ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পর্বতারোহণের কেনাকাটা সেরে কাঙ্ক্ষিত যাত্রা (পর্ব-২)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
পর্বতারোহণের কেনাকাটা সেরে কাঙ্ক্ষিত যাত্রা (পর্ব-২) থামেলে আমাদের প্রথম সকাল

থামেলে আমাদের প্রথম সকাল। ব্রেকফাস্ট দেখেই যদি বোঝা যায় দিনটা কেমন যাবে তাহলে আজ ভালোই যাওয়ার কথা। হোটেলের কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্টের জমাটি জ্যাম-জেলি, মধু, ব্রেড, পটেটো স্ম্যাশ সঙ্গে মাসালা চা। অবশ্য তার আগেই অসাম বাজারে গিয়ে দারুণ এ চা চেখে দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। অসাম বাজার সত্যিই অসাম। ফুল থেকে শুরু করে আনাজপাতি সবই বিকোয় সেখানে।

এ বাজারের নানা স্থাপত্যের সঙ্গে নেপালি কৃষ্টি-কালচারের ছাপ স্পষ্ট। আমরা সকালের নাস্তা সেরেই বের হলাম কেনাকাটার মিশনে।

শুরু হলো মুহিত ভাইয়ের ক্যারিশমাও। নর্থফেস, মাউন্টেন হার্ডওয়্যারের মতো ব্র্যান্ড শপ থেকে শুরু করে খুচরা পাইকারি দোকান, সব তার নখদর্পণে, পরিচিত দোকানিরাও। নর্থফেস থেকে কিছু কেনাকাটা হলো। হিমালয়ান গাইড শপ এবং মাকালু ই-ট্রেডার্স থেকেই হলো বেশিরভাগ কেনাকাটা। এর মধ্যে দেখা হলো শেরপাদের সব রথী-মহারথীদের সঙ্গেও। পরিচয় হলো মিংমা শেরপার সঙ্গে। অনেকে দিন ধরেই মুহিত ভাই এবং তিনি একসঙ্গে অভিযান চালাচ্ছেন। চৌদ্দটি আট হাজার মিটার পর্বত আরোহণের মিশনে ব্যস্ত এ সুপার শেরপা।
মাসালা চাদিনভর কেনাকাটার ফাঁকে দুপুরের খাওয়া আন্টির দোকানের নেপালি থালি। অন্যসব কিছুর মতো এটিও বিএমটিসির পরিচিত একটি দোকান। প্রথম খাওয়া হলো রাই শাক। খুব বেশি ভালো না লাগলেও একেবারে খারাপ না। সবচেয়ে বড় কথা খাবারে নেপালি স্বাদের ব্যাপারে রসনা নেতিবাচক সিগন্যাল দেয়নি। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। অভিযানের পুরো সময় এই স্বাদের খাবারই খেতে হবে। খাবার পর আবার কেনাকাটার মিশনে। থামেলে ব্র্যান্ডশপগুলোর বাইরে সব দোকানেই দামাদামির সুযোগ আছে। অনেকটা আমাদের বঙ্গবাজারের মতো।  

তবে পর্বতারোহণের সাজ সরঞ্জামাদি কেনার জন্য অবশ্যই সঙ্গে একজন অভিজ্ঞ কাউকে নিয়ে যাওয়া উচিত। সে হিসেবে আমি মহাভাগ্যবান। মুহিত ভাই ছাড়াও আছেন আরও অভিজ্ঞ মানুষজন। সন্ধ্যায় আমার ব্যাকপ্যাক কেনার মধ্য দিয়ে যখন কেনাকাটা পর্বের সমাপ্তি টানা হলো তখনও অনেক কাজ বাকি। এর মধ্যেই আমাদের এজেন্সি ক্লাইম্বালায়ার অফিসে গিয়ে পরিচয় হয়েছে অভিযানের শেরপা গাইডদের সঙ্গে। লারকে অভিযানে যাচ্ছেন তিন জন ক্লাইম্বিং গাইড। যার দলনেতা বিনায়ক জয় মাল্লা গত বছরই লারকে পর্বত শিখরে সফল অভিযান করেছেন।  
থামেলে ব্র্যান্ডশপগুলোর বাইরে সব দোকানেই দামাদামির সুযোগ রয়েছে
এছাড়াও তার ঝুলিতে রয়েছে এভারেস্ট, মানাসলুর মতো পর্বতে সাফল্য। জাতিতে নন শেরপা মাল্লা ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক। হয়েছেন তিনবার নেপালের ওয়াল ক্লাইম্বিং প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন। সঙ্গে আছেন তাশি শেরপা। এভারেস্ট, মাকালু সামিট রয়েছে তার। আর একজন নিমা আমাদের সঙ্গে পরে যোগ দেবেন বেসক্যাম্পে। ক্লাইম্বালায়ার দাওয়া শেরপা অভিযানের দলনেতা মুহিত ভাইয়ের সঙ্গে প্রয়োজনীয় আলাপ সেরে নিলেন।  

