নীলাচল (বান্দরবান) থেকে: বান্দরবানের স্বর্গভূমি নীলাচলে ওঠার আবেশে চোখ যেন বুজে আসছিল। ঢেউ খেলানো পাহাড়, পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে পাহাড়, সেই পাহাড়ে ঘন সবুজ অরণ্যের ফাঁকে ফাঁকে বসত-বাড়ি-ভবন দেখে অভিভূত হওয়ার ঘোর কাটছিল না।
নীলাচলের চূড়া থেকেই চারদিকে ঘুরে ঘুরে চলছিল ক্যামেরার ক্লিকবাজি। এরমধ্যেই ঠিক উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে নীলাচল ও শহরের মূল প্রাণকেন্দ্রের মাঝামাঝি জায়গায় নজর গেল।
ওমা? পাহাড়ের গায়ে যে খণ্ড খণ্ড ছায়া, খণ্ড খণ্ড আলো! এ কী? খানিক দূরে যে সূর্যের আলো স্পটলাইটের মতো মেঘ ফুঁড়ে আছড়ে পড়েছে ঘন অরণ্যের ঢেউ খেলানো পাহাড়ের গায়ে!
চোখ যেতে থাকলো দূর-দূরান্তের পাহাড়েও। সেখানেও যেন চলছে এমন রোদ-মেঘ-আলো-ছায়ার খেলা! মনে হচ্ছিল যেন, সূর্যকে ঢেকে রাখতে মেঘ যে চাদর তৈরি করেছিল, তা নকশা মতো ছিদ্র করে বের হয়ে আসছে আলো। হৈ-হল্লা করে শুরু হলো এমন অভূতপূর্ব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করার পর্ব।
এরমধ্যে নজর-দূরের শহর থেকে ভেসে আসতে থাকলো শোঁ শোঁ শব্দ! এ কি বাতাসের শব্দ নাকি অন্য কিছু তা নিয়ে ধন্দে থাকতে হলো কিছুক্ষণ। তবে খানিকবাদেই বোঝা গেল, নীলাচল ঘেঁষে এমন আলো-ছায়ার খেলা চললেও বান্দরবান জেলা শহরকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে বৃষ্টি।
তখন মনে আসছিল কেবল শৈশবে আওড়ানো সেই খনার বচন, ‘রোদ হচ্ছে বৃষ্টি হচ্ছে/খেক শিয়ালের বিয়ে হচ্ছে। ’
এই আলো-ছায়ার লুকোচুরি আর রোদ-বৃষ্টির খেলার মধ্যে হঠাৎ সবার নজর কাড়লো স্পটলাইটের সেই জায়গায়টা! এখানে মনে হলো কয়েকটি রং জড়ো হচ্ছে। বেশি সময় আর অপেক্ষা করতে হলো না।
মেঘ ফুড়ে বের হওয়া সেই আলো থেকে আকার নিতে থাকলো প্রকৃতির সবচেয়ে নয়নাভিরাম ও বিস্ময়কর সৃষ্টি রংধনু। এবার মত্ত সেই রংধনুর ছবি তোলায়। চলতে থাকলো ভিডিও। চোখের সামনে কী বিস্ময়করভাবে আকার নিলো বেগুনী, নীল, আসমানী, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল মিলিয়ে সাত রঙের রংধনু। সেই রংধনুর ওপর আরেক রংধনু।
নীলাচলের মতো পাহাড়-মেঘের রাজ্যে প্রকৃতির এই অপরূপ লীলার দর্শন নির্ঘাত প্রকৃতি-দেবের আশীর্বাদ ছাড়া কী বলা যায় আর!
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৬
এইচএ/এএ/