ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

স্বামী-সন্তানের ক্ষুধা মেটাতে দিনমান ছুটে বেড়ান রেখা

শরীফ সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
স্বামী-সন্তানের ক্ষুধা মেটাতে দিনমান ছুটে বেড়ান রেখা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেউ শখের বসে, কেউ নেশায় পড়ে, আবার কেউ শরীরের ক্লান্তি দূর করতে চুমুক দেন চায়ের কাপে। কিন্তু ক’জন জানেন যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই চায়ের পাতা তৈরি হয় তাদের জীবন তরী কীভাবে চলছে!

জাফলং (সিলেট) বোল্লার ঘাট পিকনিক স্পট থেকে: কেউ শখের বসে, কেউ নেশায় পড়ে, আবার কেউ শরীরের ক্লান্তি দূর করতে চুমুক দেন চায়ের কাপে। কিন্তু ক’জন জানেন যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই চায়ের পাতা তৈরি হয় তাদের জীবন তরী কীভাবে চলছে!

দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির দেশে এসে সাক্ষাৎ পাই এমনই এক আদিবাসী নারী চা শ্রমিকের।

সিলেটের জাফলং বোল্লার ঘাট পিকনিক স্পটে কথা হয় রেখা কর্মী নামে ওই নারীর সঙ্গে।

চা বাগানে কাজ করে ও চা পাতা বিক্রি করে পঙ্গু স্বামী ও তিন সন্তানের মুখে তিন বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দেন রেখা। পরিবারের সদস্যদের ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে দিনমান অক্লান পরিশ্রমক করতে হয় তাকে। দিনের ছয় ঘণ্টা চা বাগানে কাজ করেন তিনি। এরপর আবার পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে ঘুরে চাপাতা বিক্রি করেন রেখা।

রেখার স্বামী ঝন্টু কর্মীর বাড়ি বাঘহাউড়ে। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারিয়েছেন ঝন্টু। অচল হয়ে সারাদিন বাড়িতেই পড়ে থাকেন। রেখা-ঝন্টুর ঘরে তিন সন্তান। বড় ছেলে শুভ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। রেখার সংসারে অভাব-অনটন নিত্য দিনের সঙ্গী। চা বাগানে কাজ করে যা উপার্জন হয় তাতে সংসারের চাকা চলে না। তাই বাকি সময় চা পাতা বিক্রি করেন।

এজন্য রেখার কাছে তার শ্রমঘণ্টার কোনো হিসাব নেই। কখনও বাগানে কাজ করেন, কখনও চা পাতা বিক্রি করেন। আর পঙ্গু স্বামী ও তিন ছেলের পরিচর্যা ও সংসারের ‍অন্যসব কাজ রয়েছেই একই করতে হয় রেখাকে। রাতে অল্প কয়েক ঘণ্টার ঘুম ছাড়া পরিশ্রান্ত শরীরে আরাম মেলে না। চোখের পাতায় রাজ্যের ক্লান্তি ভর করলেও তা বন্ধ করার উপায় নেই তার।

জীবন সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে রেখা জানান, বাগানের কাজ শেষে সেখান থেকেই ১২০ টাকা কেজি দরে চা পাতা (ডাস্ট) কিনে নিয়ে আসেন। পরে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। প্রতি শুক্রবার জাফলং বোল্লার ঘাট পিকনিক স্পটে সেই চা পাতা বিক্রি করেন তিনি।

সপ্তাহের অন্যদিন জাফলং ও রাজানগর বাজারে চা পাত নিয়ে বসেন। কোনোদিন দুই কেজি কোনদিন চার কেজি আবার ভাগ্য ভালো থাকলে ৭-৮ কেজি চা পাতাও বিক্রি হয়। এলাকায় যত বেশি পর্যটক আসে তার বিক্রি তত বেশি হয়। পর্যটক কম হলে বিক্রিও কমে যায় রেখার।

টিকে থাকার লড়াই ছাড়া জীবনের আর কোনো মানে নেই রেখার কাছে। স্বামী-সন্তানদের মুখে তিনবেলা দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে পারলেই তার জীবন সার্থক। মুখের কোণে এক চিলতে হাসি নিয়ে সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেন রেখা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬
এসএস/জিপি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।