ঢাকা, শনিবার, ৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ জুন ২০২৪, ১৪ জিলহজ ১৪৪৫

পর্যটন

সড়কপথে ভুটান ভ্রমণ

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০১ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০২৪
সড়কপথে ভুটান ভ্রমণ ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য বিদ্যমান ভ্রমণ নীতি সংশোধন করেছে ভুটান। দেশটির পর্যটন বিভাগ জানিয়েছে, নতুন ভ্রমণ নীতি অনুযায়ী, বাংলাদেশি পর্যটকদের টেকসই উন্নয়ন ফি (এসডিএফ) হিসেবে প্রতিদিন ১৫ মার্কিন ডলার দিতে হবে; যা আগে ছিল দিনে ২০০ ডলার।

এই নীতি কার্যকর হয়েছে গত ২ জুন থেকে। তাই এখন চাইলে কম খরচে খুব সহজেই ভ্রমণপিপাসুরা ঘুরে আসতে পারেন ভুটান।

ভারতের উত্তরাঞ্চল আর নেপালের মতোই সবুজ পাহাড়ে ঘেরা দেশ ভুটান। চীন ও ভারতের মাঝামাঝি অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিকে বলা হয় বিশ্বের সুখী জনপদ। এই দেশটির নগর, বন্দর, সুন্দর পাহাড় আর পরিপাটি জনবসতি দেখে মন ভরে যাবে যে কারও।

বাংলাদেশের অনেকেই প্লেনের পরিবর্তে স্থলপথে নিকট দূরত্বের দেশগুলো ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। সেক্ষেত্রে অনেকে সড়কপথেও ভুটান যেতে পারেন। সড়কপথে ভুটান যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই ভারতের ট্রানজিট ভিসা (ডাবল এন্ট্রি) নিতে হবে। আর ভারত থেকে ভুটানে প্রবেশে পেয়ে যাবেন অন-অ্যারাইভাল ভিসা।

যেভাবে সড়কপথে যাবেন ভুটান
শুরুতে ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সোজা যেতে হবে লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্তে। ঢাকার কল্যাণপুর-শ্যামলী-গাবতলী থেকে হানিফ, আনাস, বুড়িমারী এক্সপ্রেস, শ্যামলী, এসআর, মানিক, নাবিল পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি বাস ছাড়ে। ভাড়া ৮০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যে। রাত ৯টার মধ্যে এসব বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। পরদিন সকালে অর্থাৎ ভোরে পৌঁছে যায় বুড়িমারী। বাংলাদেশের এ পাশের নাম বুড়িমারী, আর ভারতের ওপাশের নাম চ্যাংড়াবান্ধা। সীমান্ত খোলা হয় সকাল ৯টায়।

এ পাশের ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে চ্যাংড়াবান্ধা যেতে হবে। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা সেরে উত্তর-উত্তর-পূর্ব পথ ধরে যেতে হবে পশ্চিমবঙ্গের ‘জয়গাঁও’ সীমান্তে। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে ট্যাক্সিতে যাওয়া যায় জয়গাঁও। সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো। ট্যাক্সিতে ৫০০ রুপি মতো খরচ পড়ে জনপ্রতি। রিজার্ভ যেতে চাইলে লাগবে দেড় থেকে দুই হাজার রুপি। বাসেও যাওয়া যায়। আছে চ্যাংড়াবান্ধা-জয়গাঁও বাস সার্ভিসও। সেক্ষেত্রে খরচ কমই হবে।

জয়গাঁও থেকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পয়েন্ট যেতে টেম্পোতে চড়তে হয়। ২০/৩০ রুপির মতো খরচে যেতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এরপর সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে হেঁটেই ঢুকতে হবে ভুটান। ভুটানের প্রবেশপথ হলো ফুন্টসোলিং। এখানেই মেলে ভুটানের অন-অ্যারাইভাল ভিসা।

ভুটানে ঢোকার পর ফুন্টসোলিংওয়ে থাকা যায়। আবার কেউ চাইলে ‘পারো’ অথবা ‘থিম্পু’ যেতে পারেন। পাশের বাসস্ট্যান্ড থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শেষ বাস ছেড়ে যায়। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে পারো কিংবা থিম্পু যাওয়া যায়। সময় লাগে ছয় ঘণ্টা।

যা যা দেখবেন
প্রথম দিনই থিম্পু থেকে পুনাখা শহরে যাওয়ার পারমিট করিয়ে রাখলে পরে কোনো সময় নষ্ট হবে না। অর্থাৎ ফুন্টসোলিং থেকে শুধু ‘পারো’ অথবা ‘থিম্পু’তে প্রবেশের পারমিশন দেবে। এরপর বাকি স্থানের পারমিশন করে নিতে হবে থিম্পু থেকে। পরের দিন যাত্রা করা যাবে পুনাখার উদ্দেশ্যে। সকাল ১০টায় রওনা দিলে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যাবে। যাওয়ার পথেই দেখা মেলে দুচালা, পুনাখা জং এবং সাসপেনশন ব্রিজের। সারাদিন ঘুরে রাতে আবার থিম্পুতে ফিরে আসাটাই ভালো। পুনাখাতে থাকার মতো তেমন ভালো হোটেল নেই। তৃতীয় দিন পারো দেখতে যাওয়া যায়। চতুর্থ দিনে ঘুরে আসতে পারেন টাইগার নেস্ট/তাকসিন থেকে। ভুটানের ধর্মীয় এবং পর্যটনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো টাইগার নেস্ট। তিন হাজার ফুট হেঁটে উঠতে হয় সেখানে।

কিছু প্রয়োজনীয় টিপস
ভারতীয় ভিসাসহ পাসপোর্টের ফটোকপির কয়েক কপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের দু-তিনটি ফটোকপি, চাকরিজীবী হলে এনওসি (অনাপত্তি পত্র), ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের কপি, স্টুডেন্ট হলে আইডি কার্ডের দু-একটি ফটোকপি সঙ্গে রাখবেন। ভুটানে সরকারি ছুটি অনেক বেশি, তাই সরকারি ছুটির লিস্ট দেখে ভ্রমণ প্ল্যান করাই ভালো।  

ভুটান শতভাগ ধূমপানমুক্ত দেশ। সুতরাং প্রকাশ্যে বা পাবলিক প্লেসে ধুমপান করলে জরিমানা নিশ্চিত। আর নিজস্ব প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বাংলাদেশ থেকেই নিয়ে গেলেই সবথেকে ভালো হয়। এছাড়া সেখানে রাত ৯টার মধ্যেই সব দোকান ও রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। এই দিকটাও মাথায় রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২৪
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।