সেন্টমার্টিন থেকে: ‘সূয্যি মামা জাগার আগে উঠবো আমি জেগে’- সেন্টমার্টিনে সূর্যোদয় দেখার অভিপ্রায়ে চরণটি প্রথমবার ‘সত্যিকারের সত্যি’ হলো। আগেই জানা ছিলো সূর্য চোখ মেলবে ভোর ৫টা ৩৯ মিনিটে।
কটেজ থেকে রাস্তা ধরে মিনিট আটেক হাঁটলেই পূর্ব পাশের বিচ। আকাশ কিছুটা গোমড়ামুখো। তাই হতাশ লাগছিলো। তবে ভোরের নির্মল বাতাস ভুলিয়ে দিলো তা।
কর্মজীবী মানুষজনের আনাগানোও শুরু ততক্ষণে। তাদের দিনটি অনেক বড়। কেউ রাতে পাতা সুতায় ধরা পড়া মাছ নিয়ে ফিরছেন বিচ ধরে, কেউ আলকাতরা লাগাচ্ছেন তার রুটি রোজগারের নৌকা-ট্রলারে।
সব হলো, কিন্তু সূয্যিমামা কই! অরুণ আলোর আভা মেঘের আড়ে। চোখ পুবাকাশে। সাগরে জোয়ার আসছে। বুকে ভাসছে সাম্পানগুলো। দুলছে দোদুল দুল।
আকাশে চোখ রাখতে রাখতেই হঠাৎ মেঘের বুক থেকে উঁকি রবির আলোর। ‘সূয্যিমামা জাগার আগে উঠবো আমি জেগে’- ‘সত্যিকারের সত্যি’ হলো। মানে সূর্যোদল দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে উঠে তার আগেই জাগা। তবে অপেক্ষায় রাখলো কাঙ্ক্ষিত সময়ের ২৫ মিনিট বেশি।
‘আজি এ প্রভাতে রবির কর, কেমনে পশিল প্রাণের পর/কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাত পাখির গান/না জানি কেন রে এতদিন পর জাগিয়া উঠিল প্রাণ…’ কবিগুরু চরণগুলো লিখেছেন কোনো প্রভাতে বারান্দায় বসে থাকা অবস্থায়। তার মুখে এসে পড়া দিনের প্রথম সূর্যের আলো পৃথিবীটাকে নতুন করে দিয়েছিলো রবীন্দ্রনাথকে।
অন্যরকম অনুভূতি সত্যি, যদি অনুভব করা যায়। ঘোলা মেঘের আড় থেকে একটুখানি উঁকি নতুন আবিষ্কারের আনন্দে মাতায়, চেতনায় জাগায় ভৈরবী সুর।
মেঘ সরে একটু একটু করে সূর্য তার কাঞ্চন রঙের আভায় আকাশ, পানি, বাতাসকেও যেন রাঙাতে শুরু করে।
ঢেউয়ের গর্জন, বাতাসের শো শো শব্দ আর নির্মল বিশুদ্ধ প্রকৃতিতে মোহময় তখন মন-প্রাণ। হঠাৎ দূর থেকে দেখা গেলো ১০-১২ বছরের একটি শিশু দড়িতে মাছ ঝুলিয়ে এগিয়ে আসছে বিচ ধরে। কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করে জানা গেলো মাছগুলো ধরেছে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে। একটি লম্বা আকৃতির কিছুটা বড় মাছ দেখে জানতে চাইলাম কি মাছ।
বললো অরুণ মাছ।
অরুণ শব্দের অর্থ সে জানে না, কেন অরুণ মাছ বলা হয় জানে না তা-ও। তবে ওই মুহূর্তে বিষয়টি প্রকৃতির কাছে যে কীভাবে অর্থবহ হযে উঠলো! অরুণ আলোয় অরুণ মাছ!
প্রকৃতিও কখনো সখনো মানুষের সঙ্গে কথা বলে, ভাবায়, তাড়িত করে। বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ ইউনিয়ন সেন্টমার্টিনে সূর্যোদয় সেটা যেন মনে করিয়ে দিলো আরেকবার।
একটু সময় গড়াতেই আরও পাল্টে গেলো প্রকৃতি। মিষ্টি রোদের ঝলক জলে এঁকে দিলো ছবি। সোনালি আভায় ঢেউগুলো হযে উঠলো সোনারঙা। সত্যি স্বর্ণালী ভোর। দূরে নোঙর নৌকাটি তাতে জাগালো নতুন প্রাণ।
আবারও কবির কাছে ফিরে সে সময়ের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলতে হয়, ‘রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরাণ ঢালি’।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৬
এএ
** মরা শামুক হাঁটে ছেঁড়া দ্বীপে!
** তথ্যহীন পর্যটন তথ্য কেন্দ্র!
** ড্যান্সিং বাসে কক্সবাজার টু টেকনাফ
** ডাব-তরমুজেই পকেট ফাঁকা সেন্টমার্টিনে
** নোনা দ্বীপে মিষ্টি পানি
** সেন্টমার্টিন যেভাবে যাবেন
** তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম টিম এখন কক্সবাজারে
** কক্সবাজারে বাংলানিউজের দ্বিতীয় টিম
** বছরজুড়ে দেশ ঘুরে: কক্সবাজারে বাংলানিউজ