করোনা মহামারি অনেক কিছু নিয়ে গেছে, আবার অনেক কিছু দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। স্বাবলম্বী হওয়ার কৌশল শিখিয়ে গেছে।
করোনাকালীন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আকাশসহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের কারণে পর্যটন ভিসা, বিজনেস ভিসা এমনকি মেডিক্যাল ভিসাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। যার ফলে শতভাগ এয়ারক্রাফট গ্রাউন্ডে স্থান করে নেয়। এয়ারক্রাফট আবিষ্কারের পর থেকে সারাবিশ্ব এ ধরনের পরিস্থিতি কখনও দেখেনি। নিকট ভবিষ্যতে আর কখনও দেখবে কিনা তাও বলা মুশকিল। ‘নো বর্ডার কান্ট্রি’র ধারণা ছিলো মনুষ্য সৃষ্ট, কিন্তু এর প্রয়োগ আর বাস্তবতা দেখিয়ে দিয়েছে অদৃশ্য শক্তির করোনা ভাইরাস, যা এ যাবতকালের মধ্যে ভয়াবহতার চূড়ান্ত। এক সঙ্গে সারাবিশ্বকে কাঁপিয়ে বীরদর্পে এখনও বিভীষিকাময় হয়ে পৃথিবীতে বর্তমান।
সারা বিশ্বের সব এয়ারলাইন্সের হাজার হাজার এয়ারক্রাফট স্থবির হয়ে পড়ায় এর সঙ্গে যুক্ত হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, পর্যটনের সঙ্গে সম্পর্কিত সব ধরনের ব্যবসা, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর, সর্বোপরি এভিয়েশন অ্যান্ড ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিজ ধ্বংসের কিনারায় পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে খড়কুটো ধরে টিকে থাকবার চেষ্টা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে এয়ারলাইন্সসহ এর সঙ্গে সম্পর্কিত সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারটা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সবসময়ই গুরুত্বহীন বিষয় মনে করা হতো। আজ স্বাস্থবিধি অগ্রগণ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকছে সব শ্রেণির মানুষ। সবাই জীবনের নিরাপত্তা চায় সবার আগে। নারী, পুরুষ ও শিশু সবার চোখ আটকে থাকছে সংবাদ মাধ্যমে। সারাবিশ্বে আজ কতজন মানুষ করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছেন, কতজন মৃত্যুবরণ করেছেন, কিংবা কতজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন সেই খবর নেওয়ার জন্য। সেইসঙ্গে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সংবাদে সবাই কমবেশি আপ্লুত হই। সবকিছুর মূলেই হচ্ছে স্বাস্থ্য সতর্কতা। ‘বিশ্বকে জানা আর দেশকে চেনা’ এ অনিন্দ্য সুন্দর বাক্যটিতে দেশকে চেনার এক সুবর্ণ সুযোগ। সবধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশীয় পর্যটকদের জন্য দু’হাত ভরে সাধুবাদ জানাচ্ছে সবুজ, সুন্দর, পাহাড়, নদী, সাগর আর সমতলের এক অপূর্ব মিলন মেলায়। আর সেই মিলন-মেলাই হচ্ছে আমাদের সোনার বাংলা।
গত প্রায় দু’দশক ধরেই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যটক শ্রেণি গড়ে উঠে। যারা প্রতিবছর অন্তত একবার হলেও দেশের বাহিরে বেড়াতে যায়। বিশেষ করে এশিয়ার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গন্তব্য নেপাল, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভুটান, ভিয়েতনাম, মালদ্বীপসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশি পর্যটকটের জন্য অভয়ারন্যে রূপ নিয়েছে। আধুনিক শহর কিংবা প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য খুঁজে নিতে প্রতিবছর বহু সংখ্যক পর্যটক বিদেশ-বিভূইয়ে বেড়িয়ে পড়েন। যাদের অধিকাংশই নিজের দেশকে দেখার কিংবা চেনার সুযোগ হয়ে উঠেনি। এর পেছনে কারণ হিসেবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, নিরাপত্তা ও ভালো পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে না উঠা এবং সেইসঙ্গে পর্যটকদের দোরগোড়ায় পর্যটন কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে তথ্য না পৌঁছানো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে করোনাকালীন সময়ে সব দেশের ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যাদের ঘুরে বেড়ানো অভ্যাসে পরিনত হয়েছে তারা এ বছর বেড়িয়ে পড়বেন সুযোগের অপেক্ষায় থাকা কিংবা পরিস্থিতির কারণে নিজের দেশকে দেখার এবং চেনার সুবর্ণ সুযোগ নেওয়ার। সারাদেশের সব পর্যটন কেন্দ্রগুলো নিজের সংস্কৃতিকে বজায় রেখে দেশীয় পর্যটকদের নিজ ঘরে আমন্ত্রণ জানানোর এমন সুযোগ বিগত দিনে যেমন আসেনি ভবিষ্যতেও আসবে কিনা সন্দিহান।
এভিয়েশন সেক্টর করোনাকালীন সময়ে যে স্থবির অবস্থার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলো সেখান থেকে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশীয় পর্যটনশিল্পের অগ্রযাত্রায় দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো বড় ভূমিকা রাখছে। হোটেল মোটেল রিসোর্টসহ সব ট্যুরিস্টদের জন্য সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ অতীব জরুরি। আসন্ন শীতকালই দেশীয় পর্যটকদের জন্য দেশকে চেনার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটন সংস্থাগুলো পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় রূপ দেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ । শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে দেশীয় পর্যটক আকর্ষণের মধ্যদিয়ে ২০২১ সালই হবে দেশীয় পর্যটনের জন্য উৎকৃষ্ট সময়।
লেখক
মো.কামরুল ইসলাম
মহাব্যবস্থাপক
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২০
ওএইচ/