খাগড়াছড়ি থেকে: শনিবার (২০ আগস্ট) রাত আটটায় ছিল পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক। ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকের সময়ে পনের বার যাওয়া-আসা করে বিদ্যুৎ।
খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাব সভাপতি জীতেন বড়ুয়া রসিকতা করে বলে উঠলেন, রাতে জঙ্গল ঠেলে বিদ্যুত আসতে পারে না। রাত গভীর হোক বুঝতে পারবেন আমরা কেমন আছি।
এরপর রাত সাড়ে ৯টায় ছিল জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামানের বাংলোতে সৌজন্য সাক্ষাত। তখন পরিস্থিতি যেনো একটু বেশিই খারাপ মনে হল। জেলার এ কর্তার অফিস যে টিলার পাদদেশে সেই টিলার চূড়ায় বাসভবন। মাঝে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
যাওয়ার পথে পড়ে নতুনকুঁড়ি ক্যান্টমেন্ট স্কুল। বাসায় জেনারেটর দিয়ে বাতি জ্বললেও পথটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। বৈঠকের সময় বারবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছিল আর কেউ একজন গিয়ে চালু করে দিচ্ছিলেন।
কিন্তু একবার জেনারেটর বিগড়ে গেল। স্টার্ট নিতে চাচ্ছিল না। তখন জেলা প্রশাসক খানিকটা ক্ষোভ ঝারলেন বিদ্যুৎ বিভাগের উপর। বললেন, ওরা নিজেদের কাজটা সঠিকভাবে করছে না। হাটহাজারী থেকে যে লাইনে মাধ্যমে বিদ্যুৎ এসেছে, তার সংস্কার কাজ করছে। জুনের মধ্যে করার কথা থাকলেও ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে জানাতে পারছে না।
তিনি জানালেন, দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকে। আর যখন বিদ্যুৎ থাকে তখনও ঠিকমতো ভোল্টেজ পাওয়া যায় না। বেশিরভাগ সময়েই চলে জেনারেটর দিয়ে। তার বাসভবন ও অফিসে ব্যবহৃত জেনারেটরের তেল কিনতে ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ হয় মাসে। আর বিদ্যুৎ বিল আসে মাত্র ৯’শ থেকে এক হাজার টাকা। তাহলে বুঝতেই পারছেন কতক্ষণ সময় বিদ্যুৎ পাই-যোগ করলেন জেলা প্রশাসক!
কথা বলার সময় ফ্যানের দিকে দেখিয়ে বলেন, দেখেন কতো আস্তে ঘুরছে। মনে হচ্ছে সবচেয়ে সুইচ কমিয়ে রাখা হচ্ছে। কিন্তু এটাই হচ্ছে ফুল ভলিয়ম। তবে ক্ষণে ক্ষণে ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় চলা গাড়ির মতো গতি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। আবার একাই দমে যাচ্ছিল।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে লাইনটির তার পরিবর্তনের কাজ এগুচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।
যে লাইনটির আশায় আশান্বিত খাগড়াছড়িবাসী সেই লাইনটি সংস্কার হলে কতটুকু স্বস্তিদায়ক হবে তা নিয়ে খোদ বিদ্যুতের লোকজনও সংশয়ে রয়েছেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারি থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত ১০৬ কিলোমিটার, এরপর রয়েছে আর ১০১ কিলোমিটার যা দিঘীনালা হয়ে মহালছড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত।
৩৩ কিলোভোল্ট (কেভি) এ লাইনটিতে লোড দিলে ১৫ কেভি পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের খাগড়াছড়ি ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলাউদ্দিন সোহাগ।
তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, স্বাভাবিক ভাবে ৬ মেগাওয়াট পর্যন্ত সঞ্চালন করার কথা। কিন্তু চাহিদার কারণে ১৫ মেগাওয়ার্ট পর্যন্ত লোড দেওয়া হয়। যে কারণে ত্রিশ বছরের পুরনো এ লাইনটি যখন তখন ট্রিপ করছে।
পুরনো তার পরিবর্তন করে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন নতুন তার লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে। এ জন্য আরও ৬ কার্যদিবস পুরোপুরি বন্ধ রাখতে হবে বিদ্যুৎ সরবরাহ। লাইন নির্মাণ শেষ হলে ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন করবে।
এ অঞ্চলে ঠিক কী পরিমাণ চাহিদা রয়েছে সেই তথ্য নেই খাগড়াছড়ি বিদ্যুৎ অফিসের কাছে। সে কারণে লাইন নির্মাণ হলেই লোডশেডিং মুক্ত হবে এ কথা বলতে পারছে না পিডিবি। একটি সূত্র দাবি করেছে, প্রায় ৩০ মেগাওয়াটের মতো চাহিদা রয়েছে। সে কারণে লাইন নির্মাণ শেষ হলেও এক তৃতীয়াংশ লোডশেডিং থেকেই যাবে। তবে তখন লো-ভোল্টের কারণে ভুগতে হবে না গ্রাহকদের।
সুখের খবর আছে আরও দেরিতে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ চন্দ্রঘোনা থেকে রাঙ্গামাটি পর্যন্ত হাইভোল্ট গ্রিড স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০১৭ সালে।
এ প্রকল্প শেষ হলে একদিকে যেমন গ্রাহকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। অন্যদিকে সিস্টেম লসের গ্যাড়াকল থেকে মুক্তি পাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত সিস্টেম লস হচ্ছে লাইনটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
এসআই/এসএইচ
**খাগড়াছড়িতে বিদ্যুৎ যায় না আসে-১