ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পর্যটন মেলায় দেশ-বিদেশ ভ্রমণে অফারের ছড়াছড়ি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪
পর্যটন মেলায় দেশ-বিদেশ ভ্রমণে অফারের ছড়াছড়ি 

ঢাকা: রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) চলছে দেশের বৃহত্তম পর্যটন মেলা ‘দ্বাদশ বিমান বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ)’।  

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) শুরু হওয়া এই মেলা শেষ হবে আজ শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি)।

মেলা শুরুর ক্ষণ থেকেই ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের আকর্ষণে মেলায় দেশ-বিদেশ ভ্রমণে অফারের পসরা মেলে বসেছে স্টলগুলো।  

ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মেলার শেষ দিনেও ভিড়  অনেকগুণ বেড়ে গেল। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের আকর্ষিত করতে বিভিন্ন ধরনের অফার ও মূল্য ছাড়া দিচ্ছে অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক ও দেশি এয়ারলাইন্স, ট্যুরিজম বোর্ড, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইনার, হাসপাতালগুলো।  

ট্যুর প্যাকেজ, বিমানের টিকেট ও হোটেল বুকিংয়ের ওপর ১০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দিচ্ছে বেশিরভাগ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলো। এ যেন অফারের ছড়াছড়ি।

বৃহস্পতিবার সকালে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলায় অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন প্যাকেজ বুকিংয়ের ওপর অফার ও মূল্য ছাড় দিচ্ছেন। ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীরাও সেসব অফার গ্রহণ করে বিভিন্ন ট্যুর প্যাকেজ নিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মেলায় তিনটি হলে ১৪টি প্যাভিলিয়নসহ মোট ১৫০টি স্টল রয়েছে। এসব প্যাভিলিয়ন ও স্টলে দেশি-বিদেশি ৬০টির বেশি আন্তর্জাতিক ও দেশি এয়ারলাইন্স, ট্যুরিজম বোর্ড, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইনার, হসপিটাল তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্কসহ মোট ১১টি দেশের ট্যুর অপারেটর ও ট্রাভেল এজেন্টরা এতে অংশগ্রহণ করেছে।

সুন্দরবন হলিডেজ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্র্যান্ড প্রোমোটার সাফা আহমেদ বলেন, আমরা বর্তমানে সুন্দরবন ভ্রমণের তিন দিন, দুই রাতের একটি প্যাকেজ দিচ্ছি। যেটি থাকা-খাওয়া, ঘোরাসহ জনপ্রতি ১৮ হাজার টাকা পড়বে। পর্যটন মেলায় যদি কেউ এই প্যাকেজ বুকিং দেয়, তাহলে তাকে ১০-২০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছি। দর্শনার্থীদের আমরা সাড়া পাচ্ছি। অনেকে এই প্যাকেজ বুকিং দিচ্ছেন।

ট্যুর গ্রুপ বিডি নামের আরেকটি ট্র্যাভেল এজেন্সি তাদের ট্রিপ বুকিংয়ে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ ও রিসোর্ট ও হোটেল বুকিংয়ে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড় দিচ্ছে।  

এজেন্সিটির ব্যবস্থাপক জোহায়ের মাহতাব জারিফ বলেন, আমাদের এই গ্রুপটি ফেসবুকে বেশ পরিচিত। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও নিজেদের পরিচিত করতে আমরা এই মেলায় অংশ নিয়েছি। আমরা বিভিন্ন ট্রিপ বুকিংসহ লাইভ রিসোর্ট, হোটেল বুকিংয়ের সুবিধা দিচ্ছি। মেলায় এই বুকিং দিলে ২০-৬০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড়ের ব্যবস্থা রেখেছি।

মেলায় দর্শনার্থীদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দর্শনার্থীদের ভালোই সাড়া পাচ্ছি। আজকে সকালেও আমাদের তিনটি আন্তর্জাতিক ট্রিপ বুক হয়েছে। এর মধ্যে থাইল্যান্ডের ২টি ও মালদ্বীপের একটি। আমরা যে যেভাবে তাদের ট্রিপ সাজাতে চাচ্ছে সেভাবেই ট্রিপ আয়োজন করে দিচ্ছি।

পর্যটন মেলায় সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে টিকেট বুকিংয়ের ওপর ১৫ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।  

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির রিজারভেশন ম্যানেজার গোলাম মোস্তফা বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৪ কোটি টাকার মতো টিকেট বিক্রি করেছি।

রুম বুকিংয়ের ওপর ১৫-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে হোটেল রেডিসন ব্লু। তারা ঢাকার হোটেলে রুম বুকিংয়ের ওপর ১৫-২০ শতাংশ ও চট্টগ্রামের হোটেলের রুম বুকিংয়ের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে।

এছাড়া হজ-ওমরাহের প্যাকেজ বুকিংয়ের ওপর ছাড় দিতে দেখা গেছে একাধিক প্রতিষ্ঠানকে।

মেলায় পণ্য ও সেবা প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল বি টু বি সেশন-সেমিনার ও গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং দেশের পর্যটন গন্তব্যের উপর প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।

পর্যটন মেলা সম্পর্কে আয়োজক সংস্থা টোয়াবের পরিচালক (বাণিজ্য ও মেলা) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে গড়ে তোলার জন্য ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর টোয়াব এই আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করে আসছে। এবার আমরা ১২তম বারের মতো এই আয়োজন করেছি। এবারের মেলা আগের বছরের তুলনায় অনেক আকর্ষণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ ছিল। আজকে মেলার শেষ দিন। গত দুই দিনে মেলায় দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এই মেলা থেকে কোনো ট্যুর প্যাকেজ বা হোটেল বুকিং দিলে পর্যটকরা সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এই মেলায় একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ একই ছাতার নিচে সব ধরনের তথ্য পাচ্ছে। পাশাপাশি মেলায় বি টু বি সেশনের মাধ্যমে আমরা বিজনেস নেটওয়ার্ক গড়ার চেষ্টা করেছি। এই মেলার মাধ্যমে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে তুলে ধরেছি। তাদের আমরা জানান দিতে চেষ্টা করেছি, বাংলাদেশ পর্যটকদের জন্য একটি সুরক্ষিত জায়গা। পাশাপাশি এই মেলার মাধ্যমে বিদেশিরা খুশি হয়ে বাংলাদেশে ইনভেস্ট করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, মেলায় বিভিন্ন এয়ারলাইন্স, ট্যুরিজম বোর্ড, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, হোটেল, রিসোর্ট, ক্রুজ লাইনার, হসপিটাল দর্শনার্থীদের বিভিন্ন ধরনের অফার দিয়েছে। দর্শনার্থীরা এসব অফার উপভোগ করছে। গত দুইদিনে প্রায় ২০ হাজার দর্শনার্থী এসেছেন। আজকে শেষ দিনে আরো ১০-১২ হাজার দর্শনার্থী আসবে বলে আমরা আশা করি।

তিন দিনব্যাপী পর্যটন মেলার আয়োজন করেছে দেশের পর্যটন শিল্পের শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)।

মেলার টাইটেল স্পন্সর হিসেবে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। এছাড়া সহযোগী হিসেবে রয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।  

গত বৃহস্পতিবার মেলার উদ্বোধন করেন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান। মেলা চলবে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪
এসসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।