রাঙামাটি: সবুজ নগর রাঙামাটির আলাদা সুখ্যাতি রয়েছে পুরো দেশে। মূলত পর্যটকরা এ অঞ্চলে আসেন প্রকৃতির রূপ অবলোকন করতে।
পর্যটকদের এ জেলার প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে গড়ে উঠেছে অনেক হোটেল-মোটেল-কটেজ, রিসোর্ট। কাপ্তাই হ্রদের পাড়ে মুখরোচক পাহাড়ি ঐতিহ্যবাহী খাবার নিয়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য রেস্টুরেন্ট।
প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে তাদের স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসেন। সারাদিন কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু দেখে বাড়ি ফিরতে হয় হতাশ হয়ে। যে আবেগ নিয়ে এখানে বেড়াতে আসেন, ক্ষণিক পর সেই আবেগ উবে যায়।
কারণ, পুরো শহর অপরিচ্ছন্ন, যত্র-তত্র গাড়ি পার্কিং, চাহিদামানের হোটেলে-মোটেলের অভাব, অটোরিকশার বিকল্প যানের ব্যবস্থা না থাকা এবং অপরূপ কাপ্তাই হ্রদের দূষণ এবং দখল।
রাঙামাটির সিম্বল খ্যাত ‘ঝুলন্ত সেতু’ দেখতে প্রতি বছর হাজারো পর্যটক ছুটে আসেন। বছরের একটি সময় ঝুলন্ত সেতু হ্রদের পানিতে ডুবে থাকে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ বছর ধরে সেতু সংস্কার বা উঁচু স্থানে বসানোর দাবি জানিয়ে এলেও পর্যটন করপোরেশনের উদাসীনতা, স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়সারা ভাবের কারণে ঝুলন্ত সেতুটির কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। পর্যটকরা ঝুলন্ত সেতু না দেখে হতাশ হয়ে ফিরছেন।
পর্যটকদের আরেকটি সমস্যা হলো, যেখানে পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে সেখানে কোনো শৌচাগার নেই। নেই কোনো নিরাপত্তা। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ভয়ে প্রায়ই তারা তটস্থ থাকেন। ইঞ্জিন চালিত বোটের চালকদের অদক্ষতার কারণে হ্রদে অনেক পর্যটকের প্রাণহানি ঘটেছে।
পর্যটন দিবস (২৭ সেপ্টেম্বর) এলে এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধিরা পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের গল্প শোনালেও গল্প গল্প থেকেই যায়, উন্নয়ন থেকে যায় ফাইলবন্দি। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সঠিক কোনো গাইড লাইন না থাকার কারণে জেলার পর্যটন শিল্প দিন দিন ধুঁকছে।
পটুয়াখালী জেলা থেকে আসা পর্যটক ব্যবসায়ী রঙ্গলাল চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটিতে আশা নিয়ে বেড়াতে এসেছিলাম, হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছি। ঝুলন্ত সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
এ পর্যটক আরও বলেন, সারাদিন যেখানে বেড়াতে গেছি সেখানেই লক্ষ্য করলাম, কোনো টয়লেট (শৌচাগার) নেই। পর্যটকদের সেবা দিতে কোনো গাইড পেলাম না। নিজেরা যতটুকু খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ততটুকুতে বেড়িয়েছি।
পঞ্চগড় থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক অমর রায় বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকায় অনেক পরিবহন সেবা থাকলেও এখানে কোনো উন্নতমানের পরিবহন সেবা নেই। কাপ্তাই হ্রদ এতো বড়। এখানে কোনো নিরাপত্তা দেখলাম না। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব সেবার মান বাড়াতে না পারে, তাহলে এ জেলায় পর্যটকরা আসা বন্ধ করে দেবে।
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের চেয়ারম্যান খোকেনশ্বর ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জেলায় সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো কাপ্তাই হ্রদ। যেটি সিঙ্গপুর থেকেও বড়। এরপরও আমরা অর্থনৈতিক সংকটে পুড়ছি।
রাবিপ্রবি’র সহকারী অধ্যাপক আরও বলেন, আমরা সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে ওয়াটার বেসিস অর্থাৎ কাপ্তাই হ্রদ নিয়ে এগোতে পারলে এ এলাকা অনেক সমৃদ্ধ হবে, সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।
রাঙামাটি জেলা পরিষদেও সদস্য ও পর্যটন বিভাগের আহ্বায়ক নিউচিং মারমা বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। এ এলাকার উন্নয়ন না হলে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সিঁড়িতে পৌঁছাতে পারব না। তাই সরকার ২০২৪ সালের মধ্যে এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বড় আকারের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আশা করছি, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে আমাদের এ অঞ্চল পর্যটন শিল্পে এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
এসআই