কক্সবাজার: খোলার আগেই যেন খুলে গেল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। অনেকে বিষয়টি এভাবেই বলছেন।
পর্যটকরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে ঘরবন্দি থাকতে-থাকতে মন প্রাণ বিষন্ন হয়ে ওঠেছে। সে কারণেই লকডাউন তুলে নেওয়ার পর প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে কক্সবাজার ছুটে আসা।
এদিকে শুধুমাত্র সমুদ্র সৈকত নয়, দ্বিতীয় দফায় প্রায় সাড়ে চার মাস বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস। ৫০ শতাংশ কক্ষ খালি রেখে হোটেল পরিচালনার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিনের নিষ্প্রাণ পর্যটন জোন হঠাৎ যেন ফিরে পেয়েছে প্রাণচাঞ্চল্য ।
খোলার আগেই খুলে গেল সৈকত:
বুধবার বিকেল ৪টা। সৈকতের সি-ইন পয়েন্টে শতাধিক পর্যটক ও স্থানীয় লোকজনের ভিড়। যেন রোদ-বৃষ্টি কিছুই মানছেন না তারা। মনে হচ্ছে দীর্ঘদিন পর আবার প্রাণ ফিরে পেল সমুদ্রসৈকত। ভাঙলো নজিরবিহীন নীরবতা।
ঢাকার নারায়ণগঞ্জ থেকে স্ত্রীকে নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসেন রিজভী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কক্সবাজার আগে থেকেই আমার পছন্দের জায়গা। তাই করোনায় ঘরবন্দি থাকতে-থাকতে ভাবলাম কক্সবাজার থেকেই ঘুরে আসি। এখানকার খোলা মেলা পরিবেশ, সবকিছু দেখে ভালো লাগছে। কখনো রোদ, কখনো বৃষ্টি-কোনোটাই খারাপ লাগছে না। খুব এনজয় করছি। মনে হচ্ছে ভালো লাগার চেয়ে ভালো লাগছে। এভাবেই সৈকত ভ্রমণের কথা জানালেন কুমিল্লা থেকে আসা অভি রহমান।
সুমনা হক নামে আরেক পর্যটক বলেন, সবকিছু মিলে অসাধারণ লাগছে। আগের মতো লোকজনের বেশি ভিড় নেই। করোনাকালে লোকজন স্বাস্থ্যবিধিও মানছে। ভালো লাগছে।
অন্যদিকে করোনা মহামারিতে দফায় দফায় লোকসানের মুখে পড়া পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন পরিস্থিতি ভালো হলে কিছুটা হলেও তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সরকার পর্যটন শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিধি-নিষেধ শিথিল করেছে। এ অবস্থায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সবাই সর্তকভাবে কাজ করছে। আমরা আশা করছি, করোনার কারণে পর্যটনের যে ক্ষতি হয়েছে তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবো।
হোটেল সি-গালের সহকারী ব্যবস্থাপক (ফ্রন্ট ডেস্ক) তারেক আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে এবং স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে আমরা পর্যটকদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। কোনোভাবেই যেন ভিড় লেগে না যায় সেদিকে আমরা নজর রাখছি। অবশ্যই অর্ধেক কক্ষ ফাঁকা রেখে আমরা হোটেল পরিচালনা করবো। বুকিংও নেওয়া হচ্ছে সেভাবে।
কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের দৈনিক গড়ে ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বিধি-নিষেধের কারণে দিনের পর দিন হোটেল-মোটেল বন্ধ ছিল। এতে অনেক দক্ষ পর্যটনকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। এ ক্ষতি পুষিয়ে এখন নতুন করে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে ক্ষতি কতটা পুষিয়ে আনতে পারবো জানি না।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ড. মো.মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, দেশে করোনার সংক্রমণ এখনো চলছে। করোনা থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। তাই হোটেল-মোটেলগুলোকে অবশ্যই সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং অর্ধেক কক্ষ বা আসন ফাঁকা রেখে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার, বিনোদনকেন্দ্র চালু রাখা যাবে। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১ এপ্রিল থেকে করোনা সংক্রমণ রোধে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ বিনোদন ও পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। দীর্ঘ চার মাস ১৮ দিন বন্ধ রাখার পর আজ সরকার এসব স্থান পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
এসবি/এএটি