জানা গেছে, ৮৬ দশমিক ৬২ একর জমির ওপর প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এ শালবনে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। শুধু জেলাবাসী নয়, সারাদেশ থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ঘুরতে আসেন এ শালবনে।
জেলার পর্যটন খাতে উন্নয়নের জন্য ২০১৫ সালে বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এক কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে বনটির প্রচীর, দর্শনার্থীদের জন্য ডিজিটাল বিশ্রামাগার ও শৌচাগার নির্মাণ করে সরকার। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর স্বয়ং প্রকল্প পরিচালক শামসুল আলম কাজ শেষে দৃষ্টিনন্দন এ শৌচাগারের উদ্বোধন করেন। কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার অজুহাতে উদ্বোধনের পরদিন থেকেই শৌচাগারে ঝুলছে তালা।
শুধু তাই নয়, দর্শনার্থী ও পিকনিকের জন্য আসা মানুষজন খাবার পানি সংগ্রহের জন্য বসানো টিউবয়েলটিও নেই। পড়ে আছে শুধু পাইপ। টিউবয়েলটি চালু করার কোনো উদ্যোগ না থাকলেও কর্তৃপক্ষের দাবি চুরি যাওয়ার ভয়ে এটি খুলে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে শালবনে গিয়ে শৌচাগারে তালা ঝুলে থাকতে দেখে বন বিভাগের অফিসে খোঁজ নিয়ে তালা খুললে বেরিয়ে আসে দুর্নীতির চিত্র। টয়লেটের প্যান বসানো হলেও তাতে দেওয়া হয়নি পয়ঃনিস্কাশন পাইপ। ফলে মল তো দূরের কথা পানিও নিচে নামে না। পানির ট্যাংক বসানো হলেও নেই মটর বা পানি উঠানোর ব্যবস্থা। বেসিন দেওয়া হলেও তা নড়বড়ে- নামসর্বস্ব। নামমাত্র ঢালাই দেওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে চুয়ে পড়ে পানি। খসে পড়ছে পলেস্তারা। সব মিলিয়ে অযত্নে পোকামাকড়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এ শৌচাগার।
পর্যটন শিল্পের বিকাশের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় দিন দিন নষ্ট হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন এ শালবনটি। দর্শনার্থী এসে শৌচগারের অব্যবস্থাপনায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এত বিশাল বন রক্ষায় এখানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র দু’জন বন প্রহরী।
জনবল না থাকায় অপরাধীদের অভয়াশ্রমে পরিণত হচ্ছে শালবন। প্রায় প্রতিদিন ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে সংঘবদ্ধ চক্র কেড়ে নিচ্ছে মোবাইল ফোনসহ নগদ টাকা। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় নিরাপদ মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে শালবন। এসব কারণে দিন দিন পর্যটক হারাচ্ছে এই ইকো-ট্যুরিজম পার্কটি।
শালবনে ঘুরতে আসা মিম-সাগর, দিনা-মাসুদ, মেরী-সাজু, ও টুনটুনি বাংলানিউজকে বলেন, বিশাল বিশাল শাল ও বেতের ঝাউ গাছ দেখতে তথা প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে শালবনে এসেছি। কিন্তু শৌচাগার থাকলেও তাতে তালা ঝুলছে। ছেলেরা যত্রতত্র প্রাকৃতিক কাজ সেরে নিলেও বেশ বিপাকে পড়েতে হয় নারী দর্শনার্থীদের। নেই পর্যপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও খাবারের দোকান। সরকার উদ্যোগ নিলে এটি পর্যটন শিল্পে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে বলে দাবি করেন তারা।
শালবনের প্রহরী জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, শালবনে যোগাদানের ৮ মাস ধরে দেখছি শৌচাগারে তালা। টিউবওয়েল চুরি যাওয়ার ভয়ে খুলে রাখা হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুরতে এলে কোয়াটারের শৌচাগার ব্যবহার করেন। তারা দু’জন প্রহরী পালাক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।
বন বিভাগের লালমনিরহাট রেঞ্জের বন কর্মকর্তা নুরনবী মোবাইল ফোনে বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুতের সংযোগ না থাকায় শৌচাগার বন্ধ রাখা হয়েছে। জনবল সংকট থাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না হলেও সন্ত্রাসী বা মাদক বিক্রেতাদের আনাগোনা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
আরএ