প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে মন ভালো করে দেয়ার সব উপাদান যেন একসাথে সাজিয়ে রেখেছে কেউ। এমনই মুগ্ধ করা প্রকৃতি নোয়াখালীর হাতিয়া নিঝুম দ্বীপের।
কারও যদি নাগরিক কোলাহলময় জীবন ছেড়ে প্রকৃতির একেবারে গহীনে ডুব দেওয়ার ইচ্ছে থাকে, তাহলে নিঝুম দ্বীপের বিকল্প কিছু হতে পারে না। এই শীতে দেখা মিলবে প্রায় কয়েকশ’ প্রজাতির অতিথি পাখির।
হাতিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মাহবুব মোর্শেদ জানান, উপজেলার দক্ষিণে ১৯৫০-এর দশকে দ্বীপটি জেগে ওঠে। এরপর ক্রমে পলি জমে বর্তমান আকার ধারণ করে। শুরুতে ‘চর ওসমান’ নামে পরিচিত হলেও পরে এই দ্বীপের নামকরণ হয় ‘নিঝুম দ্বীপ’ নামে। এখন এ দ্বীপের শেষ মাথায় আরেকটি দ্বীপ উঠছে। সেটিকেও বসবাসের উপযোগী করা হবে বলে জানান তিনি। স্থানীয় বন বিভাগ সুত্র জানায়, ম্যানগ্রোভ বনভূমির জন্য সুন্দরবনের পরই স্থান নিঝুম দ্বীপের। নিঝুম দ্বীপের বন বিভাগ কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান জানান, এ দ্বীপের প্রধান বৃক্ষের নাম কেওড়া। এ ছাড়া রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, কলারী ও গোলপাতা। রয়েছে ২১ প্রজাতির বনজ ও ৪৩ প্রজাতির লতা-গুল্ম। গড়ে ওঠা বনভূমির ওপর বেঁচে আছে ২০ হাজারের বেশি হরিণ। এ দ্বীপটির মূল আকর্ষণ এসব হরিণ। তবে চোখের সামনে এসে হরিণ ঘুরোঘুরি করবে না- দেখতে হলে খাল পার হয়ে যেতে হবে গহীন বনে। সুন্দরবনের মতো বাঘের মতো কোনো হিংস্র প্রাণী না থাকায় হরিণের খুব কাছাকাছিই যেতে পারে পর্যটকরা। হরিণের পাশাপশি দেখা মিলবে বানরেরও। দ্বীপের মাঝে বয়ে চলেছে ছোট খাল।
উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় শীতকালে শীতের তীব্রতাও তুলনামূলকভাবে এখানে কম। সে কারণেই শীতকালে আসে হাজারো অতিথি পাখি। নানা প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গাংচিল, পিয়ং, জিরিয়া, শঙ্খচিল, পেলিক্যান, ঈগল, কাস্তেরা, গুলিন্দা, জলচর, বাটান, কাঁদাচোখা, জিরিয়া, রাজ হাস, সরালি শহ কয়েকশ প্রজাতির পাখি।
পাখি দেখা, বনে হাঁটা, হরিণ দেখা এবং স্থানীয় নামার বাজারের পাশে সমুদ্র সৈকতে দারুণ সময় কাটবে যে কারোরই। তাই শীতে বেড়াতে সেরা স্পট নিঝুম দ্বীপ।
যাওয়ার উপায়
রাজধানী থেকে নিঝুম দ্বীপ যাওয়া যাবে দুই পথে। একটি নৌপথ অন্যটি সড়ক পথ। সড়ক পথে যেকোনো গাড়িতে আসতে হবে নোয়াখালী। তারপর সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় করে যেতে হবে সুবর্ণচরের চেয়ারম্যান ঘাটে। সেখান থেকে হাতিয়া যাওয়ার জন্য পাবেন সি-ট্রাক ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা। রয়েছে স্পিড বোটও। সি-ট্রাকে ভাড়া ৬০ টাকা, নৌকা ১০০ টাকা,স্পিডবোট ৩'শ টাকা। মেঘনা নদী পার হয়ে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে নেমে উঠতে হবে মোটর সাইকেলে। প্রতিজন ৩’শ টাকা করে সেই মোটর সাইকেল নিয়ে যাবে মোক্তারিয়া ঘাটে। সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে নদী পার হয়ে যেতে হবে নিঝুম দ্বীপে। ভাড়া পড়বে প্রতিজন ৪০ টাকা।
নৌ-পথে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়ার তমরুদ্দী ঘাট, সময় লাগবে ১০/১২ ঘণ্টা। সেখান থেকে মোটরসাইকেল যোগে মোক্তারিয়া ঘাটে এসে পূর্ব নির্দেশিত পথে।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
এ দ্বীপে থাকার জন্য একমাত্র ভালো মানের জায়গা হল নোয়াখালী জেলা পরিষদের অবকাশ নিঝুম রিসোর্ট। এটি নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকায় অবস্থিত। এখানকার পর্যটন রিসোর্টে থাকতে ভাড়া পড়বে রুম প্রতি ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ পর্যন্ত। বাজারেই আছে মসজিদ বোর্ডিং, এখানে খুবই কম খরচে থাকা যায়। তবে, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেই। গোটা দ্বীপেই সোলার প্যানেল অথবা জেনারেটর ব্যবহার করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সীমিত সময়ের জন্য। কাজেই বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বুঝেশুনে ব্যবহার করাই ভালো। রিসোর্ট কিংবা হোটেল রুমে কোনো খাবার পাবেন না। খাবার খেতে হবে স্থানীয় নামার বাজার অথবা বন্দর টিলা বাজারে। দাম অনেক কম পড়বে। কম দামে খেতে পারবেন মেঘনার ইলিশসহ নানা প্রজাতির সুস্বাদু খাবার।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এসএইচডি/আরআই