জাতিসংঘ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে যে ১৭টি লক্ষ্যের কথা বলেছে, তার মধ্যে ৮, ১২ ও ১৪ নম্বর সরাসরি পর্যটনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাকি ১৪টিতেও কোনো না কোনোভাবে পর্যটনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
পর্যটন খাতে পাথরঘাটা দারুণ সম্ভাবনাময়
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলা। বিশ্ব-ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনঘেঁষা বলেশ্বর ও বিষখালী নদীর মধ্যবর্তী পাথরঘাটা উপজেলা। এই উপজেলার দক্ষিণে রয়েছে বিস্তৃত বঙ্গোপসাগর। পূর্ব ও পশ্চিমে রয়েছে সুন্দরবনসহ সবুজে বেষ্টিত বিশাল অঞ্চল।
সুন্দরবন ও সবুজে ঢাকা অঞ্চলটুকু পাথরঘাটাকে আগলে রেখেছে। পাথরঘাটায় মৎস্য খাতের পাশাপাশি পর্যটন খাতেও দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এঅঞ্চলের বিষখালী ও বলেশ্বর তীরে এখন অসংখ্য পর্যটন কেন্দ্রের হাতছানি।
শহরের যান্ত্রিক-জীবনে হাঁসফাস করতে থাকা মানুষের জন্য একটু বিশ্রাম বা সতেজতার ছোঁয়ার বিকল্প নেই। পর্যটক, ভ্রমণপিপাসু কিংবা প্রকৃতিপ্রেমী—যাই বলুন, এসব দর্শনীয় স্থানগুলো সবারই মন কাড়বে। এমনকি অদূরে বলেশ্বর ও বিষখালীর বুকে জেগে ওঠা দ্বীপ-চরে নদীর উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়েও অনেকে অজানার খোঁজ নিতে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখা মেলে মাঝি-মল্লা ও জেলেদের জীবনের হালচিত্র। দ্বীপ-চরের সৌন্দর্যও নজর কাড়ার মতো। মনোমুগ্ধকর এ উপকূলে একটু ভোগান্তি সহ্য করে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে পারলেই পাওয়া যায় শান্তির পরশ। নয়নাভিরাম এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ যে কেউ!
কোথাও ধু ধু চরাঞ্চল। কোথাও মন কেড়ে নেওয়া সবুজ-তেপান্তর। কোথাও ঝাউবন ও নারকেল-সুপারির বাগান। ইলিশ ধরার ট্রলার ও নৌকার পাল এবং নদীর দুইপাড়ে অসংখ্য পাখির কিচিরমিচির কলরব। তীরে রয়েছে সবুজাভ সারি সারি কেওড়া গাছ। দুই নদীর মাঝে বিচরণ করলেই দেখা মেলে বিহঙ্গদ্বীপ ও হরিণঘাটা এবং সুন্দরবনের দৃশ্য। ইলিশ শিকার করতে যাওয়া জেলেদের নদীর সঙ্গে লড়াইয়ের দৃশ্যও চোখে পড়ে। এসব দৃশ্য পর্যটকদের হৃদয়ে দোলা দেয়।
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে পাথরঘাটা
সুন্দরবনকে ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আরও বেশি আকৃষ্ট করতে পারে ক্যাবল কার; এতে টপ ভিউ থেকে সুন্দরবন, বিহঙ্গদ্বীপ, হরিণঘাটাসহ বনের সৌন্দর্যের পাশাপাশি বাঘ, হরিণ ও বানরের মতো প্রাণী দেখার সুযোগ পাবেন পর্যটকরা। এছাড়াও পর্যটকদের বাড়তি আকৃষ্ট করবে সুন্দরবন ও পাথরঘাটার দুইদিকে কেওড়া গাছের সবুজে ছাওয়া তীর ও জেলেদের সংগ্রামুমখর নৌ-যাত্রা। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে।
সুন্দরবন ঘিরে ক্যাবল কার চালু সময়ের দাবি
ক্যাবল কার চালু করা গেলে পর্যটনশিল্পে নতুনমাত্রা যোগ হবে। এতে করে দেশি-বিদেশি সৌন্দর্যপিয়াসী পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হবে সুন্দরবন। পাথরঘাটা থেকে সুন্দরবন খুব কাছে হওয়ায় পাথরঘাটা-বিহঙ্গদ্বীপ হয়ে সুন্দরবন—নতুন পর্যটন জোন হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্যটন খাত আরও গতিশীল হবে। বর্তমানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুন্দরবন যেতে খুলনা হয়ে বাগেরহাট—একমাত্র পথ দিয়ে যেতে হচ্ছে। পাথরঘাটা থেকে বিহঙ্গদ্বীপ হয়ে সুন্দরবনের পুর্বাঞ্চলের সঙ্গে নতুন সংযোগ তৈরি হলে পর্যটকদের জন্য সুবিধাজনক হবে। এতে পর্যটকদের খরচও কমবে ও যাতায়াতেও সহজতা আসবে।
পর্যটক ও আইনজীবী মনোজ কুমার কির্ত্তনিয়া এবং রফিকুল ইসলাম কাকন বাংলানিউজকে বলেন, পাথরঘাটা থেকে বিহঙ্গদ্বীপ হয়ে সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চল ক্যাবল কার হলে পর্যটন খাতে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। কার্যক্রমটি দ্রুত হাতে নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
বনবিভাগের পটুয়াখালী উপকূলীয় বনকেন্দ্রের ডিএফও মো.আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এবিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। তবে সরকার যদি পাথরঘাটার বিহঙ্গদ্বীপ হয়ে সুন্দরবনের পূর্বাঞ্চলে আলাদা কেন্দ্র তৈরি হলে, সরকারের বাড়তি রাজস্ব আদায় বাড়বে এবং পর্যটকদের যাতায়াত খরচ কমবে।
জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য নাদিরা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে সুন্দরবনের সঙ্গে পাথরঘাটাকে যুক্ত করা যেতে পারে। এজন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সম্ভাব্যতা যাচাই ও সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি রয়েছে।
বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাছানুর রহমান রিমন বাংলানিউজকে বলেন, সোনারচর ঘিরে সরকারের মহাপরিকল্পার সঙ্গে এক্সক্লুসিভ পর্যটন জোনের আওতায় পাথরঘাটার পর্যটন কেন্দ্রগুলো ওই আদলে করা হলে, শুধু দেশেরই নয় বিদেশি পর্যটকরাও আসবে। আর পাথরঘাটা যেহেতু মৎস্য উৎপাদন ও পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাময় জায়গা, তাই সুন্দরবন-পাথরঘাটা—উভয়টি সংযুক্ত করা গেলে পর্যটনখাতে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
এমএমইউ