সাতক্ষীরা থেকে: বনরক্ষীদের দিয়ে সুন্দরবনের ট্যুরিজম সম্ভব নয়। ট্যুরিজমের জন্য আলাদা বিভাগ থাকা প্রয়োজন।
বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন টাইগার পয়েন্ট গেস্ট হাউসের নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নূরুজ্জামান।
তিনি বলেন, আমার এক বন্ধু এসেছিল সুন্দরবন দেখতে। তার ইচ্ছা ছিল সুন্দরবনের ভেতর থেকে সূর্যদয় উপভোগ করবেন। সে মোতাবেক একদিন ভোর রাতে আমরা নৌকা নিয়ে বুড়িগোয়ালিনী থেকে বনের ভেতর যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বন বিভাগ কোনোভাবেই আমাদের ভেতরে যেতে দিতে রাজি না। তারা জানালেন আগে অনুমতি নিতে হবে বনের মধ্যে যাওয়ার জন্য।
শুরু করলাম অনুমতির জন্য দৌঁড়ঝাপ। কিন্তু তাদের মন গলানো যাচ্ছিল না। তাদের এক জবাব সকাল হোক তারপর আবেদন করে অনুমতি নেবেন। শুধু পায়ে হাত দেওয়া বাকি ছিল। কিন্তু কিছুতেই কাজ হলো না। অফিসারের দেখা মিলল সকাল ৬ টার পর। তারপর পাশ পেলেও আর সুর্যদয় দেখা হয়নি। কারণ ততক্ষণে সূর্য উদয় শেষ।
মোস্তফা নুরুজ্জামান মনে করেন সুন্দরবনের ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্টের জন্য চব্বিশ ঘণ্টা সার্ভিস প্রয়োজন। ঠিক অনলাইনে যেভাবে চব্বিশ ঘণ্টাই খবর পাওয়া যায়। কেউ যদি মনে করে সারারাত নৌকায় বসে চাঁদনীরাত উপভোগ করবেন, সে ব্যবস্থাও রাখতে হবে।
আইন বা অন্য কিছু দিয়ে সম্ভব নয়। প্রয়োজন আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন। সুন্দরবনের উন্নয়নের জন্য একজন কাজ পাগল অফিসার প্রয়োজন। যিনি মনে প্রাণে সুন্দরবনকে লালন এবং ধারণ করবেন।
তিনি মনে করেন, সাতক্ষীরার সুন্দরবন হচ্ছে মিডল অব দ্য সুন্দরবন। এর দু’দিকেই সমান অংশ রয়েছে। একদিকে ভারত অংশে রয়েছে ৩৮ শতাংশ। আবার একই পরিমাণ সু্ন্দরবন বাংলাদেশ অংশেও রয়েছে। এখানে সুন্দরবন বৈচিত্র্যতায় পরিপূর্ণ।
এখানে পাওয়া যায় শত শত প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। এক চিংড়ি মাছই পাওয়া যায় পনের-বিশ ধরনের। খুঁজলে হয়তো দেখা যাবে সংখ্যায় আরও বেশি। সাদা মাছ(চিংড়ি ছাড়া অন্য সব মাছকেই স্থানীয়ভাবে সাদা মাছ বলা হয়) পাওয়া যায় বিশ-পঁচিশ আইটেম।
তিনি মনে করেন, মাছের স্বাদ পরখ করতে হলে সাতক্ষীরা আসতে হবে। এখানে ছাড়া আর কোথাও এত বেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া কঠিন।
এই অঞ্চলে রয়েছে অনেকগুলো ঐতিহ্যবাহী খাবার। এরমধ্যে নারিকেল দুধ দিয়ে চিংড়ি মাছ। বুনো আমড়া দিয়ে ডিমের আইটেমটিও বেশ জনপ্রিয়।
এই জেলায় অনেকগুলো ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। সাতক্ষীরা সুন্দরবনের ভেতরে রয়েছে মাদারতলার নামের একটি বিচ। এই বিচটি খুবই উপভোগ্য। পুরোই বন ও সাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশ। গেলেই মনকে রোমাঞ্চিত করে তুলবে। তিনি মজা করে বলেন, এখানে স্নান করা যায় পুরোপুরি বন্য পরিবেশে, মানে বনের অনেক প্রাণি এখানে এসে পানি পান করে, গোসল সারে।
সাতক্ষীরা ছাড়া আর কোথাও সড়কের ওপর থেকে সুন্দরবনের দেখা পাওয়া যাওয়া কঠিন। অন্য এলাকায় নৌকায় উঠে বন দেখতে যেতে হয়। কিন্তু এখানে সড়কের ওপর থেকেই স্পষ্ট দেখতে পাবেন সুন্দরবনকে। এমনকী হরিণ ও বাঘও দেখা যায় কখনও কখনও।
তিনি বলেন, এখানে এপ্রিল মাসে এলে গাছের নিচে বসেই টাটকা মধু খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও কেউ চাইলে মৌয়ালদের সঙ্গে থেকে বনের ভেতরে গিয়ে একেবারে টাটকা মধুর স্বাদ নিতে পারবেন অনায়াসে।
মোস্তফা নুরুজ্জামান মনে করেন, আগে পর্যটনটা ছিল জ্ঞানের। কিন্তু এখন পর্যটন বদলে গেছে। এখন হয়ে গেছে বিনোদনের। যে কারণে বাঘ দেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া এখানে কেউ আসতে চাইবে না।
তিনি বলেন, সুন্দরবনের ট্যুরিজমের জন্য আলাদা প্রকল্প নিতে হবে। সরকার যদি এখানে এক’শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। তাহলে এখান থেকে এক হাজার কোটি টাকার রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
** ‘অর্জন সামান্য’
** বাগেরহাট ভায়া সুন্দরবন, এখনই সময়
** গ্রাম-সুন্দরবনের সেফগার্ড ভোলা নদী (ভিডিও)
** খেজুর রসের গন্ধে মাতাল!
** কুসংস্কারে ভরা দীঘি সম্ভাবনায় ঠাসা
** বাগেরহাট ডিসির কষ্ট ও বাস্তবতা
** চিত্রায় প্লেনের ছোঁয়া
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৬
এসআই/এসআইএস