ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

পাহাড়ঘেরা বগালেকে কাটুক ছুটি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
পাহাড়ঘেরা বগালেকে কাটুক ছুটি নজরকড়া বগালেক। ছবি: আসিফ আজিজ

বান্দরবান: দেশের তিন পার্বত্য জেলার সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে বান্দরবান। উচ্চতম পাহাড়, অগণিত ঝরনা, মেঘ, নদী, ঝিরি- কী নেই এখানে! পেঁজাতুলো মেঘ কিংবা পাহাড়ের বুক চিরে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। ট্রেকারদের জন্যও স্বর্গ। পাহাড়ি ফল বা খাবারেরও কোনো তুলনা নেই।

সেই বান্দরবানের এক রহস্যময় ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্থান বগালেক। রহস্যময় এ কারণে যে, বগালেকের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে নানারকম উপকথা, কিংবদন্তি কাহিনি, যা সেখানে গেলেই শুনতে পাবেন পাহাড়িদের মুখে।

ডিসেম্বর মাসে ছুটি কাটানোর দারুণ একটি জায়গা বগালেক।

বগাকাইন হ্রদ বা বগা হ্রদ (স্থানীয় নাম বগালেক) বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত একটি স্বাদু পানির হ্রদ। বান্দরবান থেকে ৭০ কিমি দূরে রুমা উপজেলায় কেওক্রাডাংয়ের কোলঘেঁষে এর অবস্থান। ফানেল বা চোঙা আকৃতির ছোট পাহাড়ের  চূড়ায় বগালেকের অদ্ভুত গঠন অনেকটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো। নজরকড়া বগালেক।  ছবি: আসিফ আজিজসকাল, বিকেল, রাত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময় বগালেকের দৃশ্য ভিন্ন ভিন্ন। তবে রাতের বগালেক এক অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি করে। পূর্ণিমায় এক আর অমাবস্যায় আরেক রূপ। অমাবস্যায় হারিয়ে যাবেন তারার রাজ্যে। আকাশভরা তারার মেলার নিচে বসে বগালেকের অপূর্ব মনোরম সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করার অনুভূতিই আলাদা।

বগালেকে যাবেন আর বগালেকের পানিতে দাপাদাপি করবেন না তা কি হয়। কিন্তু সব সময় মনে রাখতে হবে জীবনের মূল্য সবচেয়ে বেশি। সাঁতারে পারদর্শী হলেও বেশি দূরে না যাওয়াই শ্রেয়। লেকের নিচে আছে পাথর। পাথরে আঘাত লেগে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই সাবধান। যারা সাঁতার পারেন না কিন্তু পানিতে নামতে চান তারা চাইলে পাড়ের কাছে হাঁটু পানিতে নেমে গোসল করে নিতে পারেন। নজরকড়া বগালেক।  ছবি: আসিফ আজিজবান্দরবান থেকে বগালেক যেতে হলে ভাড়া নিতে হবে ফোর হুইল ড্রাইভ গাড়ি। এই গাড়িতে ৮ থেকে ১২ জন অনায়াসে বসা যায়। আর ভাড়া ৮ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিলে দেখা মেলে আকর্ষণীয় বগালেক। পাহাড়ের উপর সুন্দর এ লেক দেখে পর্যটকরা বিমোহিত হন।

পৌঁছেই বগালেক আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। তারপর গাইড থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। রুমা থেকে গাইড ভাড়া পাওয়া যায়। দৈনিক গাইড প্রতি পরিশোধ করতে হয় ৬শ টাকা। বেশ কিছু রিসোর্ট আছে বগালেকে। বগালেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, কিন্তু মোবাইল বা ক্যামেরার ব্যাটারি টাকা দিয়ে চার্জ দেওয়া যায় বিশেষ ব্যবস্থায়। বগালেক ঘেঁষা পাহাড় ।  ছবি: আসিফ আজিজবগালেকের আশপাশে রয়েছে একটি ছোট গ্রাম। আর এই গ্রামে বসবাস করে বম সম্প্রদায়ের ৩০টি পরিবার। জনসংখ্যা প্রায় ১৫০ জন। এই বম সম্প্রদায়ের জনসাধারণ অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ। যে কোনো একটি বম সম্প্রদায়ের বাসায় রাতযাপন করা যায়। জনপ্রতি খরচ হয় মাত্র ১৫০ টাকা। আর খাওয়ার হিসাব করলে বম সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোতে অর্ডার করলেই মিলবে সুস্বাদু খাওয়ার।

বগালেকে সবচেয়ে পুরনো এক এনজিও শিক্ষক সি আম বম। তিনি তার পরিশ্রম আর মেধায় এই বগালেককে সুন্দর করে তুলেছেন। এক পরিবার থেকে এখন বগালেকে ৩০ বম পরিবারের অবস্থান। সি আম বম এর রয়েছে একটি কটেজ, আর এই কটেজে তিনি অতিথিদের আপ্যায়ন যেমন তার ব্যবহার, তেমনি সুস্বাদু তার হাতের রান্না।

ঢাকা থেকে বগালেকে বেড়াতে আসা বাবুল আহম্মেদ বলেন, বান্দরবানের রুমা উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর বগালেক। এই লেক শুধু একটি লেকই নয়, এটি যেন একটি শিক্ষালয়। পাহাড়ের দীর্ঘ দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পর্যটকদের এই লেকে আসতে হয়। আর এই লেকের পরম বাতাসে মন জুড়িয়ে যায় সবার। সি আম বম’র কটেজ।  ছবি: বাংলানিউজকুমিল্লা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক জান্নাতুল মাওয়া বলেন, বগালেক খুবই সুন্দর একটি পর্যটন স্পট। আশপাশের এলাকাগুলো আরও সুন্দর। এখানে বসবাসরত প্রায় প্রতিটি পরিবারে রাতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা।

বগালেককে ঘিরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

রুমা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. শামসুল আলম বলেন, বগালেকে প্রতিদিনই অসংখ্য পর্যটক আসেন। অনেকেই এর সৌন্দর্য দেখে বিমোহিত হয়ে রাতে অবস্থান করেন। আবার অনেক পর্যটক সারাদিন বিনোদন শেষে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যান।

তিনি বলেন, বগালেকের পাড় কেন্দ্র করে আমরা কিছুই করতে চাই না। আমরা এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেরকম আছে সেরকম থাকতে দিতে চাই। তবে বগালেকের পাশে বম সম্প্রদায়ের যে পাড়া রয়েছে সেখানে আরও উন্নতমানের কটেজ নির্মাণ করা হলে এখানে পর্যটকরা বেশি সময় অবস্থান করবে বলে আশাবাদী। এখানে নিরাপত্তার কোনো সমস্যা নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।