শুভলং ঝরনা (রাঙ্গামাটি ঘুরে): দেড় হাজার টাকা নৌযান ভাড়া। আসা-যাওয়া মিলে আড়াই ঘণ্টা ব্যয়।
শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিন পরিদর্শন ও পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে এমন হতাশার চিত্র উঠে আসে।
কুষ্টিয়ার মেহেরপুর থেকে শুভলং ঝরনা দেখতে আসা শান্তি বিশ্বাসের সঙ্গে কথা হয় 'স্বাগতম বরকল উপজেলা' লেখা পাহাড়ে। বিশাল ইঞ্জিন চালিত নৌযানে তারা জনা পঞ্চাশেক পর্যটক এসেছিলেন শুভলং ঝরনা দেখতে।
শান্তি বিশ্বাস বলেন, ক্ষীণ ধারায় উপর থেকে পড়ছে পানি। যতটা সৌন্দর্যের কথা শুনেছিলাম ততোটা আর অবশিষ্ট নেই। ঝর্নার শীতল পানি ছুঁয়ে যে একটু প্রশান্তি লাভ করবো তাও হলো না। তারপরও দীর্ঘদিনের স্বপ্ন তো পূরণ হলো।
রাউজান থেকে আসা পর্যটক রেজাউল করিম বললেন, যখন টিকিট কাটার বালাই ছিল না তখন একবার এসেছিলাম। সরাসরি ঝরনার কাছে নৌকা ভিড়ত। এখন ১৫ টাকা টিকিট হয়েছে বটে, কিন্তু পর্যটকদের সঙ্গে ঝরনার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। ন্যাচারাল সৌন্দর্য নষ্ট করা হয়েছে ঝরনার মুখে ক্যান্টিন ও টিকিট কাউন্টার বসিয়ে।
বাবা-মার সঙ্গে দুর্গাপূজা-আশুরা-প্রবারণার স্কুল ছুটিতে শুভলং এসেছেন কলেজছাত্রী পূর্ণা বড়ুয়া। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, জং ধরা লোহার পাইপ, পানির কলের চিহ্ন বলছে এখানে দুটি বেসিন ছিল। এখন তা স্মৃতি। যে দুটি টয়লেট আছে সেগুলোর কাচ ভাঙা, কমেড ভাঙা, পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। নারীবান্ধব তো নয়ই, পুরুষদের জন্যও অস্বস্তিকর।
তিনি বলেন, এখানকার সিঁড়ি নোংরা। কাদা থিক থিক করছে। আছাড় খেয়ে পড়তে চেয়েছিলাম। ছেঁড়া স্যান্ডেল, পানির প্লাস্টিকের বোতল, চিপস, কলার খোসা ছড়িয়ে রয়েছে। কচুরিপানা জমেছে নৌকা আসার পথে। সব মিলে ভালো একটি সেলফি তুলবো সেই সুযোগও খুব বেশি নেই।
ক্যান্টিনের কর্মচারী প্রিয় চাকমা বাংলানিউজকে জানান, এখানে পর্যটকদের জন্যে সিলিন্ডার গ্যাসে তৈরি গরম চা ১০ টাকা, কফি ৩০ টাকা, গাছপাকা বড় আকারের বাংলা কলা হালি (৪টি) ২০-৩০ টাকা, তাজা কমলা হালি ৬০ টাকা, স্থানীয় লাল আখ প্রতিটি ৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসনের অধীন 'শিলার ডাক সুবলং ঝর্ণা পর্যটন কেন্দ্র'টি ইজারা নিয়েছেন নিরঞ্জয় চাকমা জয়। এ বছর তার ডাক ছিল সাড়ে চার লাখ টাকা।
বিখ্যাত ঝরনাটি তাকেও হতাশ করছে। বললেন, যখন ঝরনার যৌবন ছিল তখন শত শত পর্যটকের কোলাহলে মুখর থাকত। ২০১৩-১৪ সালে পেট্রল বোমার সময় পর্যটক আসা বলতে গেলে বন্ধই ছিল। লোকসান দিয়েছি। এখনো দিচ্ছি। ছুটির দিন কিছু পর্যটক আসেন। কোনো দিন আবার কেউ আসেনই না।
পর্যটকদের হতাশা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে একটি ঝুলন্ত সেতু হওয়ার কথা ছিল। হয়নি। যদি পাঁচ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হতো তবে আমি নিজ উদ্যোগে হলেও আকর্ষণীয় কিছু করতাম।
টিকিটের দাম বেশি এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৪ সালে ইজারা ডাক ছিল ৪০ হাজার, টিকেট ২ টাকা। এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১৫ টাকা করা হয়েছে।
ক্যান্টিনের কর্মচারী প্রিয় চাকমা বাংলানিউজকে জানান, এখানে পর্যটকদের জন্যে সিলিন্ডার গ্যাসে তৈরি গরম চা ১০ টাকা, কফি ৩০ টাকা, গাছপাকা বড় আকারের বাংলা কলা হালি (৪টি) ২০-৩০ টাকা, তাজা কমলা হালি ৬০ টাকা। এছাড়া মিনারেল ওয়াটারের বোতলের গায়ে লেখা দামের চেয়ে ৫-১০ টাকা বেশি নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১১২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬,
এআর/বিএস