দিনে দিনে ঝরণাটি স্থানীয় পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে জেলার বাইরে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছে দুর্গম এলাকায় অবস্থিত ঝরনাটি দেখতে।
তবে সাবধান, ঝরনাটি দেখতে হলে আপনাকে বেশ কষ্ট করতে হবে। মূল সড়ক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে আপনাকে কঠিন পথ মাড়িয়ে তবেই কাঙ্ক্ষিত ঝরনার কাছে পৌঁছাতে হবে।
ঝরনার কাছে পৌঁছানোর আগে পাহাড়ি ঝিরি (ছড়া) মাড়ানোর সময় সবুজ গাছপালা, দুর্গম পাহাড়, পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং ঝিরির মধ্যে সাদা নুড়ি পাথর আপনার মনকে মাতিয়ে তুলবে। তবে হাঁটার সময় আপনাকে অনেক সাবধান থাকতে হবে। কেননা পাথরের গায়ে শেওলা জমে থাকে। তাই যেকোন সময় শেওলার আস্তরে পিছলে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। এজন্য অভিজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে পথা চলা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
হাঁটার সময় পথিমধ্যে ছোট দু’টি ঝরনা চোখে পড়বে। ক্লান্তি দূর করতে প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে কিছুক্ষণ গা ভিজিয়ে নিতে পারেন। এরপর লক্ষ্য সুউচ্চ স্থানে অবস্থিত বড় ঝরনাটির দিকে। শত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে বড় ঝরনাটি দেখার পর আপনার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। এইবার মেতে উঠুন তারুণ্যের জোয়ারে।
ঝরনার শো শো শব্দের গানের সঙ্গে হারিয়ে যান স্বপ্নবিলাসী মন নিয়ে। হ্যাঁ বলে রাখা ভাল, বিকেলের মধ্যে ঝরনাস্থল ত্যাগ করতে হবে। কেননা এখানে পর্যটকদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই।
আনন্দের সঙ্গে মুখরোচক কিছু খেতে চাইলে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাবেন। সেখানে পর্যটকদের রুচির স্বাদ নিতে কোনো স্টল নেই। তবে দু’একজন ব্যক্তি উদ্যোগে স্বল্প পরিসরে ঝালমুড়ি এবং পেয়ারা বিক্রি করে। চাইলে কিনে খেতে পারেন সেইসব খাবার।
সরেজমিনে পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একদিকে ঝুঁকিপূর্ণ দুর্গম পথ অন্যদিকে রয়েছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের ভয়। তাই সাবধান না থাকলে আনন্দ আবার বেদনা হয়ে যেতে পারে। যদি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, নিরাপত্তা জোরদার, সৌন্দর্যবর্ধন, বিশ্রামাগার এবং খাবারের জন্য কয়েকটি রেস্টুরেন্ট তৈরি করা যেত তাহলে এই এলাকাটি হয়ে উঠবে পর্যটন সমৃদ্ধ। সরকার পাবে রাজস্ব। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
চট্টগ্রাম থেকে বেড়াতে আসা রহমত উল্লাহ খান জানান, আমরা এক দল বন্ধু অটোরিকশা নিয়ে অপরূপ ঝরনাটি দেখতে এসেছি। পাহাড়ি পথ মাড়ানোর কোনো অভ্যাস আমাদের নেই। তবুও মনের প্রশান্তি নিতে ঝুঁকি নিয়ে এখানে ছুটে এসেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সবকিছু ভাল লাগলেও এখানে মূল সমস্যা হলো নিরাপত্তার অভাব। নিরাপত্তা জোরদার করা গেলে এই ঝরনা দেখতে পর্যটকদের ঢল নামবে।
চট্টগ্রামের রাণিরহাট এলাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আহসান শামীম বলেন, আসার সময় যত কষ্ট পেয়েছি। এখানে আসার পর সব ভুলে গেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, বিশ্রামাগার এবং কয়েকটি খাবারের দোকান থাকলে এই এলাকাটি নতুন পর্যটন নগরী হিসেবে আলাদা সুখ্যাতি অর্জন করবে।
কীভাবে যাবেন:
রাঙামাটি শহর থেকে অটোরিকশা (সিএনজি) ভাড়া করে সোজা চলে যাবেন কলাবাগান নামক এলাকায়। যেকোন অটোরিকশা চালককে বললে নিয়ে যাবে। এজন্য পুরো অটো ভাড়া গুণতে হবে ২৫০ টাকা। এরপর ছোট্ট গ্রামের মেঠো পথ পাড়ি দিয়ে পাহাড়ি ঝিরি মাড়িয়ে চলে যাবেন অপরূপ ঝরনার কাছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১,২০১৯
আরএ