সিলেটের প্রকৃতির রূপের রানি খ্যাত জাফলং,পাথর স্পর্শ করে নেমে আসা স্বচ্ছ জলরাশির বিছানাকান্দি, পাহাড়ের বুক চিড়ে খেলা করা 'মিনি নায়াগ্রা' খ্যাত ঝরনা পান্থুমাই, সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল। তাও ভাল লাগছে না..? পা মাড়িয়ে আসুন শীতল পাটির চা বাগানের সবুজ গালিচায়।
ট্রেনে কিংবা বাসে আসুন..শহরে প্রবেশদ্বারেই সুরমার বুকে দেখতে পাবেন শতবর্ষী লোহার তৈরি ক্বীন ব্রিজ। পায়ে হেঁটে কিংবা রিকশায় চড়তে পারেন ব্রিজটিতে। তাতে উঠার পর চোখের সীমানায় চলে আসবে সুরমার বুকে বহমান সেলফি ব্রিজ খ্যাত কাজিরবাজার সেতু ও শাহজালাল সেতু। ক্বীন ব্রিজের উত্তরপারে স্বাগত জানাবে আলী আমজদের ঘড়ি ও সার্কিট হাউস। এরপর মনোরম পরিবেশে থাকার জন্য খোঁজে হাতের নাগালেই পাবেন হোটেল-মোটেল। সিলেটে যারা ঘুরতে আসেন, তাদের ইচ্ছে থাকে হযরত শাহ জালাল (র.) দরগাহ জিয়ারতের। শহরের অভ্যন্তরে মাজারের পাশেই রাত কাটান বিভিন্ন হোটেল মোটেলে। হযরত শাহজালাল (রা.) জিয়ারত শেষ করে সেখান থেকেই লেগুনা অথবা সিএনজিতে যেতে পারেন হযরত শাহ পরাণ (রা.) এর মাজার শরীফে। ভাড়া নেবে মাত্র ১৫ টাকা। শহরের অভ্যন্তরেই ঘুরে দেখতে পারেন-ঐতিহাসিক নিদর্শন শাহী ঈদগাহ, হাসন রাজা জাদুঘর, খান বাহাদুর জিতু মিয়ার বাড়ি, মনিপুরী রাজবাড়ি, মনিপুরী মিউজিয়াম, ওসমানী জাদুঘর ও শিশু পার্ক। শহর থেকে খানিকটা দূরে মালনী ছড়া ও লাক্কাতুড়া চা বাগান, ড্রিমল্যান্ড পার্ক, মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের বাড়ি, হরিপুরের আগুন টিলা এবং কৈলাশ টিলা। এছাড়া সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের বড়লেখায় মাধবকুণ্ড ও হামহাম জলপ্রপাত, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম এর বাড়ি, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট, শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া উদ্যান, বাইক্কা বিল, শীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা ছাড়াও অসংখ্য চা বাগান।
সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওর, শাহ আব্দুল করিমের বাড়ি, ও হবিগঞ্জের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে সাতছড়ি, রেমাকালেঙ্গা, এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। সিলেট ঘুরে গেলে সাত রঙের চায়ের স্বাদও নিতে পারেন। সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে জাফলংয়ের বর্ণনা নতুন করে নাইবা দিলাম। জাফলং যেতে মাঝ পথে চোখ বুলিয়ে নেবেন ঐতিহাসিক জৈন্তা রাজবাড়ি, নীল জলরাশির ‘নীলনদ’ খ্যাত লালাখাল। জৈন্তার শ্রীপুর পিকনিক স্পট, ডিবির হাওরে লাল শাপলার বাগান এবং তামাবিল শুল্ক স্টেশন।
বিছানাকান্দি:
সারি সারি পাথরের উপর এসে পড়ছে পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসা বিশাল জল ঝরনা। জল ঝরনার এই বিছানায় শুয়ে বসে সময় কেটে যায় পর্যটকদের। বিছনাকান্দি যেতে হলে নগরের আম্বরখানা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যেতে পারেন গোয়াইনঘাটের হাদারপার। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা। লেগুনা রিজার্ভ করেও যেতে পারেন। ভাড়া নেবে প্রায় দুই হাজার টাকা। শহর থেকে ২ ঘণ্টায় যেতে পারবেন সেখানে। হাদারপার থেকে নৌকায় বিছনাকান্দি পৌঁছাতে লাগবে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ট্যুরিস্ট দেখলে মাঝিরা ভাড়া চেয়ে বসে বেশি। ভুলেও রাজি হবেন না। হেঁটে নদীর পাড়ে গিয়ে ভাড়া নৌকাও সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকায় আসা-যাওয়া করতে পারবেন।
রাতারগুল:
বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন রাতারগুল। নিচে পানি উপরে গাছ। নৌকা করে রাতারগুল ঘুরে বেড়ানো তো হয়ে উঠতে পারে দারুণ এক অ্যাডভেঞ্চার। সিলেট শহর থেকে দূরত্ব প্রায় ২৬ কিলোমিটার। রাতারগুলে জলে দাঁড়িয়ে থাকা বৃক্ষদের দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমান ভরা বর্ষা মৌসুমে। বনময় ঘুরে বেড়ানো যায় নৌকায় চড়ে। ডিঙিতে চড়ে বনের ভেতর ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পাবেন দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট। জলমগ্ন এই বনে সাপের আবাসটাই বেশি। বানর থাকলেও কম। তবে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঘুঘু, চিলসহ নানা জাতের পাখি দেখতে পাবেন।
