পঞ্চগড় থেকে বাসে করে তেঁতুলিয়া যাওয়ার পথে রাস্তার দু’পাশে চোখে পড়বে একটি ফটক। ফটকে লেখা মুক্তিযুদ্ধের মুক্তাঞ্চল।
তেঁতুলিয়ার মূল সৌন্দর্য ধরা দিবে এ ফটকটি পেরুলেই। হঠাৎ করে শরীরে যেন অন্যরকম অনুভূতি হবে। কারণ এখান থেকেই বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড সরু হয়ে ভারতের দিকে ঢুকে গেছে। বলতে গেলে ভারতের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি জেলার ভেতরেই যেন তেঁতুলিয়া। তেঁতুলিয়ার চারপাশে রয়েছে ভারতের বিধান নগর, চাত্তের হাট, ঘোসপুর, রাহমু, ফুলবাড়ি ও আমবাড়িয়া। আরও চল্লিশ মাইল গেলেই নেপাল।
তেঁতুলিয়া যদি মোটরসাইকেলে যাওয়া যায় তাহলে ভ্রমণের আনন্দটা হবে অন্যরকম। মুক্তিযুদ্ধের ফটক পেরিয়ে আরও মাইল দশেক এগোলে পড়বে ভোজনপুর। চোখে পড়বে দিগন্তজোড়া সমতলের চা বাগান। রাস্তার পাশে দাঁড়ালেই দেখা যাবে ভারতের চা বাগান ও সীমান্তের ওপারের শহর।
তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে শতবর্ষী তেঁতুলগাছ। স্থানীয়রা জানায় এ তেঁতুলগাছের নামানুসারেই সম্ভবত এ জনপদের নাম। উপজেলা সদরে রয়েছে একটি ঐতিহাসিক ডাক বাংলো। এর নির্মাণশৈলী ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। জানা যায়, কুচবিহারের রাজার তত্ত্বাবধানে এটি নির্মিত হয়। সদরে আরও রয়েছে উপজেলা পরিষদের নির্মিত একটি পিকনিক কর্নার।
এ স্থানগুলো থেকে হেমন্ত ও শীতকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। বর্ষাকালে মহানন্দা নদীতে পানি থাকলে এ দৃশ্য আরও মনোরম হয়।
শীতকালে এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। বিকেলে মহানন্দা নদীর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত, খুবই ভালো লাগার মতো একটি দৃশ্য। মহানন্দার পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা যাবে ভারতের শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি থেকে আনা পাথর। দেখা যাবে ওপারে শিলিগুড়ি ব্রিজ।
মহানন্দার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই চলে যাওয়া যায় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে। বাংলাদেশ মানচিত্রের সবচেয়ে উত্তরের স্থান বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট। এ স্থানে মহানন্দা নদীর তীর ও ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন প্রায় ১০ একর জমিতে ১৯৯৭ সালে স্থাপিত হয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য বিনিময় হয় এ স্থলবন্দরের মাধ্যমে। ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি ছাড়াও এর মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্থলবন্দর যার মাধ্যমে তিনটি দেশের সঙ্গে সুদৃঢ় যোগাযোগ গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
জিরো পয়েন্ট দেখে ফেরার পথে ঘুরে আসা যাবে উপজেলার শালবাহান ইউনিয়ের রওশনপুর। এ এলাকায় সুনিবিড় পরিবেশে গড়ে উঠেছে মনোরম অবকাশ যাপন স্পট। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন শতশত পর্যটক ভিড় জমায় এখানে।
সতর্কতা:
হিমালয়ের কোলঘেঁষা এ অঞ্চলে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে থাকে প্রচণ্ড শীত। সুতরাং, শীতের মৌসুমে বেশি করে শীতের কাপড় নিয়ে আসতে হবে।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা:
তেঁতুলিয়া সদরে জেলা পরিষদের বাংলো রয়েছে। এছাড়াও উপজেলা সদরে রয়েছে দু’টি আবাসিক হোটেল। ইচ্ছে করলে জেলা শহরেও থাকা যেতে পারে। বাসে যেতে সময় লাগবে ঘণ্টা খানেক। খাওয়ার জন্য উপজেলা সদরে ‘বাংলা হোটেল’ নামের একটি মানসম্মত হোটেল রয়েছে।
যাওয়ার পথ:
ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়া যেতে হলে প্রথমে যেতে হবে পঞ্চগড়। হানিফ, শ্যামলী, নাবিল ও বাবলু পরিবহন এ রুটে চলে। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ছয়’শ টাকা। এরপর জেলা শহর থেকে বাসে যেতে হবে তেঁতুলিয়া। ভাড়া ৩০ টাকা। এরপর পছন্দসই যানবাহন ভাড়া করে ঘুরে দেখতে পারেন পুরো উপজেলা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
এসএইচডি/এনএইচটি/আরএ