রাজশাহী থেকে: কথায় বলে, সাগরপাড়ে দাঁড়ালে সমুদ্রের বিশালতায় নিজেকে খুব ক্ষুদ্র মনে হয়। সাগরের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আর বিশালতা উপভোগ করতে হলে সাগরপাড়ে যাওয়া সম্ভব না হলে ঘুরে আসা যায় রাজশাহীর পদ্মার পাড় থেকে।
সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর ঘুরে দেখা যায়, শহরের এক পাশজুড়ে বিস্তৃত পদ্মার পাড়ের প্রায় ১২ কিলোমিটার জায়গা জুড়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন দর্শনার্থীরা। শীতের সকাল কিংবা পড়ন্ত বিকেলে পদ্মাপাড়ের উন্মুক্ত পরিবেশ আর নয়নাভিরাম দৃশ্য আকৃষ্ট করছে রাজশাহীর জনগণকে। চাঁদনীরাতেও ভিড় থাকে এখানে। সূর্য কিংবা চাঁদের প্রতিবিম্ব যখন পানিতে পড়ে, তখন এক অসাধারণ দৃশ্যের অবতারণা হয়। নদীর তীর ঘেঁষেই আবার কোথাও কোথাও রয়েছে মনোরম সবুজ মাঠ। শুধু রাজশাহী নয় বরং আশেপাশের জেলা থেকেও অনেকে আসেন এ সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
পদ্মার কোল ঘেঁষে প্রায় ১২ কিলোমিটার জায়গার বিভিন্ন পয়েন্ট জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে সড়ক পথ। নগরীর বুলনপুর থেকে শুরু করে বড়কুঠি ও পঞ্চবটি হয়ে সাতবাড়িয়া এলাকা পর্যন্ত এসব পয়েন্ট বিস্তৃত। এসব পয়েন্টে থাকা বাঁধের সড়কে হেঁটে কিংবা মোটরবাইকে বেশ আরামেই ঘুরে আসা যায় পদ্মার তীর।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক সংলগ্ন বুলনপুর আইবাঁধ এবং পঞ্চবটি আইবাঁধ এলাকাতেই দর্শনার্থীদের আনাগোনা বেশি।
বুলনপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শামীম আহমেদ বলেন, প্রায় তিন-চার বছর আগে এ বাঁধটি করা হয়েছে। ইংরেজি ‘আই’ অক্ষরের আদলে হওয়ায় স্থানীয়দের কাছে এগুলো আইবাঁধ নামেই বেশি পরিচিত। হাইটেক পার্ক সংলগ্ন বাঁধটি হাইটেক আইবাঁধ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা বলছেন, এমনিতেই দারুণ সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে রাজশাহীর পদ্মা নদীর পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা। তবে আরও কিছু সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হলে এটিই হয়ে উঠতে পারে রাজশাহীর প্রধান বিনোদন কেন্দ্র।
দিনাজপুর থেকে হাইটেক পার্ক আইবাঁধ এলাকায় বেড়াতে আসা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রাজশাহী এসেছিলাম একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। এখানে এসে শুনলাম এ বাঁধের কথা। তাই চলে এলাম। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে যে দারুণ পরিবেশ ও প্রকৃতি উপভোগ করলাম, সেটি সত্যিই দারুণ ছিল। আমাদের মতো সাধারণ জনগণের কাছে বিনোদন কেন্দ্র খুব কম। এমন একটি স্থান হওয়াতে আমাদের জন্য ভালো হলো।
তবে এখনও অত্র এলাকায় পর্যটক ও দর্শনার্থীবান্ধব বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন বলে মনে করেন আরেক দর্শনার্থী তাহেরা কুসুম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী বলেন, কোথাও বেড়াতে গেলে আশেপাশে খাবারের কোনো ভালো ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। এখানে এখনও ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। এছাড়া বাঁধজুড়ে বেশ কয়েকটি বসার বেঞ্চ বানানো হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয়। এগুলো বাড়াতে হবে। নারী ও শিশুরা থাকলে কতক্ষণ আর দাঁড়িয়ে থাকা যায়? আজকের মতো বন্ধের দিনে (১৬ ডিসেম্বর) মানুষের চাপ বেশি থাকে। একই সঙ্গে পদ্মার কিনারা জুড়ে যদি ভালো আবাসিক হোটেল থাকে, তাহলে রাজশাহীর বাইরে থেকে যারা আসবেন, তারা রাতে থাকতে পারবেন। এমন কিছু পরিকল্পনা নিয়ে স্থানগুলো সাজানো হলে এখানে একটি ভালো পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে।
দর্শনার্থীদের এমন চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) তাদের সেবার পরিধি বাড়িয়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমরা জানি। এর জন্য পাড়ের পুরো এলাকার মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি স্থানকে দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এছাড়া এসব স্পটে যেন দর্শনার্থীরা সহজেই যাতায়াত করতে পারেন, সে জন্য এর সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলো প্রশস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া এখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণেরও কথা রয়েছে। আশা করছি, এসব কাজ হয়ে গেলে দর্শনার্থীরা আরও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন আর এখানে একটি পর্যটকবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২০
এস এইচ এস/এসআই