ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

প্রশান্তির ছোঁয়া ঝুলন্ত সেতু-শিশুপার্ক

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
প্রশান্তির ছোঁয়া ঝুলন্ত সেতু-শিশুপার্ক

রাঙামাটি:  পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনো সময় নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। প্রতিদিনের গদবাঁধা নিয়মে কাজ করতে করতে তারা হাঁফিয়ে উঠেন।

এই জন্য তারা প্রশান্তির ছোঁয়া খুঁজে বেড়ায়। বিনোদন উপভোগ করতে চায়।

পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির প্রকৃতগতভাবে আলাদা সৌন্দর্য থাকলেও এখানে তেমন পর্যটন স্পট নেই। যে কারণে স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিদিন একই দৃশ্য দেখতে দেখতে একঘেঁয়েমি ভাব চলে আসছে।

জেলা শহর ছাড়া প্রত্যেক উপজেলাগুলো অত্যন্ত দুর্গম। সেখানে বিনোদনকেন্দ্র বলতে কিছুই নেই। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো-তাদেরও স্ব-স্ব এলাকায় যেন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠুক। কিন্তু বিভিন্ন পারিপার্শ্বিকতার কারণে সেভাবে কোনো বিনোদন গড়ে উঠেনি। তারপরও সীমিত সীমাবদ্ধার মধ্যে সরকার কয়েকটা উপজেলায় বিনোদনকেন্দ্র গড়ে দিয়েছে।

এর মধ্যে বর্তমানে দুর্গম রাজস্থলী উপজেল অন্যতম। এই উপজেলায় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষের বসবাস। উপজেলার শিশুপার্ক এবং ঝুলন্ত সেতুটি এখন বিনোদনের জন্য অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে উপজেলাবাসীর জন্য। এটা তাদের জন্য আশীর্বাদও বটে। প্রতিদিন শত শত পর্যটকের ঢল নামছে ঝুলন্ত সেতুটি এক নজর দেখার জন্য এবং প্রশান্তির ছোঁয়া নিয়ে যাচ্ছে শিশু পার্কটিতে ঘোরাঘুরিতে।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কাপ্তাই হ্রদের কোল ঘেঁষে মাত্র ৪০ শতাংশ জায়গাজুড়ে তৎকালীন সরকার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শিশুপার্ক এবং ঝুলন্ত সেতু স্থাপন করে দিয়েছে। পরবর্তীতে অযত্নে ও অবহেলায় পার্কটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিলো।  

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বর্তমান সরকার পার্কটি সংস্কারে উদ্যোগ নেয়। শিশু পার্কটিতে বিনোদনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে শ্বেত পাথরের ঈগল, মায়া হরিণ, বানর, ডলফিনসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। শিশুদের  খেলাধূলার জন্য দোলনাসহ নানা ধরনের রাইড স্থাপন করা হয়েছে।

বর্তমানে পার্কটি নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে পার্কটিতে শত শত পর্যটকের ঢল নামছে। পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা এবং রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলা থেকেও পর্যটকরা সেখানে ছুটে যাচ্ছেন ঝুলন্ত সেতুটি এক নজর দেখার জন্য।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী আকবর বাংলানিউজকে বলেন, আমি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে এ উপজেলায় বসবাস করছি। এখানে বিনোদন বলতে কিছুই ছিলো না। সরকার পার্কটি সংস্কার এবং নতুন, নতুন রাইড স্থাপন করে দেওয়ায় খুব ভালো লাগছে। এখন সময় করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পার্কটিতে ঘুরতে যায়।

ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, পার্ক থাকলেও এখানে থাকা-খাওয়ার জন্য কোনো আবাসিক হোটেল এবং রেস্তোরাঁ নেই। যে কারণে দূর-দূরান্তের পর্যটকরা পার্ক এবং ঝুলন্ত সেতু দেখতে এলেও দিনে দিনে ফিরে যেতে হয়। এখানে একটি আবাসিক হোটেল এবং ভালো মানের রেস্তোরাঁ স্থাপিত হওয়া জরুরি বলে যোগ করেন।

রাজস্থলী উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজগর আলী খান বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান সরকার চারদিকে উন্নয়ন করছে। উন্নয়ন করছে পাহাড়ের আনাচে-কানাচে। তাই সরকারের কাছে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো। এ উপজেলায় শিশু পার্কটি সংস্কারসহ এখানে স্থানীয়দের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেওয়া। সরকার আমাদের দাবি পূরণ করে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

রাজস্থলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ সাদেক বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ উপজেলায় আসার পর দেখি জরাজীর্ণ অবস্থায় শিশু পার্কটি পড়ে আছে।  সরকারি অর্থ দিয়ে এবং উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পার্কটি সংস্কার করে দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে নতুন নতুন রাইড। পাশাপাশি পর্যটক টানতে কাপ্তাই হ্রদের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু।

ইউএনও আরও বলেন, এখন অনেক ভালো লাগছে। নিজেও এই পার্কে গিয়ে সময় কাটায়। প্রতিদিন পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে।  

বন্ধের দিনে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়। পার্কটিতে আরও নতুনত্ব আনা হবে বলে যোগ করেন ওই ইউএনও।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।