শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া থেকে: মুন্নি পুরোপুরি একা হয়ে পড়েছে। সঙ্গীহীন সে এখন ঘুরে বেড়ায় এদিক-ওদিক।
কেউ তার দিকে ভালোবাসার পরশ নিয়ে এগিয়ে এলে সে নীরবে তা উপভোগ করে। আর কেউ বিরক্ত করলে সে তার স্বভাবসুলভ আচরণ দেখিয়ে এর প্রতিবাদ করে যায়। কামড়ানোর ভয় দেখিয়ে নিজেকে আত্মরক্ষা করে।
দলগতভাবে যে একসময় প্রকৃতির ডালে ডালে ঘুরে বেড়াতো। আজ তার ঠাঁই হয়েছে মাটির পথে পথে। মানুষের একেবারে সংস্পর্শে এসে সে এখন বিভিন্ন দালানকোঠার কাছাকাছি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। কখনোই আগের মতো করে দলের সঙ্গে তাকে ঘুরতে দেখা যায় না।
মুন্নির কোলে একটি সন্তানও রয়েছে। ছোট্ট সেই সন্তানটিকে বুকে জড়িয়ে পরম মাতৃস্নেহে তার বিচরণ। ‘চুকু-চুক’ করে শিশুটি তার মায়ের দুগ্ধ পান করতে থাকে।
১৪ জুলাই দুপুরে লাউয়াছড়া রেস্ট হাউজের বারান্দার ভেতর সন্তানসহ মুন্নিকে দেখে সবাইকে ভীষণ অবাক হতে হলো। বুনো বাদরের আক্রমণে প্রথম প্রবেশে মনে হলো, ধাক্কা বুঝি, কিন্তু না!
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লাউয়াছড়ার বিট অফিসার রেজাউল করিম সেই ধারণা ভুল বললেন। ‘জানেন মুন্নি আর এখন বন্য নয়। সে এখন মানুষের সংস্পর্শই পছন্দ করে। ’ এই বলতে বলতে তিনি মুন্নির মাথায় মমতার পরশ বোলালেন। মুন্নিও কিছু বললো না।
কী কারণে মুন্নি তার দল থেকে বেরিয়ে একা হলো? এই প্রশ্নের উত্তরে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ অফিসার সাহাব আলী বাংলানিউজকে বলেন, মুন্নি আসলে বন্যই ছিল। লাউয়াছড়ায় আগত পর্যটকদের দেখে সে মানুষের কাছে আসার চেষ্টা করলো। মানুষও তাকে আদর করে বিভিন্ন খাবার, ফল-মূল দিতে শুরু করলো।
এক পর্যায়ে সে খাবারও তাদের হাত থেকে নিয়ে খেতে শুরু করে। এভাবেই সে খাবারের লোভে মানুষের সংস্পর্শে চলে এলো।
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য বানর থেকে মুন্নি অপেক্ষাকৃত সাহসী বলেই লাউয়াছড়া রেস্ট হাউজ, কো-ম্যানেজমেন্ট অফিস, দোকান প্রভৃতিতে মানুষের কাছাকাছি থাকে। বিভিন্ন রকম খাবার পেয়ে নিয়মিত ঘুরে বেড়াতে শুরু করলো মুন্নি। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার হলো, সে আর তার দলে ফিরে যেতে পারলো না। দলের কেউ তাকে আর আগের মতো করে সঙ্গে নেয় না। দেখলেই ওকে মারধর করে। আমরা তাকে ভালোবেসে বিভিন্ন খাবার-দাবার দেই এবং যত্নআত্তি করি। ’
মুন্নি ‘কোটা বানর’ প্রজাতির শাখামৃগ। এর ইংরেজি নাম Rhesus Macaque। তিন-চার মাস ধরে এভাবেই মুন্নি বেঁচে রয়েছে বলে জানান এই ফরেস্ট অফিসার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
বিবিবি/টিআই