খুলনা: পদ্ম পাতার ফাঁকে সূর্যের সোনালি আভা। ওপরে শরতের আকাশ, নিচে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।
ডিঙি নৌকায় ভেসে জলের ছন্দ তালে পদ্ম ফুল স্পর্শ করার টানে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। নৌকায় বিলে ঢুকলে মনে হবে যেন অভ্যর্থনা জানাচ্ছে পদ্মফুল। মন ভোলানো দৃশ্য দেখলে মুগ্ধ হবেন যে কেউ। অনেকেই পদ্মফুলের সাথে কাটানো সময়ের স্মৃতি ধরে রাখতে তুলছেন ছবি।
প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য খুলনার তেরখাদা উপজেলার ভূতিয়ার বিল যেন এক স্বর্গ রাজ্য। হাজার হাজার পদ্ম ফোটে আছে সমগ্র বিলজুড়ে।
ভূতিয়ার বিলে ছেলে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মো. এমএ সাদি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মফুলের সৌন্দর্য দেখতে খুলনা শহর থেকে এখানে এসেছি। চোখ যেদিকে যায় সেদিকেই শুধু পদ্ম আর পদ্ম। সত্যিই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
এখানে ঘুরতে আসা অনেকেই বলছেন, প্রাকৃতিকভাবে ফোটা এই পদ্মফুলের বিলটিকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা যায় মৌসুমি পর্যটন কেন্দ্র। পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো গেলে এটি হতে পারে জলাবদ্ধ এলাকা ভূতিয়ার বিল সংলগ্ন হতদরিদ্র মানুষের বাড়তি আয়ের উৎস।
জানা যায়, ভূতিয়ার বিলকে কেন্দ্র করে মৌসুমি কর্মসংস্থান চাঙা হয়ে উঠেছে। ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতিতে এখানে বাড়ে নৌকার কদর। গত কয়েক বছর প্রকৃতিপ্রেমী মানুষকে পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নৌকার মাঝি বনে গেছেন তেরখাদা এলাকার অনেকেই। দেশি মাছের ভাণ্ডার পদ্মবিল। কৈ, শিং, মাগুরের মজুদ এখানে। এছাড়া রয়েছে শৈল, গজাল, রয়না, খলিশা, পুঁটিমাছসহ দেশি অনেক প্রজাতির মাছ। শীতে পানি কমতেই জাল, পোলো নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়ে অনেকেই।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলার দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধ এলাকার মধ্যে অন্যতম ভূতিয়ার বিল। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার ‘দুঃখ’ বলে পরিচিত এই বিল। বছরের অধিকাংশ সময়ে এখানে ফসলাদি হয় না। সরকারের ‘ভাসমান সবজি ও মসলা চাষ’ প্রকল্পের আওতায় গত তিন বছর ধরে এ এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে।
বর্তমানে এলাকার ১০ হাজার হেক্টর জমি এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ৮০টি ভাসমান বেড। আর এই প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন শতাধিক ভূমিহীন কৃষক। ফলানো হচ্ছে লাউ, কুমড়া, ঝিঙে, শিম, বরবটি, করলা, কাঁকরোল, লালশাক, পুঁইশাক, পালংশাক, কলমিশাক, আলু, পটোল, তরমুজ, বাঙ্গি, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদ, আদা ইত্যাদি।
খুলনার তেরখাদা উপজেলা এবং নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে ভূতিয়ার বিল। এই বিলের আয়তন প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর। এর মধ্যে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর জমিতে পদ্মফুল ফোটে। আর গোটা বিলই শ্যাওলা ও আগাছায় ভরা। এই বিলের চারদিকে ২২টির মতো গ্রাম রয়েছে। আঠারোবাঁকি ও চিত্রা নদী দিয়েই মূলত বিলের পানি নিষ্কাশিত হয়। তবে নদীগুলো এখন মরে গেছে। ভরাট হয়ে গেছে বিলের মধ্য দিয়ে একসময়কার প্রবহমান খালগুলো। তাই বছরের পর বছর জলাবদ্ধ ভূতিয়ার বিল।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কপিল দেব বসাক বাংলানিউজকে বলেন, ভূতিয়ার বিলে পদ্ম ফুলের পাশাপাশি ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এলাকায় এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা। এসব কৃষকদের আমরা নানা ভাবে সহযোগিতা করছি।
কীভাবে যাবেন:
ভূটিয়ার পদ্মা বিল দেখতে প্রথমে খুলনা শহরে আসতে হবে। খুলনা শহর থেকে জেলখানা ঘাটপাড় হয়ে মোটরবাইক,বাস বা মাহিন্দ্রে তেরখাদা বাজার আসতে হয়। তেরখাদা বাজার খুলনা থেকে প্রায় ১৮কিলোমিটার দূরে। তেরখাদা বাজারে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলে পদ্ম বিলের সন্ধান দিয়ে দেবে। পদ্ম বিলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছোট ডিঙি নৌকা পাওয়া যায়। নৌকায় চড়তে হলে দর দাম করে নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
এমআরএম/এএটি