ঢাকা: আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস। দেশের পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তিন বছর আগে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হলেও এখনো তা আলোর মুখ দেখেনি।
বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে নিরাপত্তা সংকট। এসব স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়েও রয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, সুন্দরবনসহ কয়েকটি পর্যটক এলাকার মতো অন্যতম পর্যটকবান্ধব এলাকায়ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিনটি ধাপে পর্যটন মহাপরিকল্পনার কাজ চলছে। প্রথম ধাপে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেশের পর্যটনশিল্পের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা, সংকট, দুর্বলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করা হবে। বেসরকারি অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নেওয়া হয় প্রথম ধাপেই। দ্বিতীয় ধাপে দেশের পর্যটনের লক্ষ্য, পদক্ষেপ, কৌশলগত লক্ষ্য, অগ্রাধিকার ও যোগাযোগের ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়। পর্যটন উন্নয়ন, প্রমোশন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩, ৫ ও ১৫ বছরমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনাও হয় দ্বিতীয় পর্যায়ে। তৃতীয় ধাপে দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা করা। পর্যটন পণ্যের উন্নয়ন, অর্থায়ন ও বিনিয়োগের কৌশল নিয়ে কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। বিপণন ও প্রচারের কৌশলও উঠে এসেছে এই ধাপে।
এছাড়া মেলা, ফেস্টিভ্যাল, কার্নিভাল, কালচারাল অনুষ্ঠান, ব্র্যান্ডিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার, ভিডিও নির্মাণ, ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শনী ও ওশান ট্যুরিজমকে বেসরকারি উদ্যোগে চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রায় চূড়ান্ত। কোনো ভুলত্রুটি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে, ঠিক কবে এই মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে, তা কেউ বলতে পারেননি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহাপরিকল্পনা তৈরিতে যুক্ত রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনায় অবকাঠামো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষা, বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে মহাপরিকল্পনা। গত বছরের ডিসেম্বরে মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু করা যায়নি। শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে। দেশের পর্যটনশিল্পকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিটিবিতে লোকবল সংকট
দেশের পর্যটনের অভিভাবক বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড মাত্র ১০ জন কর্মকর্তা নিয়ে চলছে। যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে থাকার কথা কমপক্ষে ১০০ জন। এছাড়া, জেলা পর্যায়েও নেই কোনো অফিস। প্রধান নির্বাহীর পদটিও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন বলেছেন, ট্যুরিজম বোর্ডের লোকবল বাড়ানো হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকা বিটিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি শিগগিরই পূরণ করা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ (২৭ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস পালিত হবে বাংলাদেশেও। ঘটা করেই ‘বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যাল’ আয়োজন করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ফেস্টিভ্যাল চলবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই ফেস্টিভ্যাল স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর উদ্বোধনের কথা রয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে পর্যটক ও পর্যটন কেন্দ্রের নিরাপত্তা, আবাসন, অ্যাভিয়েশন পর্যটন খাতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা এবং পর্যটনশিল্পে নারীর অংশগ্রহণ, খাদ্য পর্যটন, পর্যটন ও অ্যাভিয়েশন সাংবাদিকতা, প্লাস্টিকমুক্ত সেন্টমার্টিন ইত্যাদি বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে গম্ভীরা, সিলেটের আঞ্চলিক গান, গাজী কালুর পট, পথনাটক, বাউলগান, পুঁথিপাঠ, কাওয়ালি এবং বিশিষ্ট শিল্পীদের গানের আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
এমকে/এসআইএস