কক্সবাজার থেকে ফিরে: বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ভ্রমণ। আর যারা ভ্রমণ করেন তাদের বলা হয় ট্যুরিস্ট বা পর্যটক।
দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন নগরী ও বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতের জেলা কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জন্য তেমনি রয়েছে এখানকার ট্যুরিস্ট পুলিশ। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশের একটি অংশ হিসেবে যাত্রা শুরুর সময় থেকেই কক্সবাজারের পর্যটকদের সেবায় নিয়োজিত আছে কক্সবাজার জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশ।
‘পুলিশ সুপার (এসপি)’ পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশে কাজ করছেন ১৮৬ জন সদস্য। কক্সবাজার শহরের সৈকতের পয়েন্টগুলোতে, টেকনাফ এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপে নিয়োজিত আছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এই সদস্যরা। পর্যটকদের বিভিন্ন ধরনের সেবা, নিরাপত্তা এবং হয়রানি ও বিপত্তি রোধের সংকল্প নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।
সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কক্সবাজার জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা এখানে ১৮৬ জন কাজ করছি। কক্সবাজার মূল শহরের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণীসহ বিভিন্ন বিচে, টেকনাফে এবং সেন্টমার্টিনে নিয়োজিত আছি আমরা। ফিল্ড অপারেশনের পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজ, লজিস্টিক্স কাজসহ বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত হয়ে আমরা কাজ করছি। এদের মধ্যে ১৩০ জন সরাসরি ফিল্ড ওয়ার্ক করেন। আর ৮০ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য প্রতি আট ঘণ্টার শিফটে বিভক্ত হয়ে শুধু কক্সবাজারের বিচ এলাকায় সর্বদা দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি জেলা অন্যান্য সংস্থার সঙ্গেও কাজ করি আমরা। যেমন, কোনো সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বা অভিযান থাকলে সেখানেও প্রয়োজন সাপেক্ষে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা অংশ নেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতিতে পর্যটকেরা কক্সবাজারে নিরাপদ বলে দাবি করেন পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান। একই সঙ্গে নিজেদের নিরাপত্তায় পর্যটকদের মাঝেও ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জিল্লুর রহমান বলেন, একদিন সিভিল পোশাকে সৈকত ধরে টহল দিচ্ছিলাম। তখন এক পর্যটককে দেখি যে, ব্যাগ নিয়েই বিচের বেডে শুয়ে আছেন। রাত ৩টার দিকে তিনি কক্সবাজার এসেছেন এবং সকাল হলে হোটেলে উঠবেন। ব্যাগপত্র নিয়ে এত রাতে বিচে আসায় কোনো ভীতি কাজ করছে কী না জানতে চাইলাম। তিনি উত্তর দিলেন, এখানে ট্যুরিস্ট পুলিশ সবসময় দায়িত্বে থাকেন তাই তিনি কোনো ভয় পাচ্ছেন না। ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের এমন অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে।
দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে এবং পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন ট্যুরিস্ট পুলিশে। পরিবার পরিজন ছেড়ে পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন তারা। তেমনই একজন সহকারি উপ-পুলিশ পরিদর্শক সোহেল রানা। রানা বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় থাকেন। আমি এখানে আছি। এখানে যখন পর্যটকদের দেখি, তারা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসে তখন নিজের পরিবারের কথা খুব মনে পড়ে। তাদের কথা মনে করেই এখানে যারা আসেন তাদের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
যে কোনো প্রয়োজনে ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করা যায় এবং পর্যটকদের ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শও দেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, একবার ভোর পাঁচটার দিকে সরাসরি আমার মোবাইলে একটা কল আসে, মাইক্রোবাসে করে যাওয়ার সময় একদল পর্যটক পথ হারিয়ে ফেলেন এবং তাদের মাইক্রোবাস এক জায়গায় আটকে যায়। আমরা তখন দ্রুতই সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করে তাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করি। এমন যে কোনো প্রয়োজনে অথবা যখনই কোনো পর্যটক প্রয়োজন বোধ করবেন তখনই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। আমাদের ফেসবুক পেজে হটলাইন নম্বর ০১৩২০-১৫৯০৮৭ সহ আমার নিজের নম্বরও দেওয়া আছে। পাশাপাশি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব। আমাদের কোন নম্বরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা যদি ছুটি বা অন্য কোন কারণে কল গ্রহণ করার মতো অবস্থায় না থাকেন তাহলে তার নম্বর অন্যকোন সদস্য বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নম্বরে ডাইভার্ট করা থাকে। ফলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সহজ এবং আমরা দ্রুত সাড়া দিতে পারি। কাজেই পর্যটকদের উদ্দেশ্যে আমি বলব, কক্সবাজার ভ্রমণে সাহায্য নিন ট্যুরিস্ট পুলিশের।
বাংলাদেহস সময়: ২০৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২১
এসএইচএস/এএটি