ঢাকা: বিভিন্ন দেশের পর্যটনকে উৎসাহিত ও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাজধানীতে চলছে চার দিনব্যাপী ‘ঢাকা ট্রাভেল মার্ট ২০১৬’।
তবে ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার নামে কিছু মালয়েশিয়ান এবং বাংলাদেশি কোম্পানি এখানে চালাচ্ছে টাকা পাচারের জমজমাট সেকেন্ড হোম ব্যবসা।
সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে গত শুক্রবার (০৮ এপ্রিল) থেকে শুরু হয়েছে এই ট্রাভেল মার্ট। মেলায় অন্যতম অাকর্ষণীয় স্টল ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার। তবে সেখানে মালয়েশিয়ার পর্যটনের প্রচারণার বদলে চলছে সেকেন্ড হোম ব্যবসা। মালয়ি সেকেন্ড হোমের এজেন্টরাও চলে এসেছেন ঢাকায়।
বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের বৈধতার বিষয়ে এজেন্টরা জানাচ্ছেন, ‘টাকা পাচার কোনো সমস্যা নয়’।
ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার বড় স্টলটিতে ১০টি টেবিল সাজিয়ে বসেছে বিভিন্ন কোম্পানি। এর মধ্যে পর্যটন নিয়ে রয়েছে শুধুমাত্র ‘ট্যুরিজম মেলাকা’ এবং ‘অ্যাপোলো হলিডে’। এখানে ৪টি মালয়েশিয়ান কোম্পানি সরাসরি এমএমটুএইচ (মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম) ব্যবসায়ী।
মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে অবস্থান করে নিয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)। গত বছরের ০৩ নভেম্বর টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এভাবে দেশের ৬০ শতাংশ অর্থ বিদেশে পাচার হয়।
রোববার (১০ এপ্রিল) সকালে ট্রাভেল মার্টে টিএইচআর ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন সার্ভিসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মালয়েশিয়ার ‘দারো ইন্টারন্যাশনাল (এমএমটুএইচ) এসডিএন বিএইচডি’র মাধ্যমে গ্রাহকদের সেকেন্ড হোম সেবা দেন তারা। তবে বাংলাদেশ থেকে টাকা ট্রান্সফার বৈধ কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানির চেয়ারম্যান জানেন।
মালয়েশিয়ার আইকোনিক লিভিং রিসোর্সেস এসডিএনবিএইচডি’র মার্কেটিং ডাইরেক্টর কেনিক্স এনজি বাংলানিউজকে বলেন, ৫০ বছরের বেশি বয়স হলে সাড়ে ৩ লাখ রিঙ্গিত (৭০ লাখ টাকা) বিনিয়োগ করতে হবে এবং দেড় লাখ রিঙ্গিত (৩০ লাখ টাকা) ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট রাখতে হবে।
৫০ বছরের কমবয়সীদের ৫ লাখ রিঙ্গিত (১ কোটি টাকা) বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যংকে ফিক্সড ডিপোজিট রাখতে হবে তিন লাখ রিঙ্গিত। উভয় ক্ষেত্রেই অবসরকালীন ভাতা অথবা মাসিক বেতন হতে হবে ১০ হাজার রিঙ্গিত।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় টাকা ট্রান্সফারের বিষয়ে এই মালয় নারী ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের দেশে সমস্যা নেই। বাংলাদেশে ব্যাংকে হয়তো সমস্যা। তবে সেটি ব্যবস্থা করা যায়। আপনি আমাকে মেইল করলে বিস্তারিত উত্তর দেবো’।
টাকা পাচারে অাপনারা সহযোগিতা করছেন কি-না? জানতে চাইলে ‘বাংলাদেশ থেকে বেশ কিছু গ্রাহক তাদের কোম্পানির অধীনে সেকেন্ড হোমের সুবিধা নিয়েছেন’ বলে জানান কেনিক্স এনজি।
বেস্ট হোম (এমএমটুএইচ) এসডিএন.বিএইচডি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিম কক সাই নিজেই এসেছেন সেকেন্ড হোমের গ্রাহক ধরতে। বাংলাদেশে তাদের সরাসরি কোনো এজেন্ট নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
এক্সোডাস এমএমটুএইচ এসডিএন.বিএইচডি’র বিজনেস ডাইরেক্টর ডানিয়েল ইয়াপ এসেছেন মালয়েশিয়া থেকে।
ট্যুরিজম মেলাকার ইভেন্ট ম্যানেজার মোহাম্মদ ইসা বিন আইরিন বাংলানিউজকে বলেন, ট্যুরিজম মালয়েশিয়ার এই স্টলে ৪টি কোম্পানি পৃথকভাবে সেকেন্ড হোম অফার করছেন।
ট্যুরিজম মালয়েশিয়া ছাড়াও মেলায় সেকেন্ড হোম ব্যবসা করছেন সিএম ইন্টারন্যাশনাল ইমিগ্রেশন সার্ভিস। কোম্পানির অ্যাসিসট্যান্ট পাবলিক রিলেশন ম্যানেজার গিয়াসউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, টাকা পাচারের বিষয়টি গ্রাহকের নিজস্ব ব্যপার। আমরা শুধু কাগজপত্র তৈরি করে দেই।
মেলায় অন্য যে ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন ট্যুরের প্যাকেজ দিচ্ছে, তারা সকলেই এই সেকেন্ড হোম ব্যবসায়ীদের ওপর বিরক্ত। কয়েকজন ট্যুর অপারেটর বাংলানিউজকে বলেন, ‘পর্যটন অার সেকেন্ড হোম ব্যবসাতো এক নয়। দালালরা এসে ট্রাভেল মার্টের বদনাম করছেন। এ দালালদের মাধ্যমে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে’।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘন্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৬
এমএন/এএসআর