বগালেক থেকে: গল্পটা একটু আগে থেকেই বলি। বান্দরবান শহর থেকে রুমাবাজারের দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার।
এরইমধ্যে একটি বাঁশবহনকারী খালি ট্রাক দেখ হাত উঁচু করলে নিতে সম্মতি জানালো। কিন্তু নামিয়ে দিলো একটু দূরেই। এবার হাঁটার পালা। রোদে গামছা মুড়িয়ে উঁচু নিচু ভাঙা রাস্তা দিয়ে পৌঁছালাম বাজার। সেখানে গাইড সাদেকের সঙ্গে দেখা। পূরণ করা হলো পুরো টিমের অনুমতি ফরম। আর্মিক্যাম্প থেকে অনুমতি নিয়ে এবার খাওয়ার পালা। জিসান হোটেলে অর্গ্যানিক সব শাক-সবজি মাছ দিয়ে খেয়ে যাত্রা বড়শিপাড়া। সেখান থেকে উঠতে হবে বগালেক যাওয়ার গাড়িতে। দূরত্ব তখনও এক কিলোমিটারের বেশি। রাস্তায় কোনো ইট নেই এটুকুতে। অবস্থা এতোটাই খারাপ হালচাষ করলেও এতো খোড়া হয় না! গাড়ি চলবে কীভাবে। ভেবেছিলাম বড়াশিপাড়া থেকে রাস্তা ভালো। কিন্তু অবস্থা দেখে রীতিমতো কান্না পাওয়ার যোগড়। এই সড়কে গাড়ি চলবে কীভাবে!
চালক কার্তিক স্টিয়ারিং ধরে বসলেন সেনাবাহিনীর অকশন থেকে কেনা শক্তিশালী দুই ইঞ্জিনের ৩৭শ হর্সপাওয়ারের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজারের। এ রাস্তায় যে গাড়ি চালানো সম্ভব, চলে এবং কোনো গাড়ি ওঠে- সেটা এই বিশ্বাস হতো না এই যাত্রায় না থাকলে।
গাড়ি চালাতে চালাতে কার্তিক বলছিলেন, এখন সারাবছরই ট্যুরিস্ট আসে। কিন্তু রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। শুনছি রাস্তা হবে। কিন্তু কবে হবে জানিনা। এখন তো বর্ষার কয়েকমাস কোনোভাবেই গাড়ি চলে না। রাস্তা ঠিক হলে এতো দেশি পর্যটক আসবে যে বগালেক, কেওক্রাডং জায়গাই দিতে পারবে না। এখনই তো হিমশিম খায়।
মুনলাই পাড়া অতিক্রম করতেই গাড়ি থেকে কয়েকবার নেমে ও কয়েকবার ইঞ্জিন ঠাণ্ডা করতে পানি ঢালা লাগলো। এই বুড়ো গাড়ির এতো জোর!
এই চালক গল্প করতে করতে বলেন, ভাই এখন অনেকে তো বলেন নেপাল-ভুটান-দার্জিলিং আর যাবে না। এখানেই আসবে বারবার। জাপানি এক নারী পর্যটক একবার তো কেওক্রাডংয়ে সূর্য ওঠা দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। তিনি আমার গাড়িতে গিয়েছিলেন। বিদেশি লাগবে না, রাস্তা হলে দেশি পর্যটকই জায়গা পাবে না।
১১ মাইল পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা রীতিমতো আতঙ্কে পার হলাম আমরা। চারপাশের সৌন্দর্য ভুলিয়ে রাখতে পারছিলো না ঝাঁকুনি। এখান থেকে স্বৈরাতন পাড়া পর্যন্ত নেমে গেছে খাঁড়া ঢাল। কয়েকটি গ্রুপকে ওঠার সময় বসে পড়তে দেখা গেলো কষ্টে। বলছিলেন, আপর পারছি না ভাই। অন্যসময় কিছু গাড়ি কষ্টে চলে। এখন জঙ্গল বেঁধেছে। শুধু হাঁটার রাস্তাটুকুর অস্তিত্ব বোঝা যায়। যাইহোক স্বৈরতন পাড়ায় নেমে সাদেকের বানানো কমলার জুস পানে যেন উবে গেলো সব ক্লান্তি। পেশীগুলো সবে টান ধরতে শুরু করেছে। শুনলাম এভাবে যেতে হবে আরও ৫ কিলোমিটার। এরই মধ্যে পাহাড়ে গমগমে শব্দ করে নামলো বৃষ্টি। পিচ্ছিল পথেই পা টিপে টিপে ডিভাইস পলিব্যাগে ঢুকিয়ে চলছিলো যাত্রা।
একটু পরেই নামলো সন্ধ্যা। পাহাড়ি জনপদে জ্বলে উঠে আলো। কেরোসিন বাতি নয়, সোলার। পর্যটন এখানে পরিবর্তন করতে শুরু করেছে তাদের জীবনযাত্রা। কমলাপাড়া পৌঁছাতেই আঁধার জেঁকে বসলো। সেখানে দোকানে ঢুঁ মেরে টাটকা মিষ্টি পেয়ারে, কলা খেলাম গোগ্রাসে। আাঁকা বাঁকা দুর্গম রাস্তায় প্রফেশনাল ট্রেকারদের মতো হাঁটার চেষ্টায় বুঝলাম কষ্ট কতো। একটু পরপরই গা ভিজে যায় ঘামে নেয়ে। টান ধরে পেটে।
এবার মূল চ্যালেঞ্জ। অন্ধকারে দৈত্যের মতো দাঁড়িয়ে থাকা খাঁড়া উঁচু পাহাড়টি পেরুলেই কিংবদন্তির বগালেক। অনবরত গাম ঝরাতে ঝরাতে যানে খাদ, বামে পিচ্ছিল আওয়াজ দিতে দিতেই পৌঁছে গেলাম বগায়। রাত তখন সোয়া সাতটা।
** পাহাড়ের ময়না যাচ্ছে পর্যটকের খাঁচায়
** হরেক পদের খাবারে ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’র শুভেচ্ছা
** পাহাড়চূড়ায় চোখের সামনে রংধনুর ’পর রংধনু (ভিডিওসহ)
** ইউরোপ-আমেরিকাকেও পায়ে ঠেলবে রাঙামাটির লংগদু
** ধসে যাচ্ছে রাঙামাটি শহরের পর্যটন
** রাঙামাটিতে বোটভাড়া নিয়ে ঠকবেন না যদি…
** বিকেলটা কাটুক হেরিটেজ পার্কে
** দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তির দেশে
** পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ‘সিস্টেমে’
** বাঁশের ভেতর মুরগি, পদের নাম ব্যাম্বো চিকেন
** পাহাড়ের সবুজ মাল্টায় দেশজুড়ে বিপ্লব
** নীলাচলে ভোরের আলোয় মেঘের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
এএ/এইচএ