আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিরা পাড়ি জমাচ্ছেন কলকাতা, ভেলোর, চেন্নাই, মুম্বাই প্রভৃতি জায়গায়। চিকিৎসা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিসা, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, হাসপাতাল বুকিং, থাকা, খাওয়াসহ আরও আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো চলে আসে।
এক্ষেত্রে কলকাতা অপেক্ষাকৃত কাছে হওয়ায় বেশিরভাগ মানুষ কলকাতা এলেও, জটিল রোগের চিকিৎসার জন্য ভেলোর বা মুম্বাই যেতে হয়। এই পুরো সময়ে বাংলাদেশিরা যে চিকিৎসাই নিচ্ছে তা নয়, পাশ্ববর্তী পর্যটক আকর্ষণী জায়গাগুলোও ঘুরে দেখছে। অনেকে চিকিৎসার পাশাপাশি ঘোরা ও প্রয়োজনীয় কেনাকাটার জন্য পরিকল্পনা ও সময় হাতে নিয়ে আসছেন।
ভারতে অধিকাংশের কাছে চিকিৎসা সংক্রান্ত যথাযথ তথ্য নেই, কেউ পূর্বে চিকিৎসা নিয়েছেন এমন কারও কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যই ভরসা। অনেক সময় তথ্যের অভাবে নানান হয়রানির মুখেও পড়তে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটিই যায়।
বাংলাদেশে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে তথ্যসেবা দিয়ে থাকলেও মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ এ সম্পর্কে জানে ও সেবা নিতে পারে। অনলাইনের মাধ্যমেও ভারতের হাসপাতালগুলোতে যোগাযোগ করা যায় কিন্তু দেশীয় বাস্তবতায় চল্লিশোর্ধ্বরা এখনও ইন্টারনেটবান্ধব হয়ে ওঠেনি।
বিষয়গুলো তথা মেডিকেল ট্যুরিজম নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশের ভারতীয় হাইকমিশন। আরও কীভাবে প্রক্রিয়া ও সেবাগুলো সহজতর করা যায় এ নিয়ে তারা গুরুত্বের সঙ্গে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অনেক আগেই মেডিকেল ভিসার ক্ষেত্রে ই-টোকেন ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলোতে মেডিকেল ভিসা আবেদনকারীদের জন্য আলাদা লাইন ও কম সময়ে ভিসা পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। জানা যায়, আরও নতুন নতুন সুবিধা যোগ হচ্ছে মেডিকেল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে।
এ নিয়ে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনের এক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, হাইকমিশন খুব শিগগিরই মেডিকেল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে নতুন কিছু পদক্ষেপ উদ্বোধন করতে যাচ্ছে।
হাইকমিশন চায়, ভারতে মেডিকেল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সব তথ্য সহজলভ্য ও প্রক্রিয়া সহজতর করে তুলতে। এ নিয়ে খুব দ্রুতই সুখবর আসছে বলে সূত্র জানায়।
এখানে বলে রাখা ভালো, অনেকের কাছে মেডিকেল ট্যুরিজম শব্দ দুটি একটু অপরিচিত ঠেকতে পারে। সহজে বললে, ভিসা প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ভারতে চিকিৎসা নিয়ে আবার নিজ দেশে ফিরে আসা পর্যন্ত এর মধ্যে যা যা পড়বে- এর সবই মেডিকেল ট্যুরিজমের আওতায়। এর মধ্যে বাস-ট্রেন-প্লেনের টিকিট কাটা, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্ট মেন্ট, হাসপাতালে বুকিং, ভিসার জন্য সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংগ্রহ, পছন্দের জায়গায় গিয়ে থাকা-খাওয়া প্রভৃতি।
সূত্র আরও জানায়, প্রথমসারির মেডিকেল ইনস্টিটিউটগুলোর খবরাখবর, বুকিং, চিকিৎসা ব্যয় প্রভৃতি নিয়ে কাজ চলছে। ভারত চাচ্ছে, বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী বাংলাদেশের জনগণ আরও কম সময়, কম খরচে উন্নত সেবা পাক।
সদ্য ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসা এক রোগীর স্বজন বলেন, একসময় ট্যুরিস্ট ভিসা নিতে চার হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হতো। যাওয়া-আসার টিকিট কিনলে ই-টোকেন ছাড়াই এখন ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে ই-টোকেন ছাড়াই আবেদন জমা নেওয়া হয়। মেডিকেল ভিসাও এর মধ্যে একটি।
আমরা চাই, অন্যান্য ভিসা যেভাবে দিনদিন আরও সহজতর হয়েছে তেমনি মেডিকেল ভিসাও আরও সহজতর করার ব্যবস্থা নেওয়া হোক, যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৭
এসএনএস