রিকশা, সাইকেল বা মোটরসাইকেল ছাড়া চলাচলের উপায় নেই জামগড়ার এ সড়কটিতে। সড়কের প্রায় দুইশ’ মিটার জুড়ে ড্রেনের স্ল্যাব ভেঙে বিভিন্ন কল-কারখানা থেকে আসা বিষাক্ত পানি জমে আছে হাঁটুসমান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে জামগড়া-তেঁতুলতলা সড়কটির এমন বেহাল দশা। পাশে ফ্যান্টাসি কিংডমের মতো একটি বড় বিনোদন কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও এটি মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। এছাড়া এলাকার নয়নজুলি খাল দখল হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন কল-কারখানার বিষাক্ত ও নোংরা পানি উঠে আসে সড়কের ওপর। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। একারণে দ্রুত সড়ক ও ড্রেন মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক থেকে শুরু হওয়া এ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। সড়কের প্রায় দুইশ’ মিটারের পথ পার হতে রিকশাই পথচারীদের একমাত্র ভরসা। প্রতিটি রিকশা সারিবদ্ধভাবে পানির ওপর দিয়ে যাচ্ছে। একপাশে যাওয়া শেষ হলে অন্যপাশের দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা যাচ্ছে। দু’পাশে দুই লাইনম্যান প্রতি রিকশা থেকে টাকা তুলছেন। একটু ভুল হলেই ড্রেনের স্ল্যাব থেকে পড়ে উল্টে যাবে রিকশা। এমন ঝুঁকির মধ্যেই দিনরাত চলাচল করতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
দেখা যায়, সড়কের একপাশে ফ্যান্টাসি কিংডমের বড় দেওয়াল, অন্যপাশে সাধারণ ঘর ও মসজিদ। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে, মুসল্লিরা নামাজ পড়তে যাওয়ার সময়ও শরীরে লাগে এই নোংরা পানি।
সড়কের লাইনম্যান আলী বাংলানিউজকে জানান, বেশ কিছুদিন সড়কটি সবধরনের যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ছিল। তারা দু’জন ড্রেনের দু’টি ভাঙা স্ল্যাব ঠিক করে কোনোমতে রিকশা চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন। এজন্য তারা প্রতি রিকশা থেকে ৫-১০ টাকা নেন।
বিষাক্ত এই পানি কোথা থেকে আসে জানতে চাইলে তিনি জানান, ড্রেন দিয়ে বিভিন্ন পোশাক কারখানার পানি আসে। শুধু তাই নয়, ফ্যান্টাসি কিংডমের পানিও আসে এখানে। ছোট ড্রেন দিয়ে বেশি পানি যেতে পারে না, একারণে নোংরা পানি সড়কে উঠে আসে।
এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সকাল-বিকেল যাতায়াত করেন আল-কামরান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে যাই। রিকশা ছাড়া এখান থেকে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এর কোনো বিকল্প সড়কও নেই যে অন্য পথ দিয়ে যাবো। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই এই পথ দিয়ে যেতে হয়। সড়কটি দুই বছর আগেও ভাঙা ছিল, ঠিক করার পর কিছুদিন ভালো থাকলে এখন আবার একই অবস্থা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, সড়কটি সারাবছরই বিষাক্ত পানিতে ডুবে থাকে। একারণে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার কষ্টে জীবনযাপন করছি। এখানে জামগড়ার বিভিন্ন কারখানার বিষাক্ত পানি এসে জমে থাকে, হাঁটাচলা করা তো দূরের কথা, রিকশা দিয়ে চলতেও ভয় হয়। একটু এদিক-ওদিক হলেই রিকশাটা ড্রেনে পড়ে যাবে। আর এই বিষাক্ত পানির কারণে রোগবালাই সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি দেখার আহবান জানাচ্ছি।
খাল দখলের বিষয়ে আশুলিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বাংলানিউজকে বলেন, নয়নজুলি খালের কিছু অংশ ফ্যান্টাসি কিংডম দখল করে স্থাপনা করেছে। আমরা খালের পানিপ্রবাহ ঠিক রাখতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের দু’পাশের মুখ সচল রাখতে বলেছি। বিধি মোতাবেক যদি কোনো কার্যক্রম না হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে ফ্যান্টাসি কিংডমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেজর (অব.) মনজুরুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বেশ কয়েকবার সময় দিয়েও দেখা করেননি। পরে ফোন দেওয়া হলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে সাভার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান পরামানিক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে এই সড়ক নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে সড়কের স্কিন দিয়ে অনুমোদন হয়ে টেন্ডারে আছে। আগামী মাসে আমরা সড়কটি মেরামতে কাজ শুরু করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২০
একে