ঈদের ছুটিতে যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন পটুয়াখালীর ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা থেকে। ভ্রমণ পিপাসুরা এরই মধ্যে ঈদের পর থেকে বিভিন্ন হোটেলের কক্ষ ভাড়ার জন্য অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরিফ।
এই ছুটিতে যারা সাগরকন্যা ঘুরতে যাবেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফসিউর রহমান।
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মনোরম এক ভ্রমণ স্বর্গ কুয়াকাটা। পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণে কলাপাড়া উপজেলার অন্তর্গত লতাচাপালী ইউনিয়নে অসাধারণ এ সমুদ্র সৈকতটির অবস্থান।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পূর্বদিকেই রয়েছে গঙ্গামতির বা গজমোতির সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও আগুনমুখা নদীর মোহনা, পশ্চিমে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল ও আন্ধারমানিক নদের মোহনা, উত্তরে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের বাণিজ্য কেন্দ্র আলীপুর।
কুয়াকাটায় বেড়াতে গেলে যেগুলো না দেখলেই নয়, তারমধ্যে সৈকতের পূর্ব প্রান্তের চারগঙ্গামতী থেকে সূর্যোদয় দেখা, পশ্চিম প্রান্তের লেম্বুরচর থেকে সূর্যাস্ত দেখা। ইঞ্জিনচালিত ফাইবার বোটে চরে ফাতরা, লালদিয়া, হরিণবাড়িয়া, সোনাকাটা ইকোপার্কসহ সংরক্ষিত বনাঞ্চলও ঘুরে দেখা যাবে এখান থেকে।
কুয়াকাটায় বিভিন্ন স্থানে দেখা যাবে রাখাইনদের ছোট ছোট পল্লীতে থাকা তাঁত শিল্প ও রাখাইন নারীদের সংগ্রামী জীবন। দেখা যাবে শুটকি ও জেলে পল্লীর কর্মব্যস্ত জীবন।
বেড়িবাঁধ ঘেঁষে কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়াটির সামনেই রয়েছে সীমা বৌদ্ধ মন্দির। প্রাচীন এই মন্দিরে রয়েছে প্রায় ৩৭ মণ ওজনের ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধমূর্তি। পাশাপাশি কুয়াকাটার রাখাইন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আরেকটি বাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ মন্দির। সেখান থেকে কিছু দূরে আমখোলা পাড়ায় রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাখাইন বসতি।
কুয়াকাটা থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তরে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় একটি মাছ ব্যবসা কেন্দ্র আলীপুর। এ বন্দর থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রলার বঙ্গোপসাগরে যায় মাছ ধরতে। এসব জায়গায় ঘুরতে হলে ভাড়ায় মোটরসাইকেল কিংবা ব্যাট্যারিচালিত ভ্যানে চড়ে ঘুরতে পারেন যে কেউ।
এছাড়া ঘোড়ায় চড়ে সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণ কিংবা সূর্যস্নান করে দিব্যি সময় কাটানো যায় এ সৈকতে। পাশাপাশি সমুদ্রস্নানের জন্য রয়েছে বয়া, লাইফজ্যাকেটেরও ব্যবস্থা। কেনাকাটা করতে চাইলে সৈকতপারের মার্কেট, রাখাইন মার্কেটসহ বেশ কিছু দোকান রয়েছে কুয়াকাটায়।
নিয়মিত খাবারের জন্য বেশ কিছু হোটেল, রেস্টুরেন্ট থাকলেও তাজা সামুদ্রিক মাছ কিংবা কাঁকড়া ভেজে খেতে চাইলে সৈকত সংলগ্ন অস্থায়ী মার্কেটে রয়েছে তার ব্যবস্থা।
নদী ও সড়ক- দু’পথেই কুয়াকাটা যাওয়া যায়। তবে প্লেনে করে বরিশাল হয়েও কুয়াকাটা যাওয়া যাবে। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বরিশাল ও পটুয়াখালীর উদ্দেশে বেশ কয়েকটি বিলাসবহুল লঞ্চ ছেড়ে যায়। লঞ্চযোগে পটুয়াখালী নেমে পটুয়াখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসযোগে সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়া যায়। এছাড়া লঞ্চযোগে কিংবা প্লেনে করে বরিশাল নেমে নগরের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস যোগে কুয়াকাটায় যাওয়া যাবে।
আর সড়কপথে ঢাকা থেকে সরাসরি যেতে চাইলে ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বাসে যাওয়া যাবে। সাধারণ ছাড়াও শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসও এ পথে চলাচল করে।
কুয়াকাটায় গিয়ে রাত্রিযাপন করতে হলে সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাস, গ্র্যান্ড হোটেলের মতো নামিদামি হোটেল ছাড়াও রয়েছে স্বল্প খরচে থাকার সু-ব্যবস্থাসম্পন্ন বেশকিছু হোটেল ও রিসোর্ট। এসব হোটেলে কক্ষের আকার ও আকৃতি ভেদে ভাড়া ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৭
এমএস/এএ