সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি পর্যটন মৌসুমে এত বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম এই প্রথম। যে কারণে এখানকার প্রায় চারশ’ হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসে রুম খালি না থাকায় হাজার হাজার পর্যটক রাত কাটাচ্ছেন রাস্তার ধারে, সমুদ্র সৈকতে, খোলা আকাশের নিচে, অনেকে বাসের ভেতর।
তবে আবহাওয়া অনুকূলে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো থাকায় সৈকত ছাড়াও আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতেও প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে মহা আনন্দে সময় কাটাচ্ছেন পর্যটকেরা।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এই মৌসুমে এবারই কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক সমাগম হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণে আসেন। তারা সমুদ্র সৈকত এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্তোরাঁ সবখানেই বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সবাই।
তিনি বলেন, এসব পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে ২৪ ঘণ্টা টুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছে টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। এছাড়া বীচ বাইক, বাইসাইকেল, জেডেস্কি টহলসহ বিভিন্নভাবে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আশা করছি শেষ পর্যন্তও ঘটবে না।
এছাড়াও যেসব পর্যটক খোলা আকাশের নিচে, বিভিন্ন বাসের ভেতরে রাত কাটাচ্ছেন তারা যাতে কোনভাবে নিরাপত্তার অভাব বোধ না করে সেখানেও টুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে বলে জানান কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।
পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতই নয়, দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, বৌদ্ধ বিহারের শহর রামু, হিমছড়ি, ইনানী, মহেশখালী, সোনাদিয়া ও ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপচেপড়া ভিড় লেগে আছে। আবার বাড়তি পর্যটকের কারণে শহরের কলাতলী, সুগন্ধা, বাজার ঘাট, বার্মিজ মার্কেট এলাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে পর্যটকসহ স্থানীয়দের চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কক্সবাজারের ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টোয়াক বাংলাদেশ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া বাংলানিউজকে জানান, শুধু কক্সবাজার বা আশপাশের বিনোদন কেন্দ্র নয়, তিনদিনের ছুটিতে সেন্টমার্টিনেও কোনো হোটেল-মোটেল, কটেজে রুম খালি নেই। সেন্টমার্টিনগামী পাঁচটি সী-ট্রাকেও পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরে ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা শেষ হলেও মূলত নির্বাচনের আগে-পরে প্রায় একমাস মানুষ ভ্রমণে বের হতে পারেননি। যে কারণে ২১শে ফেব্রুয়ারির বন্ধে অন্যবারের চেয়ে এবার বাড়তি চাপ পড়েছে। এখানকার চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্টহাউসে সোয়া লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে হোটেলে কোনো কক্ষ খালি না থাকায় আগাম বুকিং ছাড়া আসা হাজার পর্যটককে সমুদ্র সৈকতে চেয়ারে কিংবা রাস্তার ধারে বসে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কক্সবাজার জেলার সদস্য সচিব ও শহরের ঐতিহ্যবাহী ঝাউবন রেস্তোরাঁর মালিক মো. আলী বাংলানিউজকে জানান, শনিবার ছুটির শেষদিন। রোববার থেকে সরকারি অফিস শুরু হবে। তাই অধিকাংশ পর্যটকই শনিবার রাতে চলে যাবেন। ফলে রোববার থেকে কক্সবাজারে এই ধরনের চাপ থাকবে না। হোটেল-মোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলোতে স্বাভাবিকতা ফিরে আসবে।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিক সৌরভ রহমান বাংলানিউজকে জানান, আমি নিরিবিলি পছন্দ করি। কিন্তু এবার এখানে এতো বিপুল সংখ্যক সমাগম হবে ভাবতে পারিনি। যে কারণে জনজীবনে এক ধরনের অস্বাভাবিকতা সৃষ্টি হয়েছে। তবুও অনেক ভালো লাগছে,কারণ কক্সবাজার তো অসাধারণ একটি জায়গা। এই সমুদ্র দেখলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে।
ঢাকা থেকে আসা মোছাম্মত জান্নাতুন নেছা রোমানা আক্তার রুমি জানান, আসার সময় আমাদের বাসটি দীর্ঘ সময় যানজটের কবলে পড়েছে। তখন খুব বিরক্ত লাগছিল। কিন্তু এখানে আসার পরে এই বীচ দেখে মনটা ভালো হয়ে গেছে। পরিবারের সবার সঙ্গে খুব মজা করছি।
আমরা নতুন বিয়ে করেছি। মূলত হানিমুন করার জন্যই এখানে আসা-জানালেন কুমিল্লা থেকে ভ্রমণে আসা সৌমেন সিংহ।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম জয় বাংলানিউজকে বলেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক যারা কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছেন, তারা যেন কোনভাবেই হয়রানি বা প্রতারণার শিকার না হন সেজন্য জেলা প্রশাসনের সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ক্রমে সমুদ্র সৈকতসহ আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও এই সময়টাতে যেহেতু ট্যুরিস্ট বেশি সেজন্য বীচ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বীচ কর্মী দায়িত্ব পালন করছে। আমরা চাই, পর্যটকদের ভ্রমণ অনেক নিরাপদ হোক এবং তারা সুন্দর স্মৃতি নিয়ে কক্সবাজার থেকে ফিরুক।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১১ ঘণ্টা, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
এসবি/আরআর