বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় এবারের ঈদে দর্শনার্থী সমাগম নেই বললেই চলে খুলনার বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে। যানবাহন স্বল্পতা আর জলাবদ্ধতায় অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে ঈদ আনন্দ।
ঈদের দিন সোমবার (১২ আগস্ট) থেকে টানা তিন দিন থেমে থেমে ভারী ও হালকা বৃষ্টির কারণে মানুষের ভেস্তে গেছে ঈদের সব পরিকল্পনা। এবার ঘরে বসেই ঈদের ছুটিতে অলস সময় অনেকটা পানসেভাবে পার করেছেন খুলনাবাসী।
বৃষ্টিতে আটকাপড়া ব্যক্তিরা জানান, ঈদ ছাড়া দীর্ঘ ছুটি খুব একটা পাওয়া যায় না। এবারও লম্বা ছুটি হয়েছিল। আর এ কারণে বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তুতি কোনো অংশে কম ছিল না। টানা ছুটিতে পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে হুমড়ি খেয়ে পড়ার আনন্দ মাটি করে দিলো বৃষ্টি। আক্ষেপ করে নিরালা এলাকার সবুজ নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, শেষ শ্রাবণে এসে আষাঢ়ের ঢল নেমেছে খুলনাতে। যার কারণে ঈদের নামাজের জামাত ঈদগাহে হয়নি। মসজিদে পড়েছি নামাজ। টানা তাপদাহ আর তীব্র গরমের পর এ বৃষ্টি আমাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি নিয়ে এসেছে, সঙ্গে শেষ করেছে ঈদের ঘোরাঘুরির আনন্দ।
সোনাডাঙ্গা এলাকার সাইফুল নামে এক ব্যক্তি বলেন, বৃষ্টির কারণে বিনোদনকেন্দ্রে ঘোরাঘুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছি। গাড়িতে করে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়েও আটকে পড়েছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
তবে অনেকে বলছেন, বৃষ্টিতে একদিকে অসহ্য গরম কিছুটা কমেছে অন্যদিকে কোরবানির রক্ত ও বর্জ্য ধুয়ে-মুছে গেছে।
ঈদের মৌসুমে খুলনা প্রায় ফাঁকা হয়ে গেলেও, প্রতিবছর ঈদের সময় বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে থাকতো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। তবে এ বছরের চিত্র একেবারেই উল্টো। বৃষ্টিতে ভেস্তে যায় ঈদের ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা। প্রায় সব বিনোদনকেন্দ্র ফাঁকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রূপসা নদীর উপর খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু), শহীদ হাদিস পার্ক, জাতিসংঘ শিশু পার্ক, খালিশপুর ওয়ান্ডার ল্যান্ড শিশু পার্ক, গিলাতলা বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও পার্ক, গল্লামারীর লিনিয়ার পার্ক, ভৈরব নদের পাড়ের ৪ নম্বর ঘাট, চরের হাট নেভি গেট ও বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর অভ্যন্তরে ওয়াটার ভিউসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে এবারের ঈদুল আজহার তিন দিন অনেকটা দর্শনার্থী শূন্য গেছে। ঈদের দিন সকাল থেকেই বৃষ্টিতে বিড়ম্বনায় পড়ে নগরবাসী। যা অব্যাহত রয়েছে ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার (১৪ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত। বৃষ্টিতে উৎসব অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। পানিতে রাস্তাঘাট বেশকিছু এলাকায় তলিয়ে যাওয়ায় মাঝে মধ্যে বৃষ্টি থামলেও দুর্ভোগের কারণে রাস্তায় নামেনি অনেকে। খালিশপুর ওয়ান্ডার ল্যান্ড শিশু পার্কের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, শুধুমাত্র বৃষ্টির কারণেই বিনোদনকেন্দ্রে ঈদের সময়ের চিরাচরিত চাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এ বৃষ্টিতে বাড়তি মুনাফা থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হচ্ছে পার্ক মালিকদের। যে পরিমাণ মুনাফা হবার কথা ছিল, সে টার্গেট পূরণ হবে না। টানা তিন দিন পার্ক ফাঁকা বললেই চলে।
জাতিসংঘ শিশু পার্ক পরিবেশ উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় প্রতিটি ঈদে তিল ধারণের জায়গা থাকতো না এ পার্কে। সেখানে এবারের ঈদের তিন দিনই অনেকটা ফাঁকা গেছে পার্কটি। বৃষ্টি থাকায় নগরবাসী বাইরে বের হতে পারেননি এ কয়দিন।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, ঈদের দিন সোমবার খুলনায় ১৩ মিলিমিটার, ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার ৫৯ মিলিমিটার, ঈদের তৃতীয় দিন বুধবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। লঘুচাপের ফলে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার থেকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এমআরএম/আরবি/