বরিশাল: করোনাকালে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভ্রমণ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছে। তাদের এ বিঘ্নতায় বিপাকে পড়েন পর্যটননির্ভর ব্যবসায়ীসহ উপার্জনশীলরা।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলারর সাতলা ও আগৈলঝড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের শাপলার বিল ঘিরেও শুরু হয়েছে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের আনাগোনা। ফলে আবার প্রাণ ফিরেছে সাতলা-বাগধার এ শাপলার বিলে।
বিলে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানোর সঙ্গে জড়িত নৌকার মাঝিরা বলেন, করোনার কারণে মৌসুমের শুরুর দিকে লাল, বেগুনি ও সাদা শাপলার এ বিলে দর্শনার্থী কম হলেও এখন প্রচুর পর্যটক আসছেন।
পর্যটকনির্ভর স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, বিভাগীয় সদর বরিশাল কিংবা উপজেলা সদর উজিরপুর থেকে সাতলার বিলে আসা সড়কটির বেহাল দশার কারণে গতবছর থেকে পর্যটকের যাতায়াত অনেক কম ছিল। তারওপর এবার মহামারি করোনার কারণে শাপলার মৌসুমের শুরুতে পর্যকটকদের যাতায়াত একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আশপাশের উজিরপুর ও আগৈলঝাড়ার কয়েক উপজেলার ব্যবসায়ীসহ পর্যটকনির্ভর শ্রমজীবীরা বিপাকে পড়ে যান। সম্প্রতি পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ায় হাসি ফুটেছে শ্রমজীবী ও ব্যবসায়ীদের মুখে।
সরকারি বরিশাল কলেজের ছাত্র ইফতেখার মাহামুদ জানান, তিনি কয়েকদিন আগে যখন পর্যটক ছিল না, তখন সাতলায় গিয়েছিলেন। তখন হারতা বাজারের পর থেকে সাতলা পর্যন্ত বিলের রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য নৌকার মাঝি বসে থাকতে দেখেছেন। যারা সড়ক দিয়ে কোনো যানবাহনে অপরিচিত যাত্রী গেলেই নৌকায় শাপলার বিলে ঘুরে বেড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শাপলার বিল নিয়ে কাজ করা পর্যটক ও ফটোগ্রাফার আরিফুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির কারণে শুরুতে শাপলার বিলে পর্যটক ছিল না বললেই চলে। তখন সবারই খারাপ অবস্থা গেছে। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকা মানুষগুলোও বাইরে বের হয়েছে। অনেকেই দীর্ঘদিন একঘেঁয়েমিভাবে চলা জীবনের ছন্দের পতন ঘটাতে ঘুরে বেড়াতে চাচ্ছেন। ফলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে পর্যটননির্ভর মানুষগুলোর জীবন-জীবিকার চাকা।
তিনি বলেন, এখানকার কোনো নৌকাতেই তিন থেকে পাঁচজনের বেশি চড়া সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী এমনিতেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হচ্ছে সবাইকে। আর মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার যার যার কাছে থাকে। ফলে বিলে ঘুরে বেড়ানো অন্য জায়গা থেকেই অনেকটাই নিরাপদ।
তবে তার মতে, পর্যটননির্ভর এ এলাকার সড়ক সংস্কারের পাশাপাশি বিল রক্ষায় সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষ যে যার মতো করে চলেছেন। তবে সম্প্রতি নানান উদ্যোগে এ বিলাঞ্চলে বিশাল খাসজমি থাকার বিষয়টি সামনে বেরিয়ে এসেছে। এজন্য কেউ কেউ শাপলা নষ্ট করতে তা কেটে দিচ্ছেন, আবার কেউ অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে বিলের মধ্যেই মাছ চাষ করছেন। এ কারণে বিলে শাপলার পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আর এর মধ্য দিয়ে পর্যটকদের আনাগোনা যেমন কমে যাবে, তেমনি প্রশাসনের কর্মকর্তারাও বিল ও শাপলা সংরক্ষণ নিয়ে আর উদ্যোগী হবে না।
টয়লেটসহ থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে শাপলার বিল পর্যটনবান্ধব করার দাবিও রয়েছে স্থানীয় পর্যটকদের। যদিও এলাকাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে রাস্তাঘাটের সংস্কারসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান।
তিনি জানান, শাপলার বিলকে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে পর্যটন করপোরেশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে।
বরিশালের এ বিলাঞ্চলে ঘিরে আষাঢ়ের শুরুতে প্রাকৃতিকভাবে বিলে ফুটে ওঠে হাজার হাজার শাপলা। শ্রাবণ থেকে ফুটতে শুরু করে লাল, সাদা আর বেগুনি শাপলা ফুল। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বিল। নৌকায় বিলের পানিতে ঘুরে বেড়িয়ে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটকরা।
ছুটির দিনে জমজমাট হয়ে ওঠে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই শাপলার বিলে যেতে হয় খুব সকালে। কারণ সূর্য ওঠার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফুলগুলো ধীরে ধীরে বুজে যায়। এ কারণে শাপলা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগের আসল সময় সূর্য প্রখর হওয়ার আগ পর্যন্ত। সড়কপথে বরিশাল সদর এবং উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া উপজেলা সদর থেকে বিভিন্ন যানবাহনে যাওয়া যায় এ বিলে। বিলে ঘোরার জন্য রয়েছে আলাদাভাবে পর্যটকনির্ভর নৌকার ব্যবস্থা। যদিও নৌকাগুলোতে তিন থেকে পাঁচজনের বেশি বসার ব্যবস্থা থাকে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২০
এমএস/এএ