প্রসঙ্গত বলে রাখি আমাদের দলের ছয় সদস্যের মধ্যে পাঁচজন এসেছেন লারকে পর্বত চূড়া আরোহণ করতে এবং আমার লক্ষ্য মানাসলু পরিক্রমা সম্পন্ন করা।

সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে শুরু হলো আমাদের অন্য মিশন। এবার সব গোছগাছ করতে হবে। এটিই আমার প্রথম অভিযান। ফলে সবাই সহযোগিতা করছিলেন। আগামীকাল আমরা বেরিয়ে পড়বো আরুঘাটের উদ্দেশ্যে। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত। কিন্তু রাত ১২টা বাজলো সব কাজ শেষ করতে। ফলে পরদিন খুব সকালে জোর করে নিজে বিছানা থেকে নিজেকে তুলতে হলো।    
অসাম বাজারে ফুল বিক্রি করছেন এক নারী বিক্রিতা
সব কাজ শেষে নাস্তার টেবিলে দৌড়ে আসতে দেখি ততক্ষণে সবাই আমার অপেক্ষায়। নাস্তা সেরে এজেন্সির ঠিক করা বাসে উঠে বসলাম। ফোর হুইলার বিশ সিটের বাস। ক্লাইম্বিং গাইড, পোর্টার সব চলেছি একসঙ্গে। সকালের রোদে কাঠমান্ডু উপত্যাকা হাসছে। অফিসগামী মানুষ রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে। আর আমরা ছুটে চলেছি হিম শিখরের টানে। ঘণ্টাখানেক বাদে বাস কাঠমান্ডুর ঘিঞ্জি ঠেলে পোখারা হাইওয়েতে পড়লো। নেপাল ততক্ষণে ঘোমটা খুলে নিজের রূপ ঝঙ্কারের বাজনা বাজাতে শুরু করেছে।

বহু দূরে দিগন্তের কাছে শুভ্র শৈল মালা হাসছে। দুই লেনের হাইওয়ের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ত্রিশুলী নদী। গ্লেসিয়ার গলা পানি বয়ে চলেছে সাগরের পানে। এ নদীতে রাফটিং হয়। আমরা ঘাটবেসীতে যাত্রাবিরতি করলাম। সেখানে গাড়ির চাকা পাংচার হলো। এখন এটাকে সৌভাগ্যই বলবো। বিরতি দীর্ঘায়িত হওয়ায় দুপুরের খাবার সেখান থেকেই সেরে নিতে হলো।
নেপালি থালি
বাড়তি পাওনা হলো ত্রিশুলী নদীর তাজা মাছ ভাজা। তার স্বাদ অনেক দিন মুখে লেগে থাকবে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের বিরতির পর আমাদের বাস আবারও চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ বাদে হাইওয়ে ছেড়ে ডানে আবু খায়রেনি নামের জায়গায় পূর্ব দিকে চাপা এক রাস্তায় ঢুকে পড়লো। এরপর কিছুক্ষণ পরই টের পেলাম কেন বিরতিতে চাকা পাংচার হওয়াটা আমাদের জন্য সৌভাগ্য ছিল। সেই গল্প আগামী পর্বে।    

চলবে…

** হিমালয়ের মানাসলু ট্রেকিংয়ের অদম্য নেশায় যাত্রা (পর্ব-১)

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।