কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বসছে সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলা-বিচ কার্নিভ্যাল। এই আয়োজনের প্রধান পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। আর আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর রয়েছে টানা তিনদিনের ছুটি। তাই এবার লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটবে এমন আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব পর্যটন দিবসের সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, কনসার্ট থাকছে।
বিচ কার্নিভালে দর্শক মাতাবে দেশের বিখ্যাত ব্যান্ড দল চিরকুট, আভাস, সুনামগঞ্জের শাহ আবদুল করিমের দল, কুষ্টিয়ার লালন গীতির দল, সিলেট, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহের পালা গানের দলসহ জনপ্রিয় ব্যান্ড ও সংগীত শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করবেন তিন পার্বত্য জেলা- বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা।
একদিকে শুরু হচ্ছে টানা তিন দিনের ছুটি, তার সঙ্গে শুরু হচ্ছে সপ্তাহজুড়ে উৎসব। তাই সৈকত নগরীও সাজছে নতুন সাজে। চারদিকে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, লাবণী মঞ্চের সামনে সড়কের দুপাশে তৈরি হচ্ছে স্টল। হোটেল কল্লোলের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষেও দোকানপাট বসানো হচ্ছে। তিন রাস্তার মুখে বসানো নৌকা থেকে কিছু দূরে নির্মিত হচ্ছে মঞ্চ।
সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা উপলক্ষে হোটেল, মোটেল, পরিবহন ব্যবস্থা ও রেস্তোরাঁর মালিকরাও দিচ্ছেন আকর্ষণীয় ছাড়। হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সকল রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর ও সব বাস ভাড়ার ওপর ১৫ ও ২০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়া হেলিকপ্টারে জয় রাইড, টিউব ভাড়া, কিটকট চেয়ার ভাড়া, প্যারাসেইলিং রাইড, জেট স্কি/বিচ বাইক, লকার ভাড়া, গাড়ি পার্কিং ছাড়সহ চাঁদের গাড়ি ভাড়া ও ফ্লাইট ভাড়াতেও থাকছে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা। এরইমধ্যে আগামী ২৮ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা ৩ দিনের ছুটিতে শতভাগ বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছে তারকামানের হোটেলগুলো।
হোটেল সি-গালের ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ রাব্বী বলেন, টানা ছুটি ও সপ্তাহব্যাপী মেলা ও বিচ কার্নিভ্যালকে কেন্দ্র করে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে হোটেলকে। টানা তিন দিনের ছুটিতে হোটেল শতভাগ রুম বুকিং হয়েছে। আশা করি, পর্যটকরা যেমন আনন্দ পাবে ঠিক তেমনি ভালো ব্যবসাও হবে।
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের ফ্রন্ট অফিসার একে রানা বলেন, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল উপলক্ষে ছাড় দেওয়ায় টানা তিন দিনের ছুটিতে সব রুম বুকিং হয়েছে। এখন পর্যটকরা আসলে তাদের স্বাগত জানাব।
প্রশাসন বলছে, উৎসবে ভিন্নতা আনতে আয়োজনে আনা হচ্ছে নতুন মাত্রা। তৈরি হয়েছে নতুন নতুন স্পট, যা সাজানো হয়েছে রঙিন ছাতায়। একইসঙ্গে সৈকতের বালুকাবেলায় তৈরি হচ্ছে বালু ভাস্কর্য।
ভাস্কর্য শিল্পী শেখ রাসেল বলেন, সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দুটি বালু ভাস্কর্য নির্মিত হবে। একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অপরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আশা করি, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শেষ হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইয়ামিন হোসেন বলেন, সাত দিনব্যাপী চলা এই পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যালে কক্সবাজারসহ দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। বিশ্ববাসীর সামনে কক্সবাজারকে উপস্থাপন করতেই এ মেলার আয়োজন। আশা করি, এ আয়োজনে উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করা হচ্ছে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতে কয়েক স্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
আরএইচ