সৈকতের পাশে ঝাউগাছের সারি আর শীতে পরিযায়ী পাখির বিচরণক্ষেত্র হয়ে ওঠা সোনার চর ঘিরে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় সার্ভে কাজে ব্যবহার করা হবে ড্রোন।
সোনার চরের বিশ হাজার ছাব্বিশ হেক্টর বিস্তৃত বনভূমিসহ ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতজুড়ে গড়ে তোলা হবে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র। এজন্য ‘প্রিপারেশন অব পায়রা-কুয়াকাটা- রিজিওনাল প্ল্যান’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার। এসব এলাকাজুড়ে বাস্তবায়ন করা হবে মহাপরিকল্পনা। এর আগে সমীক্ষা করা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। এ কাজে ৬৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় করবে সরকার। নগর উন্নয়ন অধিদফতর জানায়, নদী বা সমুদ্রই হচ্ছে এই চরে যাতায়াতের একমাত্র পথ। সোনার চর সূর্যের আলোতে সোনার মত চকচক করে। চরের প্রতিটি বালুকণা সোনার মত দেখায়। এছাড়া সোনার চরে আছে হরিণ, বানর, শুকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী। দেখা যায় প্রকৃতির নীলিমায় ভরা মনোরম দৃশ্য। শেষ বিকেল থেকে শুরু হয় লাল কাঁকড়ার ছোটাছুটি। রয়েছে সুন্দরী, কেওড়া, গড়াল, গর্জন, খইয়া বাবলা ও ছইলাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
চরকে এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে সমীক্ষা কাজ পরিচালনায় দুই কোটি টাকা মূল্যের কয়েকটি ড্রোন ব্যবহার করা হবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ড্রোন ইমেজ ক্রয় এবং ম্যাপ তৈরির কাজ করা হবে ১৫ হাজার একরজুড়ে। প্রকল্পের আওতায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রোন কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এক লাখ একর এলাকা ড্রোনের মাধ্যমে সার্ভে করা হবে। সার্ভে থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করেই মহাপরিকল্পনা নেওয়া হবে বলে জানায় নগর উন্নয়ন অধিদফতর। অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রকল্প এলাকাটি ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা, নদী ভাঙনসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ঝুঁকির মধ্যে অবস্থিত, যা উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব সহনীয় পরিকল্পিত ভূমি ব্যবহার নিশ্চিতকরণেই ড্রোন সার্ভে করা হবে। কৃষি জমি সুরক্ষা, পরিকল্পিত আধুনিক বন্দর নগরী ও বাস্তুসংস্থান সহায়ক গড়ে তোলার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে মহাপরিকল্পনা নিতে যাচ্ছে সরকার।
প্রকল্পের আওতায় সোনার চরকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্রের রূপ দেওয়া হবে। এজন্য সব ধরনের আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ করবে সরকার। কুয়াকাটা, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলা সমন্বয়ে পর্যটন জোন স্থাপনেও করা হবে ড্রোন সার্ভে। চলতি সময় থেকে শুরু করে ২০২১ সালের জুন মাসে সার্ভে কাজ সমাপ্ত হবে।
নগর উন্নয়ন অধিদফতরের সিনিয়র প্ল্যানার মাকসুদ হাসেম বাংলানিউজকে বলেন, এক্সক্লুসিভ পর্যটন কেন্দ্র হবে ‘সোনার চর’। শুধু সোনার চর নয় উপকূলীয় অনেক এলাকায় ট্যুরিস্ট জোন হবে। এসব এলাকায় ইকোপার্কসহ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে রূপ দেওয়া হবে। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সোনার চরে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এখানে যাতায়াতের সুব্যবস্থাসহ রাত্রীযাপনের জন্য নির্মাণ করা হবে আধুনিক অবকাঠামো।
তিনি আরো বলেন, আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণের আগে পুরো এলাকা সার্ভে করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন। সার্ভে সম্পন্ন হওয়ার পরই পুরো এলাকাজুড়ে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হবে। এরইমধেই আমরা ১৫ হাজার একর ড্রোন ইমেজ নিয়েছি, সামনে আরো কিছু ড্রোন ইমেজ নেওয়া হবে। সোনার চরকে ঘিরে গড়ে উঠতে পারে বিশ্বমানের ইকো ট্যুরিজম। তবে নদী বা সমুদ্র পথ ছাড়া যাতায়াতের কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
এমআইএস/জেডএস