ঢাকা: রাজধানীতে নানা আয়োজনে শুরু হয়েছে ৪ দিনব্যাপী আর্ন্তজাতিক পর্যটন মেলা।
শুক্রবার (০৮ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে এ মেলার উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
ভ্রমণ বিষয়ক পাক্ষিক ‘দ্য বাংলাদেশ মনিটর’ ১৩তম বারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে।
মেলায় পার্টনার হিসেবে সহায়তা করছে- বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাশেদ খান মেনন বলেন, পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশ হাজার বছর ধরে আকর্ষণের স্থান। ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাংদের মতো বিশ্বখ্যাত পর্যটকরা এখানে এসেছেন। মাঝে ইতিহাসের পরিক্রমায় ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের দেশে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ আবার অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বাবাসীর আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।
‘অনেক দেশের নাম-ইতিহাস আমরা জানি না, সেসব দেশের পর্যটকরাও এখানে আসছেন। আমাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে প্রথমে নিজে এসে, পরে পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে দলবেধে এদেশে ভ্রমণে আসছেন। ’
মন্ত্রী বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান মাত্র ২ শতাংশেরও কম। আমরা ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছি। কিন্তু বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম। অর্থ মন্ত্রণালয় ক্যাম্পেইনের টাকাটা পর্যন্ত ছাড় করেনি। তারা হয়তো বোঝেও না, অর্থ ছাড়া ক্যাম্পেইন হয় না।
তিনি বলেন, সীমিত সম্পদের মধ্যে আমরা কক্সবাজারকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যটনের পরিকল্পনা সাজিয়েছি। সাবরাংয়ে বিদেশিদের জন্য বিশেষায়িত জোন করা হচ্ছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ শুরু হচ্ছে।
‘ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইনের কাজ এ বছরই শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক চারলেন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। আমাদের সেকেন্ড গন্তব্য সুন্দরবন। সেখানে ইকোট্যুরিজমের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় গন্তব্য হিসেবে পাহাড়কে বেছে নেওয়া হয়েছে’।
রাশেদ খান মেনন বলেন, বেসরকারি খাতে সিলেট অঞ্চলে বিশ্বমানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট গড়ে উঠছে। সরকারের কাজ কেবল তাদের যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত করা।
তিনি জানান, বুদ্ধিস্ট সার্কিট দেশের পর্যটনে সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশে ৫৫০টির মতো বুদ্ধিস্ট পুরাকীর্তি ও স্থাপনা রয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে আমরা ১০ লাখ ইনবাউন্ড ট্যুরিস্টের আশা করছি।
আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও দ্য বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন খাত বিকাশে সহায়তার লক্ষ্যে ১৩ বছর আগে আমরা ঢাকা ট্রাভেল মার্ট আয়োজনের উদ্যোগ নেই।
‘বিগত বছরগুলোতে পর্যটন ক্ষেত্রে বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। এতে আমরা কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরেছি বলে মনে করি’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিপণন মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আহসান হোসেন কাজী, ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক দলজিৎ সিং, অথরিটি অব থাইল্যান্ডের পরিচালক ইসরা স্টাপানাসেথ, নেপাল পর্যটন করপোরেশন ও মায়ানমার পর্যটনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজকরা জানান, মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার (০৯ এপ্রিল) সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশে মাইস ট্যুরিজম’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মতলুব আহমেদ।
ট্যুরিজম মালয়েশিয়া এবং ট্যুরিজম অথরিটি অব থাইল্যান্ড মেলা উপলক্ষে বিটুবি মিটিংসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।
মেলায় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৫০টির বেশি সংস্থা অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় পর্যটন সংস্থা, বিমান সংস্থা, ট্রাভেল ও ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও রিসোর্ট, পর্যটন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য।
মেলা চলাকালে দর্শনার্থীদের জন্য হ্রাসকৃত মূল্যে এয়ার টিকিট, আকর্ষণীয় ট্যুর প্যাকেজসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা এবং শনি থেকে সোমবার (১১ এপ্রিল) পর্যন্ত মেলা সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে। মেলায় প্রবেশমূল্য রাখা হয়েছে ২৫ টাকা।
প্রবেশ কুপনের ওপর মেলার শেষদিন (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
র্যাফল ড্র বিজয়ীদের জন্য থাকছে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যের এয়ার টিকিট, ট্যুর প্যাকেজ, তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন, লাঞ্চ ও ডিনার কুপনসহ নানা আকর্ষণীয় পুরস্কার।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৬
আরএম/কেআরএম/এমএ