টা করছি একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য। আমরা ডাটা কোথায় পাবো? আমরা ডাটা পাবো ইমিগ্রেশন থেকে। তাহলে, ইমিগ্রেশন তো আমাকে ডাটাটা দিতে হবে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত আমরা এই ডাটা পেতাম, কোভিডের পর আর এটা পাচ্ছি না। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি প্রতিদিনের তথ্য চেয়ে।

সেজন্য আধুনিক এই পদ্ধতি জরুরি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে একমত। আমরা চাচ্ছি কিন্তু ডাটা যেখানে ফর্মুলেট হচ্ছে অথবা যেখানে ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে, সেখানে অটোমেটেড হবে। কারা-কারা এটাতে এক্সেস পাবে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। ডাটা এন্ট্রি হচ্ছে, কিন্তু আমরা পাচ্ছি না। বিশ্বব্যাপী এটা হচ্ছে। মালদ্বীপ বলেন, মালয়েশিয়া বলেন, মরিশাস বলেন, কিন্তু আমরা পারছি না। তবে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি, এটা পাবলিক হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২২
এমকে/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।