রাতারগুল যেতে নগরীর আম্বরখানা থেকে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৮০ টাকা। এছাড়া অন্য গাড়ি রিজার্ভ নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে একটু বেশি। সেখানে নৌকায় ৬০০ টাকায় বনের ভেতর ঘুরে আসতে পারেন। লোভাছড়া চা-বাগান:
কানাইঘাট উপজেলা ১নং লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের লোভার পশ্চিম-উত্তর তীরে বাগিচা বাজার নামক স্থানে এর অবস্থান। সিলেট থেকে প্রথমে ৪০ টাকার বাস ভাড়া দিয়ে আসতে হবে কানাইঘাট উপজেলা সদর নৌকা ঘাটে। সেখান থেকে ২৫ টাকার ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া দিয়ে লোভা চা-বাগানে পৌঁছাতে পারবেন। অপরূপ লোভা নদী আর চা বাগানের কাছে ঝুলন্ত সেতু আপনার দৃষ্টিকে দেবে প্রশান্তি।
লালাখাল:
সবুজ পাহাড় মিশে গেছে জলে। পাশেই চা বাগান। সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার সন্নিকটে এর অবস্থান পান্না সবুজ জলের লালাখাল। শহর থেকে দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। বাস, মাইক্রোবাস, লেগুনা বা অন্য গাড়িতে যেতে পারেন সহজেই।
জাফলং:
জেলা সদর হতে দূরত্ব মাত্র ৫৬ কিলোমিটার। গাড়িতে যেতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টা। বাসভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা, মাইক্রোবাসে আসা-যাওয়ায় নেবে ৪/৫ হাজার টাকা।
ভোলাগঞ্জ:
শহর থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ৩৩ কিলোমিটার। ভোলাগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি কোনো যানবাহন চলে না। তাই পর্যটকরা সিলেট থেকে টুকেরবাজার পর্যন্ত যাত্রীবাহী বাস অথবা অটোরিকশাযোগে যাতায়াত করতে পারেন। টুকের বাজার থেকে ভোলাগঞ্জ পর্যন্তও রয়েছে একই বাহন। সেখানে পাথর কোয়ারি ও সাদা পাথর ঝরনা দেখে প্রাণ জুড়াবে যে কারো।
মালনীছড়া চা বাগান:
মালনীছড়া এবং লাক্কাতুড়া চা বাগান দুইটিই সিলেট শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট হতে গাড়িতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চা বাগানটি পাওয়া যাবে। গাড়িতে যেতে আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে ১০ মিনিট এর পথ। হাকালুকি হাওর:
ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা হতে প্রায় ১১ কিলোমিটার ঘিলাছড়া গ্রামের দিকে অবস্থিত। সিলেট হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে বাস/সিএনজি/লেগুনা করে মাইজগাঁও বাজারে যেতে হয়। সেখান থেকে পুনরায় সিএনজি যোগে ঘিলাছড়া জিরো পয়েন্টে গেলেই হাকালুকি হাওর ভ্রমণ করা যাবে। ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকার মতো খরচ হবে।
পাংথুমাই:
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রাম 'পাংথুমাই'। পেছনে মেঘালয় পাহাড় এবং বয়ে চলা পিয়াইন নদীর পাড়ে এই গ্রামটি সম্ভবত: বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামগুলোর একটি। এই গ্রামের পাশেই বিশাল ঝরনা 'বড়হিল'। সিলেট আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি ট্যাক্সি নিয়ে গোয়াইনঘাট বাজারে থানা সংলগ্ন বাজারে যাবেন। ভাড়া পড়বে আনুমানিক ৪০০-৫০০ টাকা । সেখান থেকে আবার ট্যাক্সি নিয়ে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন এর পাংথুমাই গ্রামে যাওয়া যায় । ভাড়া পড়বে আনুমানিক ১৫০-২০০ টাকা।
টাঙ্গুয়ার হাওর:
টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে। স্বচ্ছ টলমলে জলের নিচে দেখা যায় ঘাস। শীতকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা মেলে অতিথি পাখির।
এই ঈদে দেশের অভ্যন্তরে ঘুরে বেড়াতে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠ স্থান সিলেট। অন্য শহরের তুলনায় নিরাপদ শান্তির শহর হিসেবে সিলেটের রয়েছে খ্যাতি। যাতায়াত:
ঢাকার কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন বেশক’টি ট্রেন ছাড়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে করে সিলেটে যেতে সময় লাগবে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা। এছাড়া যাওয়া যাবে বাসেও। ঢাকা-সিলেট রুটে আছে অনেক বাস।
থাকবেন কোথায়:
সিলেটে রয়েছে বিভিন্ন মানের হোটেল, মোটেল, কটেজ। পর্যটকরা তাদের পছন্দের যেকোনো জায়গায় অবস্থান করতে পারেন। এছাড়া সামর্থ্য অনুযায়ী অল্প খরচের মধ্যে ভালো হোটেলে থাকতে পারবেন। আর খাবারের জন্য সিলেটে বিখ্যাত রেস্টুরেন্টগুলোতে অল্প খরচে পাবেন মজাদার খাবারের স্বাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৯
এনইউ/এএটি