ঈদের ছুটিতে বাড়িফেরা মানুষ ও স্থানীয় পর্যটকদের ভিড়ে সমুদ্রসৈকত ও আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যঘেরা সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা যেন নতুন করে ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য।
কুয়াকায়াটায় পর্যটকদের স্বাগত জানাতে ও নিরাপত্তায় সকল প্রস্তুতি আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিল ব্যবসায়ীমহল ও স্থানীয় প্রশাসন।
সাগরপাড়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনি আর হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের আতিথেয়তা কুয়াকাটায় আসা পর্যটকদের মুগ্ধ করছে।
বাতাসের সাথে সাগরের উত্তাল ঢেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে ভ্রমণের আনন্দকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলছে। কেউ কেউ সাঁতার না জানায় বয়া নিয়ে সাগরে গোসল করছেন। কেউবা বিচে ফুটবল খেলছেন। কেউ সাগরের সৌন্দর্য ছবিতে তুলে ধরছেন, কেউ হাঁটছেন, কেউ ঘোড়ায় চরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউবা বিচ-চেয়ারে শুয়ে শুয়ে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দু’চোখ মেলে।
সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যের পাশাপাশি পর্যটকরা ঘুরে দেখছেন, কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার, মিশ্রিপাড়া সিমা বৌদ্ধ বিহার, জাতীয় উদ্যান, লেম্বুর চর, শুটকি পল্লী, রাখাইন মহিলা মার্কেট, গঙ্গামতি, কাউয়ারচর, লাল কাঁকড়ার চর, ইলিশ পার্ক, রাখাইন পাড়ার তাঁতসহ আকর্ষণীয় বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনা।
বরিশাল থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসা চাকুরিজীবী খোরশেদ আলম জানান, ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে কুয়াকাটায় আসবেন এ চিন্তা আগে থেকেই ছিলো। তাই দেরি না করে ঈদের পরের দিন সকালেই কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। আগে বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর পথে ৪/৫টি ফেরি ছিলো, আর এখন ১ টি বাদে বাকিগুলোতে ব্রিজ হয়ে যাওয়ায় সময়ও কম লেগেছে। সাধ্যের মধ্যে মধ্যম মানের একটি হোটেলে ভালোই একটি রুম পেয়েছেন। সাগরপারে এসে সবাই ঘুরে বেশ মজা করছে, আনন্দও পাচ্ছে।
পিরোজপুর থেকে আসা মৌসুমী আক্তার নামে এক গৃহিনী বলেন, বর্ষাকাল চলছে, তারপরও সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্যই স্বামী-সন্তানের সাথে এখানে এসেছেন। বোটে ঘোরার সাহস না হলেও ভ্যান ও মোটরসাইকেলে চেপে সৈকত ছাড়েও পর্যটন এলাকার বিভিন্ন জায়গা ও স্থাপনা ঘুরে দেখছেন। আরো ১/২ দিন থাকার ইচ্ছেও রয়েছে বলে জানান তিনি।
পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়ে কুয়াকাটার খাবার হোটেলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেনাবেচার ধুম পড়েছে। তবে খাবারের দাম বেশি রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে পর্যটকদের।
এদিকে অধিকাংশ হোটেল, মোটেলের রুম আগাম বুকিং হয়ে যাওয়ায় সদ্য কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকদের ভালো রুম পেতে কষ্ট হচ্ছে। তবে কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব দুঃখ ভুলিয়ে দিচ্ছে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান চাঁন বলেন, যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে দিনদিন কুয়াকাটায় পর্যটক এমনিতেই অনেকটা বেড়েছে। আর ঈদের কারণে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল-কটেজ অগ্রিম বুকিং ছিলো। তবে সময়ের সাথে সাথে আগত পর্যটকদের তুলনায় রুম সংকট দেখা দিতে পারে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র এএসপি আবদুল করিম জানান, সৈকতে পর্যটকদের নির্বিঘ্নে চলাফেরা নিশ্চিত করতে এবং অপ্রীতিকর যেকোনো ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য স্পটগুলোতেও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর নজরদারি রয়েছে।
এদিকে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার অনন্য স্থাপনা পায়রা সমুদ্রবন্দর, পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কে কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদের ওপর অবস্থিত শহীদ শেখ কামাল সেতু, হাজিপুরের সোনাতলা নদের ওপর নির্মিত শহীদ শেখ জামাল সেতু, মহিপুর-আলীপুরে শিববাড়িয়া নদীর ওপর শহীদ শেখ রাসেল সেতুতেও পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে। তবে এসব জায়গায় স্থানীয় পর্যটকদের সংখ্যাই বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৭
এমএস/জেএম