ধীরে ধীরে পূর্ব আকাশে উঁকি দিলো সূর্য। উদয়ের সময় পাহাড়ের বুক চিড়ে বরফে আচ্ছাদিত কাঞ্চনজঙ্ঘার গায়ে আলো ছড়ায় সূর্য।
টাইগার হিলে ভোরবেলা অনেকে ফ্লাস্কে করে গরম গরম ব্ল্যাক কফি বিক্রি করেন। বেশিরভাগ নারী বিক্রেতা। কনকনে শীতে কফির চুমুকে মন জুড়িয়ে যায়। সেই স্বাদ নিলাম সবাই মিলে। আরও কিছুক্ষণ ফটোশুটের পর রওনা হলাম।
নামার সময় দেখা মিললো পাহাড়ের ভাজে ভাজে প্রার্থনা লেখা বর্ণময় কাপড়ের পতাকা। দার্জিলিংয়ের আরও একটা চেনা বৈশিষ্ট্য এটি। মূলত বৌদ্ধধর্মের এই প্রেয়ার ফ্ল্যাগ পাহাড়ি এলাকার অন্যান্য ধর্মস্থানেও দেখা যায়৷
নেমে চলে গেলাম বাতাসিয়া লুপে। ঢোকার আগে খেয়ে নিলাম গোর্খাদের অন্যতম জনপ্রিয় খাবার মোমো। মোমো মানে পুলি পিঠার মতো করে বানানো ভেতরে মুরগি, সবজি, গরু ইত্যাদি থাকে। দার্জিলিংয়ের জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড এটি।
গোর্খাদের নেপাল প্রীতি আগে থেকে জানা। বাতাসিয়া লুপে ঢুকে মনে হলো একখণ্ড নেপাল। সেখান থেকেও দেখা মেলে উদিত কাঞ্চনজঙ্ঘা। সেখানে মাত্র ৫০ রুপিতে নিতে পারেন নেপালি বেশ। নেপালি ড্রেস পরার পর যে কাউকে চেনা দায়।
বাতাসিয়া লুপ ঘুরে ঘুম মনেস্ট্রি, ঘুম স্টেশন দেখে ফিরলাম হোটেলে। মল মার্কেটের পাশে ছিলো আমাদের হোটেল।
এর আগে রাত ৩টায় ঘুম ভাঙে। তবে বিছানা ছেড়ে উঠতে সময় লাগে আরও কিছুক্ষণ, মেলেনি গরম পানিও। রেডি হয়ে বের হলাম ৪টায়। কনকনে শীত উপেক্ষা করে টাইগার হিলের দিকে রওনা হলাম।
পৃথিবীর উচ্চতার দিক থেকে পর্বতমালায় ৩য় অবস্থানে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখতে। যেটির উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। যাওয়ার পথের বাঁকে বাঁকে পাহাড়ের বুকে ছুটে চললো গাড়ি, যেন উঁচু উঁচু পাহাড়ের বাঁক দিয়ে সাঁই সাঁই করে ছুটছে সেটি। জানালা দিয়ে রাস্তার পাশে গভীর খাদ দেখে ভয় ধরে যায়। তবে মনে হচ্ছিল, চালক যেন খেলনা গাড়ি চালাচ্ছে। শেষ হলো কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ দেখতে যাওয়া-আসার বর্ণনা।
এরপর সকাল ১০টার দিকে হোটেল চেকআউট করে জিপে সাইট সিয়িং উদ্দেশ্যে বেরুলাম। একে একে হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, রক গার্ডেন, জ্যুলজিক্যাল পার্ক, তেনজিং রক, চা বাগান, জাপানিজ টেম্পল, তিব্বত শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে রওনা হলাম শিলিগুড়ির দিকে।
আসার পথে কয়েকটি চা বাগান ঘুরে তিনটার মধ্যে মিরিক লেকে পৌঁছাই। সেখানে ঘুরে একটি বাঙালি রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ শেষে রওনা হয় শিলিগুড়ির দিকে। ফেরার পথে সড়কের ওপরের দেখা মেলে বানরের আধিপত্য। সন্ধ্যার আগে পৌঁছাই শিলিগুড়িতে। শিলিগুড়িতে রেল স্টেশনে আবারও দেখা মেলে দার্জিলিং ট্রয় ট্রেনের। খানিক ঘোরাঘুরি শেষে রাতের বাসে কলকাতা ফিরি।
রূপের রাণী দার্জিলিং দেখতে এর আগে কলকাতা হাওড়া রেল স্টেশন থেকে শতাব্দী একপ্রেস চেপে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ি পৌঁছাই। শিলিগুড়িতে রাত্রিযাপন শেষে সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে কালিম্পংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা। কালিম্পংয়ের ডেলো ভিউ পয়েন্ট, সায়েন্স সিটি, পাইন ভিউ নার্সারি, লাভার্স ভিউ পয়েন্ট, লামাহাত্তা দেখে দার্জিলিং হোটেলে পৌঁছে হোটেলে চেক ইন করে মল মার্কেটে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি।
কীভাবে যাবেন:
বাংলাদেশ থেকে দার্জিলিং রেলপথ, সড়কপথ আর আকাশপথে যাওয়া যায়। আকাশপথে যেতে ঢাকা বা চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা। সেখান থেকে শিলিগুড়ি।
একই পথ ট্রেনেও যেতে পারবেন, তখন হাওড়া কিংবা শিয়ালদহ থেকে নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ি। তবে সেখান থেকে জিপে চেপে যেতে হবে দার্জিলিং। লোকাল বাসও ছাড়ে সময়মতো। আবার ঢাকা থেকে শিলিগুড়ি বাস রয়েছে। রেলপথে যেতে হলে ঢাকা থেকে টিকিট করতে হবে।
কোথায় থাকবেন:
দার্জিলিং পর্যটন এলাকা। তাই থাকার জায়গার সমস্যা নেই। এখানে মাঝারি দাম থেকে অল্প দামের হোটেলও পাবেন আপনি। প্রতিটি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া পড়বে এক হাজার থেকে দুই হাজার রুপি। ডাবল আর তিন বেডের রুমের ভাড়া মানভেদে বাড়বে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৯
এসইউ/টিসি