বান্দরবান থেকে: বগালেক থেকে কেওক্রাডংয়ের সর্বোচ্চ চূড়ার পথে পা বাড়ানো ট্রাভেলারদের পাহাড়ে পথে পথে বিশ্রাম নিতে হয়। পাহাড়ি পথ বেয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়া শরীর জুড়াতে হয় ছায়ায় বসে বা ঝরনার শীতল জলে।
বগালেক থেকে পাহাড়ি সরু আঁকা-বাঁকা পথে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটার পর মিলবে একটি ঝরনা। স্থানীয় পাহাড়িরা একে চিংড়ি ঝিরি নামে ডাকেন। নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা নেই, তবে ঝরনায় কোনো চিংড়ির দেখা পাইনি।
চিংড়ি ঝরনায় গা ভিজিয়ে খাড়া পাহাড়ি পথ পাড়ি দেওয়ার ক্লান্তি দূর হয়ে যায় প্রায় ৫০-৬০ ফুট উপর থেকে নিচে আছড়ে পড়া ঝরনা শীতল জলে।
চিংড়ি ঝরনা পেরিয়ে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে আরও কয়েকটি খাড়া পাহাড় ডিঙিয়ে গেলে শরীর যখন ভেঙে আসে ঠিক তখনই চোখে পড়বে এক প্রশান্তির ছাউনি। গাছের ছায়ায় ছোট্ট ছাউনিটি দেখে যেকোনো পর্যটকের মনে শান্তির পরশ ছুঁয়ে যায়। কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় ওঠার পথে এটাই শেষ এবং সর্বোচ্চ চূড়ার যাত্রী ছাউনি।
ছাউনিটি লংথংপাড়া এলাকায় পড়েছে। এ ছাউনি পার হয়ে যাওয়ার পরপরই চোখে পড়বে দার্জিলিং পাড়া। ৩-৪ বছর আগে পর্যটকদের যাত্রাবিরতির কথা চিন্তা করে এই ছাউনি তৈরি করা হয়েছিল বলে জানালো আমাদের গাইড ছাদেক। তার কাছেই জানতে পারলাম বৃষ্টির পানিতে ভেঙে যাওয়ার আগে এ পথে চান্দের গাড়ি চলেতা।
ক্রেওক্রাডং থেকে বগালেকের দিকে নেমে আসা অথবা বগালেক থেকে কেওক্রাডং উভয়মুখী অভিযাত্রীরা এই শান্তির যাত্রী ছাউনিতে এসে গা এলিয়ে দেন সবাই। সারি সারি পাহাড়ের উপর দিয়ে বয়ে আসা নির্মল হাওয়া ঘর্মাক্ত গা শুকিয়ে দেয় নিমিষেই। এখানে এসে বিশ্রাম নেওয়ার পাশাপাশি পর্যটকরা পাবেন বিভিন্ন রকম পাহাড়ি টাটকা ফল সুলভ মূল্যেই। আমাদের ক্যাওকারাডংমুখি অভিযাত্রী দলও সেই সুযোগ হাতছাড়া করলো না। হাতের কাছে পাহাড়ি কলা পেয়ে ক্লান্ত শরীরে গপাগপ গিলতে থাকলো। প্রতিটি সুস্বাদু কলা মাত্রা ২ টাকা দরে। কমলা, জাম্বুরা, পেঁপেসহ পাহাড়ি আরও কিছু ফলমূলের ডালা নিয়ে বসে পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করেন স্থানীয় পাহাড়িরা।
মুরং ও কুমি সম্প্রদায়ের লোকজন আশপাশের পাহাড় থেকে এসব ফলমূল সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। যাত্রী ছাউনিটিতে দেখা গেল বিভিন্ন সময় পর্যটকরা এসে তাদের চিহ্ন রেখে গেছেন। টিন-কাঠ-বাঁশের সমন্বয়ে তৈরি এ ছাউনিতে মার্কার কলম দিয়ে তাদের নাম/মেইল ঠিকানা লিখে রেখেছেন। কেউ কেউ আবার নিজের নামের পাশে প্রিয়জনের নামটা জুড়ে দিয়েছেন।
উঁচু ওই লংথংপাড়া থেকে হারমন পাড়া সহজেই চোখে পড়ে। এছাড়া চিম্বুক রেঞ্জের পাহাড়গুলোও দৃশ্যমান। এ ছাউনি থেকে দেখা আশপাশের পাহাড়ের সবুজাভ সৌন্দর্য বাড়তি প্রশান্তি দেবে। এসব পাহাড়ে জুম চাষ হয়। বিশেষ করে পাহাড়ে গা জুড়ে আদা ও হলুদ গাছের কচি কচি পাতা গাছ দেখে মুগ্ধ হবেন সবাই।
জানা গেছে শুকনার সময়ে আবারও এ রোডে গাড়ি চলাচল শুরু হবে। রাস্তা সংস্কার হয়ে গেলে এখানে পর্যটকের আনাগোনা বেড়ে যাবে। পর্যটকরা তখন রুমা থেকে হয়তো কেওক্রারাডং পর্যন্ত গাড়িতেই সরাসরি যেতে পারবেন। তখন আর লংথংপাড়ার যাত্রী ছাউনিতে বিশ্রাম নিতে হবে না!
** আকাশছোঁয়া পাহাড়ি পথে রুমা
** লেকের দু’ধারে প্রকৃতির সঙ্গে রোমাঞ্চ!
** ঝুলন্ত ব্রিজ পার্কের অব্যবস্থাপনায় বিরক্ত পর্যটক
** মেঘ-পাহাড়ের অকৃপণ সৌন্দর্যের আধার খাগড়াছড়ি
** পর্যটকদের কাছে খাগড়াছড়ির ফল-সবজির কদর
**অনাবিল শান্তি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
এসএইচ/জেডএস/এমজেএফ