কক্সবাজার: সেন্টমার্টিনকে অনেকে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলে থাকেন। দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ খ্যাত ওই দ্বীপটি যেন অপার সৌন্দর্যের হাতছানি।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার সাগরপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় সেন্টমার্টিনে। সি-ট্রাক বা ট্রলারে গিয়ে দ্বীপের একমাত্র জেটির ওপর দিয়ে পা দিতে হয় দ্বীপে। কিন্তু দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হতে হতে সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে দ্বীপের একমাত্র জেটিটি। মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা এ জেটি দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে দ্বীপবাসী পারাপার করলে ভাঙাচোরা এ জেটিতে পর্যটকবাহী জাহাজ আদৌ ভিড়ানো যাবে কিনা তা নিয়ে দুঃচিন্তায় পড়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, পর্যটন মৌসুম চলে এসেছে। সেপ্টেম্বরের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুর দিকে দ্বীপে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হতে পারে। এর আগেই জেটিটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করা না হলে হুমকির মুখে পড়বে পর্যটন ব্যবসা। এছাড়াও জেটিটি এভাবে পড়ে থাকলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পদক্ষেপ বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলার সভাপতি তোফায়েল আহমেদ জেটিটি অবিলম্বে সংস্কারের দাবি করে বাংলানিউজকে বলেন, এত কম সময়ে নতুন জেটি তো নির্মাণ সম্ভব নয়, কিন্তু জরুরিভিত্তিতে এটি সংস্কার করা না হলে সেন্টমার্টিন নির্ভর পর্যটনশিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে। এতে সেখানকার পর্যটন খাতে জড়িত কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা ও কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে পড়বে। পর্যটনশিল্পের ক্ষতির পাশাপাশি সরকারও বিপুল রাজস্ব হারাবে।
পর্যটন উদ্যোক্তা তৌহিদুল ইসলাম তোহা বাংলানিউজকে বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের পর্যটনকে ঘিরে ৭-৮টি জাহাজ, ২০০-৩০০ বাস-মিনিবাস, ১০০ মাইক্রোবাস, ২০০ ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান, ৪০০ টুরিস্ট গাইড, দেড় শতাধিক হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ জড়িত। জেটির কারণে এখানে পর্যটক আসতে না পারলে এসব প্রতিষ্ঠান ও মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পর্যটন উদ্যোক্তারা সেন্টমার্টিন দ্বীপে উদ্যোক্তাদের নানা খাতের বিনিয়োগের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ দ্বীপের পর্যটন ব্যবসায় জড়িত উদ্যোক্তা রয়েছে। করোনায় এমনিতেই এ খাতটি বিধ্বস্ত, সেখানে জেটিটি সংস্কার না হলে পর্যটক না পেয়ে সবাই ক্ষতির মুখে পড়বে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এ দ্বীপের জনসংখ্যা ১০ হাজারের একটু বেশি। এছাড়াও এখানে পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে কমপক্ষে আরও ৩শ মানুষ রয়েছেন, যারা জেটিটি ব্যবহার করে থাকেন। তিনি বলেন, জেটিটি সর্বশেষ গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের ধাক্কায় জেটির অনেকাংশে ভেঙে পড়েছে। কিন্তু কয়েকমাস পেরিয়ে গেলেও জেটি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিব খান বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় জেটিটি ‘মরণ ফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনায় বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। দ্রুত জেটিটির সংস্কার প্রয়োজন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেটিটি সংস্কার না করায় চলাচলে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। ঘটছে দুর্ঘটনাও। এটি দ্রুত সংস্কারের জন্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
এসবি/এএটি