ঢাকা: প্রকাণ্ড পুকুরে যেনো পুরো বাড়িটার প্রতিচ্ছিবি দেখা যায়। যে পুকুরের ঘাট, সবুজ জল, পাশের মন্দির, নজরুল আর প্রমীলা দেবীর প্রেমে গল্প বলে।
যে বাড়ি কবিকে টেনে নিয়ে গেছে বারবার! যদিও কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে সেই জৌলুস। দেয়ালের ইট ক্ষয়ে ফোকলা বুড়োর হা করা মুখের আকার নিয়েছে। অবাধ্য সবুজ ঘাস ঢেকে দিয়েছে অনেকটা।
জনশ্রুতি রয়েছে, এই জমিদার বাড়ির অন্দরমহলের দিঘিতে কিশোরী প্রমীলাকে স্নান করতে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন নজরুল। আরও শোনা যায়, এ ঘটনা নিয়েই নজরুল লিখেছিলেন ‘তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়-সে কি মোর অপরাধ’।
জমিদার কিরণ শঙ্কর রায়ের আমন্ত্রণে একবার নজরুল তার অতিথি হয়ে এসেছিলেন। সে সময়ই নজরুল এবং প্রমীলার দেখা হয়েছিলো।
কিরণ শঙ্কর প্রতিবেশী বসন্ত কুমারের মেয়ে দুলিকে (প্রমীলা) ভীষণ স্নেহ করতেন। নজরুল বেড়াতে এলে প্রতি রাতেই আসর বসতো গানে, আর সেখানে একমাত্র গায়ক হতেন নজরুল। দুলির দায়িত্ব ছিলো গানের ফাঁকে ফাঁকে নজরুলের হাতে পান তুলে দেওয়া।
এ-ও শোনা যায়, প্রমীলার বাবা বসন্ত কুমারের ভাতিজা বীরেন কুমারের সঙ্গে কবির বন্ধুত্ব হয়েছিলো, সেই সূত্র ধরে প্রমীলার সঙ্গে প্রেম-বিয়ে। প্রমীলা নজরুলকে ‘কবিদা’ বলে ডাকতেন। পরে ১৯২৪ সালের ২৫ এপ্রিল তাদের বিয়ে হয়।
ইতিহাসবিদদের মতে, ষোলশো শতকে শেষ দিকে পঞ্চনন্দ সেন নামে এক জমিদার এই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। দুই তরফের সামনে বর্গাকৃতির অট্টালিকার মাঝখানে রয়েছে নাটমন্দির।
পূর্ব দিকের বাড়িটি ছিলো জমিদারদের অন্দর মহল। অন্দর মহলের সামনে দুটি বাঁধানো ঘাট, এছাড়া বাড়ির চারদিকে রয়েছে চারটি মঠ।
এসব কিংবদন্তী ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছে যমুনা তীরবর্তী সবুজ-শ্যামল গাছপালায় ঢাকা গ্রামটিকে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে তেঁওতা জমিদার বাড়ি যেতে প্রথমে ৯০ কিলোমিটার দূরে আরিচা। বাসে যেতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। গাবতলী থেকে যাত্রীসেবা, বিআরটিসি, পদ্মা লাইনসহ অন্যান্য বাসে ভাড়া নেবে ৮০-১০০ টাকা। আরিচা ঘাট থেকে রিকশায় ২৫-৩০ টাকা ভাড়া নেবে তেঁওতা জমিদার বাড়ি যেতে। সড়ক যোগাযোগ ভালো হওয়ায় মাইক্রোবাস ভাড়া করেও যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে ভাড়া নেবে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। রাতে চাইলে আরিচা ঘাটে সরকারি ডাকবাংলো বা ব্যক্তি মালিকানাধীন হোটেলে থাকা যাবে। খরচ হবে দেড়শ’ থেকে ৬শ’ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ০০২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৬
এটি