বলছি মারকুইস স্ট্রিটের সুইট এম্পোরিয়ামে যুগ যুগ ধরে বিক্রি হওয়া দেশি গরুর খাঁটি লোভনীয় দুধের কথা।
মারকুইস স্ট্রিট মানেই বাঙালিদের আড্ডাখানা।
নিউমার্কেট একেবারে মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথ। ঢাকা-কলকাতার সব বাসের শেষ গন্তব্য এই স্ট্রিট। প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটকদেরও তাই প্রথম পছন্দ মারকুইস স্ট্রিট। এখান থেকে পাতাল রেলের স্টপেজগুলোও কাছে। চাইলে মেলে ট্যাক্সি, ওলা, উবার। আর কেনাকাটার বৈচিত্র্যের তো শেষ নেই এখানে। সব মিলে কেউ চিকিৎসার জন্য এলেও এ এলাকাতেই থাকতে পছন্দ করেন।
অনেক বৈচিত্র্যের মধ্যে শেখ শফিউল্লাহর মিষ্টির দোকানের এই স্পেশাল দুধ একটি। বংশ পরম্পরায় এখানে ব্যবসা করছেন তারা। মিষ্টির পাশাপাশি দোকানলাগোয়া বাইরে কয়লার চুলো পেতে বসানো হয়েছে দুধের কড়াই। এটা দেখভাল করার দায়িত্ব বাবলুর। ১০-১২ বছর সামলাচ্ছেন তিনিই।
সারাদিনের ক্লান্তি তাড়াতে রাতে ঘরে ফেরার সময় নিয়মিত একগ্লাস গরম দুধ খেয়ে যান আশপাশের বহু মানুষ। বাংলাদেশসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারা এখানে বেড়াতে আসেন তারা রাতে হাঁটতে রেরুলেই খোঁজ পেয়ে যান এ দুধের।
প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে বাবলুর দুধ বিক্রি। সংগ্রহ করা হয় আশপাশে পালন করা দেশি গাইয়ের দুধ। ২০ লিটার দুধ প্রতিদিন এভাবে বিক্রি হয়ে যায়। জানাচ্ছিলেন বাবলু।
পাশ থেকে মালিকদের একজন শফিউল্লাহ বলছিলেন, আমরা নতুন নই। যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় এ ব্যবসা করছি। দুধও অনেক আগেই থেকেই বিক্রি করি। আমাদের নিয়মিত কাস্টমার আছে। আর পর্যটকরাও প্রচুর আসেন এখানে।
যারা রোগী নিয়ে কিংবা ছোট বাচ্চা নিয়ে এলাকায় যান বা যাবেন তাদের জন্য দুধ পেতে আদর্শ জায়গা বাবলুর দোকান। সব দুধ একসঙ্গে হালকা আঁচে জ্বাল হতে থাকে। এতে আস্তে আস্তে লাল রং ধারণ করে উপরে বসতে থাকে সর। প্রতি ২৫০ গ্রাম দুধ ১৬ রুপি। কেউ চিনি চাইলে চিনি দিয়েই দুই হাতে দুই মগে এপাশ-ওপাশ করে দুধ রেডি করে দেওয়ায় ওস্তাদ বাবলু।
স্থানীয়রা আবার কাচের গ্লাসে থেকে পছন্দ করেন না। তাদের পছন্দ মাটির ভাঁড়। ২৫০ গ্রাম ও ৫০০ গ্রাম মাপের ছোট মাটির ভাঁড় আচে বাবলুর কাছে। এলাকায় বেড়াতে আসা বাংলাদেশিসহ অন্যদের গ্লাসেই দেয় বাবলু। কেউ চাইলে মাটির ভাঁড়ে। আর কেউ যদি পার্সেল নিতে চায় সে ব্যবস্থাও আছে এখানে। মাটির ভাঁড়ে দুধ দিয়ে উপরে পলিব্যাগ মুড়িয়ে রাবার দিয়ে সুন্দর করে বেঁধে দেওয়া হয়।
দুধ মগে বানানো শেষ হলে পরিবেশনের আগে চামচে করে আলাদাভাবে ঘন সর তুলে দেন বাবলু। এতে যেন মজা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যারা শৈশবে মায়ের জ্বাল দেওয়া দুধের হাড়ি থেকে চুরি করে সর তুলে খেয়েছেন তারা বুঝবেন আরও! আর আয়েশ করে খাওয়ার জন্য বাইরে আবার একটি বেঞ্চ পাতা আছে। রীতিমতো সিরিয়াল পড়ে এখানে। চাইলে কেউ ১০ রুপির দুধও কিনে খেতে পারেন।
মারকুইস স্ট্রিট কিংবা আশপাশে এসে যারা থাকেন একবার ঢুঁ মারতে পারেন শফিউল্লাহর দোকানে। বাবলুকে সেখানে পাবেন রাত ১২টা অব্দি।
** আড্ডা আছে, ‘সেই’ আড্ডাটা নেই কফি হাউসে
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৭
এএ