দু’দিন একরাত ওল্ড কোয়ার্টারে অবস্থানকালে এর স্ট্রিট লাইফের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা হয়েছে আমাদের। সাধারণ পর্যটকদের পাশাপাশি ব্যাকপ্যাকার্স ট্রাভেলারদের কাছেও বেশ জনপ্রিয় ওল্ড কোয়ার্টার।
ওল্ড কোয়ার্টারের অন্যতম আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে ওল্ড স্ট্রিটগুলো। আমাদের পুরান ঢাকার সড়কগুলোর মতোই অনেকটা সরু অলিগলি এখানে। অতীতের মতো এখানে কিছু সড়ক আছে যেগুলোর সবগুলো দোকান একটি নির্দিষ্ট ধরনের পণ্য বিক্রি করে থাকে। যেমন এখানকার জুয়েলারি শপ স্ট্রিট, কফি স্ট্রিট অথবা বিয়ার শপ ইত্যাদি। এখানকার কফি স্ট্রিটে ঘুরলে ভিয়েতনামে উৎপাদিত অথেনটিক কফি বিন থেকে হাতে ভাঙিয়ে কফি কিনতে পারবেন আপনি। বলে রাখা ভালো, বিশ্বের কফি উৎপাদন ও রপ্তানিতে ব্রাজিলের পরের দেশেই ভিয়েতনাম। এখানকার রোবাস্টা কফি বিশ্বের বেশ বিখ্যাত। এছাড়া আছে সুভ্যেনির শপগুলো। বিদেশ থেকে দেশে এলে অনেকেই আবদার করেন, তাদের জন্য কী আনলেন। খুবই কম দামে সুভ্যেনির কিনতে পারবেন এসব দোকানগুলো থেকে। একটি সুভ্যেনির শপে আমরা পেয়েছিলাম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাও। আর একটু ঘুরে ফিরে খুঁজে দেখলে পাবেন হাতে বোনা টাইয়ের কারখানা ও দোকান। শপ হাউজ
ওল্ড কোয়ার্টারের অন্যতম আকর্ষণ ‘শপ হাউজ’। একটু বুঝিয়ে বললে, একটি দো’তিনতলা বাড়ির মালিক নিচের অংশে করেছেন রেস্টুরেন্ট বা অন্য অংশে পণ্যের দোকান। তবে রেস্টুরেন্ট, কফি শপই বেশি। আর ওপরের ফ্লোরগুলোতে পরিবার নিয়ে থাকেন মালিকপক্ষ। পুরান ঢাকার মতোই বেশকিছু পুরনো ভবন দেখা যাবে এই শপ হাউজের আদলে। বেশিরভাগ ভবনই ফ্রেঞ্চদের রেখে যাওয়া। লি-সাম্রাজ্যের সময়ে নির্মাণ করা পুরাতন ভবন আছে এখানে। পর্যটকরা এসব বাড়ি ঘুরে দেখার পাশাপাশি সুলভ মূল্যে রেস্টুরেন্টে খানাপিনা করতে পাবেন। পাশাপাশি দোকানগুলো থেকে সুভ্যেনির কিনতে পাবেন। একটু দূর থেকে একেকটি সড়কে ফ্রেঞ্চ আমলের এসব ভবনের দিকে তাকালে ছবির থেকে কোনো অংশে কম সুন্দর মনে হবে না। অবশ্য এমন শপ হাউজ সংস্কৃতি হা লং এও দেখেছি আমরা। স্ট্রিট লাইফ
ওল্ড কোয়ার্টারের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে এর স্ট্রিট লাইফ। ওল্ড কোয়ার্টার হ্যানয়ের সব থেকে জনবহুল একটি এলাকা। এখানকার সড়কগুলোও থাকে মানুষের দখলে। আর দেখবেন প্রচুর মোটর ও বাইসাইকেল। এখানে ফুটপাত দখল করে থাকে খাবারের দোকানের পসরা। ছোট ছোট টেবিল-টুল দেখে ভাববেন না সেগুলো শিশুদের জন্য রাখা বরং সেগুলো প্রাপ্তবয়স্কদেরই। ওল্ড কোয়ার্টারে সব থেকে বেশি পাওয়া যাবে খাবারের দোকান ও ভ্রাম্যমাণ দোকানের কার্ট। রীতিমতো সিরিয়াল পাওয়া লাগে এসব দোকানে খেতে গেলে।
ওল্ড কোয়ার্টারে সপ্তাহে তিনদিন শুক্র,শনি ও রোববার সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। সড়কগুলো পথচারী-শিশুদের দখলে চলে যায়। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে শিশুরা দারুণ কিছু সময় কাটায় এখানে। এ সময়ে সড়কে গাড়ি চালায় শিশুরা, খেলনা গাড়ি যার রিমোট থাকে অভিভাবকদের হাতে। বৃদ্ধ ও নারীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা– নাইট মার্কেট। ওল্ড কোয়ার্টারের নাইট মার্কেট বেশ জনপ্রিয়। সপ্তাহের ওই তিনদিনই সড়কে বসে নাইট মার্কেট। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা অবধি কেনাবেচা হয় মার্কেটটিতে। ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের পদচারণায় বাণিজ্য পরিণত হয় উৎসবে। ব্যাকপ্যাকার্স ট্রাভেলিং
বিশ্বজুড়ে ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ব্যাকপ্যাকার্স ট্রাভেলিং। আমার ভাষায় বললে- ভবঘুরে পর্যটক। এক জায়গায় বেশিদিন থাকেন না ব্যাকপ্যাকার্স ট্রাভেলার্সরা। তবে, সবমিলিয়ে প্রতিবার দীর্ঘ একেকটি ট্যুর দেন তারা। মূলত এরা পিঠের একটি ব্যাগ নিয়েই বেরিয়ে পড়েন ভ্রমণে। খুব সস্তায় ভ্রমণ করাই তাদের উদ্দেশ্য। যেখানেই রাত সেখানেই কাত – এই বহুল প্রচলিত প্রবচনটির মতন অবস্থা। আর এদের বেশ ভালোভাবেই আকৃষ্ট করতে পেরেছে হ্যানয়ের ওল্ড কোয়ার্টার।
চেক রিপাবলিক থেকে আগত সেখানকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভেরোনিকা মিক্লাসোভা বলেন, পর্যটনের জন্য ভিয়েতনামের অনেক প্রশংসা শুনেছি। তাই এবারের শীতের ছুটি পেয়েই ব্যাগ চেপে বেরিয়ে পড়েছি। এখন পর্যন্ত দারুণ উপভোগ করছি ভিয়েতনাম। বিশেষ করে হ্যানয়ের এই ওল্ড কোয়ার্টার।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯
এসএইচএস/এএটি
***হ্যানয় ওল্ড কোয়ার্টার-ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশেল