পর্যটকরা মোটরবাইক নিয়ে দেখতে যান সেসব লাল কাঁকড়া। কিন্তু সেই মোটরবাইকের চাকার নিচেই পিষ্ট হচ্ছে লাল কাঁকড়ার আবাস।
লাল কাঁকড়া খাওয়া যায় না। তবে সৌন্দর্য রয়েছে তার। আর তাই আকর্ষণীয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক মূল্য না থাকলেও সৌন্দর্য বাড়ানোর কাজে লাগা লাল কাঁকড়া রক্ষায় এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি লাল কাঁকড়াকে গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সমুদ্র সৈকতে আয়োজন করা হয়েছিল ‘মেগা বিচ কার্নিভাল’। গত ১৪-১৬ জানুয়ারির এ আয়োজনকে ঘিরে সাগরকন্যা কুয়াকাটার বুকে নেমেছিল পর্যটকদের ঢল।
কুয়াকাটায় পর্যটকদের জন্য যে কয়েকটি আকর্ষণীয় উপাদান রয়েছে, সেগুলোর একটি লাল কাঁকড়া। ‘লাজুক’ ও সদা সতর্ক প্রকৃতির ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দৌড় পর্যটকদের কাছে প্রিয়।
লাল কাঁকড়া দেখতে হলে কুয়াকাটা থেকে পূর্ব দিকে গঙ্গামতির চর, কাউয়ার চর, সোনার চর বা পশ্চিমে লেবুর চর যেতে হবে।
এদের বৈশিষ্ট্য, এরা শীতকালে রোদ উঠলে গর্ত থেকে বের হয়। দল বেধে থাকে। সৈকতে চিকচিকে সাদা বালির ওপর একসঙ্গে অনেকগুলো লাল কাঁকড়া বের হলে মনে হয় যেন লাল গালিচা। তবে শব্দ পেলে দ্রুতই ঢুকে পড়ে গর্তের মধ্যে।
লাল কাঁকড়া দেখতে কুয়াকাটা থেকে পশ্চিমে নয় কিলোমিটার বা পূর্বে ১৫ কিলোমিটার মোটরবাইকে করে যাচ্ছেন পর্যটকরা। পূর্ব ও পশ্চিমে কিছুদূর বেড়িবাঁধ ধরে এগোলেও একটু দূরে গিয়ে পর্যটকদের নিয়ে সৈকতে নেমে পড়েন ভাড়াটে মোটরচালকরা।
পশ্চিমে লাল কাঁকড়ার আবাস হিসাবে খ্যাত লেবুর চরে গিয়ে দেখা গেছে, একেবারে শেষ মাথায় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ছুটছে লাল কাঁকড়ার খোঁজে। মানুষের উপস্থিতিতে লাল কাঁকড়া দ্রুত গর্তে ঢুকে পড়ে। তাই ছবি তুলতে দৌড়ে বা বাইক নিয়ে কাছাকাছি চলে যান পর্যটকরা। এতে বাইকের চাকায় পিষ্ট হচ্ছে লাল কাঁকড়ার আবাস।
প্রতিদিন অসংখ্য বাইক আসে। তাই লাল কাঁকড়ার ক্ষতিটা বেশি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
লেবুর চরে হাজুরা গ্রামের জেলে আলম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘লাল কাঁকড়া দুপুর ও বিকালে বেশি বের হয়। অনেকেই ছবি তুলতে বাইক নিয়ে দৌড়ান। এতে ভয় পায় কাঁকড়া। আগে অনেক কাঁকড়া ছিল, এখন কমে গেছে’।
‘তবে নির্জন স্থানে এখনও প্রচুর লাল কাঁকড়া দেখা যায়’।
কুয়াকাটা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে বিচ্ছিন্ন ‘ক্র্যাপল্যান্ড’ বা ‘তুফান্যার চর’ নামক স্থানে পর্যটকরা খুব বেশি যান না বলে সেখানে বেশি দেখা যায় লাল কাঁকড়া।
এছাড়াও কুয়াকাটা থেকে নদীপথে ২৫ কিলোমিটার পূর্বে ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সোনার চরে প্রচুর পরিমাণে লাল কাঁকড়ার দেখা মেলে। জেলে ছাড়া সাধারণ মানুষের আনাগোনা নেই সেখানে।
লাল কাঁকড়া পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় উল্লেখ করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুল হোসেন মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, যে সমস্ত প্রাণী ঝুঁকিপূর্ণ, সেগুলোকে নিয়ে গবেষণা ও রক্ষা করা প্রয়োজন।
লাল কাঁকড়া নিয়ে কোনো গবেষণা হচ্ছে না। কুয়াকাটায় মেরিন রিসার্চ ইন্সটিটিউট স্থাপিত হলে এটি নিয়েও গবেষণা হবে বলে জানান ড. কামরুল।
জনমানবহীন স্থানে আকর্ষণীয় লাল কাঁকড়ার সংখ্যা বেশি বলে জানান কলাপাড়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম।
মানুষের উপস্থিতি কাঁকড়াগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে ছিল না। মোটরসাইকেলের চাকায় যেনো সৈকতের আকর্ষণীয় লাল কাঁকড়ার কোনো ক্ষতি না হয়, সে ব্যাপারে সচেতনতা গড়তে উদ্যোগ নেবো’।
‘বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে লাল কাঁকড়া দেখতে মানুষ অনেক টাকা খরচ করে যান। আমরা এই লাল কাঁকড়াকে সংরক্ষণ করতে পারলে আমাদের পর্যটনের জন্যই লাভজনক হবে’।
পাশাপাশি এলোমেলো না গিয়ে মোটরসাইকেলের নির্দিষ্ট পথে বাইক চালানোর পরামর্শ দেন এই মৎস্য কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর
** সৈকতের আকর্ষণ লাল কাঁকড়া