খুলনা: সবুজ প্রকৃতিতে বুক ভরে নিশ্বাস নিতে সুন্দরবনে ছুটছেন পর্যটকরা। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে টানা সাত মাস বন্ধ থাকার পর রোববার (০১ নভেম্বর) থেকে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন।
রোববার প্রথম দিনেই অবসাদ কাটাতে অনেকেই সুন্দরবনে বেড়াতে গেছেন। পর্যটকরা আবার সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে পেরে ভীষণ খুশি। সকালে খুলনা থেকে কটকা এক্সপ্রেস ও মোংলা থেকে আলোর কোল নামের দুইটি লঞ্চে পর্যটকরা সুন্দরবনের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আযম ডেভিড বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্যুরস অপারেটররা। নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার পর রোববার সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সুন্দরবনের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়েছেন। ৩ ও ৬ তারিখে বেশকিছু লঞ্চ ও জাহাজ পর্যটকদের নিয়ে সুন্দরবনে দিকে রওয়ানা দেবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন সংশ্লিষ্ট সবার রুজি রুটির কথা চিন্তা করে রোববার থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে সুন্দরবন। পর্যটকরা আবার সুন্দরবন ভ্রমণে যাচ্ছেন। তবে প্রতিটি জলযানে ৫০ জনের বেশি পর্যটক যেতে পারছেন না। এছাড়া করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্যুর পরিচালনা করার জন্য ট্যুর অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ মাসের শেষে রাস মেলাকে কেন্দ্র করে সুন্দরবন ভ্রমণে কিছুটা কঠোরতা জারি করা হবে। যদিও এবার রাস মেলা হচ্ছে না হবে রাস পূজা। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পূজায় যেতে হবে সবাইকে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ সাত মাস পর সাড়া পড়েছে খুলনা ও মোংলার ট্যুর অপারেটরদের মধ্যে। খুলনায় ৬৩টি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং ছোটবড় মিলে ৫২টি ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। যেগুলোর ধারণক্ষমতা ১০ থেকে ৭০ জন। খুলনায় সর্বোচ্চ ৭০ জন ধারণক্ষমতার জাহাজ রয়েছে ৬টি। এছাড়া মোংলা থেকে বেশ কিছু ছোট বোট মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটক বহন করে। এবারের শীতে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। সেজন্য আগে-ভাগে অনেকেই কাছের মানুষদের নিয়ে সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য বুকিং দিচ্ছেন। খুলনার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট, ৪ নম্বর ঘাট, ফরেস্ট ঘাট, রূপসা এলাকা ও আঠারোবেকি নদীসহ মোংলার বিভিন্ন স্পটে ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট লঞ্চগুলো পর্যটকদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গত ১৯ মার্চ পুরো সুন্দরবনে পর্যটকদের যাতায়াত ও নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবন জুড়ে এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে জানানো হয়।
সুন্দরবন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিতে ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন গত কয়েকমাস ধরে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলো।
করোনার কারণে প্রায় সাড়ে সাত মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে পর্যটকদের জন্য। বন বিভাগের বিভিন্ন শর্ত মেনে রোববার থেকে সুন্দরবনে ঢুকতে পারছেন পর্যটকরা। এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে বনবিভাগ। সেখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিশেষ নির্দেশনা।
শর্তে বলা হয়েছে, কোনো একটি জাহাজে ৫০ জনের বেশি পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রবেশের আগে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্যও বন বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২০
এএটি