বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়, অন্য দেশের তুলনায় জ্বালানি তেলের দাম বেশি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্যাটাগরি-২-এ অবস্থানের কারণে স্থানীয় এয়ারলাইন্সগুলো পিছিয়ে পড়ছে।
তবে এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহরে দীর্ঘক্ষণ উড়তে সক্ষম উড়োজাহাজ থাকলেও লন্ডন ছাড়া ইউরোপ বা আমেরিকার কোথাও বিমানের ফ্লাইট নেই।
সংশ্লিষ্ট তথ্যমতে, ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক রুটে দেশীয় যাত্রীর প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারে বিদেশি এয়ারলাইন্সের তুলনায় এখনো ৩২ শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো। যা চলতি বছর আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে সপ্তাহে মোট ৩২৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স। বিপরীতে দেশি চার এয়ারলাইন্স মিলে আন্তর্জাতিক রুটে প্রতি সপ্তাহে পরিচালনা করছে ২২২টি ফ্লাইট। সে হিসাবে প্রতি সপ্তাহে ১০৩টি অর্থাৎ, ৩২ শতাংশ ফ্লাইট কম চালাচ্ছে দেশি উড়োজাহাজ সংস্থা।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে সপ্তাহে ৩২৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো। এর মধ্যে ভারত ৫৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাত ৭৮টি, মালয়েশিয়া ৪২টি, সিঙ্গাপুর ১৬টি, ভুটান ৪টি, কাতার ২৯টি, থাইল্যান্ড ২১টি, পাকিস্তান ৪টি, কুয়েত ১২টি, সৌদি আরব ৩১টি, শ্রীলংকা ৭টি, চীন ১৬টি, বাহরাইন ৫টি, আজারবাইজান ৩টি এবং ওমান ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
দেশি এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বর্তমানে ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে মোট ১২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইন্সটি। এর মধ্যে কলকাতায় ১৪টি, কাঠমান্ডুতে ৭টি, ইয়াঙ্গুনে ৪টি, কুয়ালালামপুরে ১৪টি, সিঙ্গাপুরে ১২টি, ব্যাংককে ৭টি, লন্ডনে ৪টি, দোহায় ৪টি, দুবাইয়ে ৭টি, কুয়েতে ৭টি, দাম্মামে ৭টি, রিয়াদে ৭টি, জেদ্দায় ১০টি, মাসকাটে ৭টি ও আবুধাবিতে ৭টি ফ্লাইট রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বাংলানিউজকে বলেন, বিমানে অত্যাধুনিক সব উড়োজাহাজ সংযুক্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন আন্তর্জাতিক রুট বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিমান সব সময় বিদ্যমান ফ্রিকোয়েন্সির পূর্ণ ব্যবহারে সচেষ্ট।
বিমানের পর সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করছে দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। ৮টি দেশের ৯টি গন্তব্যে সপ্তাহে ৪৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এই এয়ারলাইন্সটি। এর মধ্যে ঢাকা-কলকাতায় ৭টি, চট্টগ্রাম-কলকাতা ৩টি, চট্টগ্রাম-চেন্নাই ৩টি, ঢাকা-দোহা ৪টি, ঢাকা-মাসকাট ৬টি, ঢাকা-সিঙ্গাপুর ৪টি, ঢাকা-ব্যাংকক ৪টি, ঢাকা-কুয়ালালামপুর ৭টি ও ঢাকা-গুয়াংজুতে (চীন) ৭টি।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ৮টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সপ্তাহে পরিচালনা করছে ৪৩টি ফ্লাইট। এর মধ্যে কলকাতায় ১৪টি, দোহায় ৪টি, মাসকাটে ৭টি, সিঙ্গাপুরে ৭টি, কুয়ালালামপুরে ৭টি ও ব্যাংককে ৪টি ফ্লাইট রয়েছে এয়ারলাইন্সটির। বেসরকারি আরেক এয়ারলাইন্স নভোএয়ার কেবল কলকাতা রুটে সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
অবশ্য আকাশপথের বাজার দখলে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো শিগগিরই ভালো অবস্থানে যাবে বলে মনে করেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আরো ১২টি দেশে ফ্লাইট চালুর ব্যাপারে কাজ করছে ইউএস-বাংলা। এয়ারলাইন্সটির যাত্রার শুরু থেকে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর যে পরিকল্পনা ছিল, সেটা পূরণ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যদি জ্বালানির দাম কমানো হতো, তাহলে টিকিটের মূল্য অনেকটা কমে যেতো। ফলে আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তো।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ৫৩টি দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৯
টিএম/এএ