খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের দার্জিলিং খ্যাত সাজেক এখন আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। এক সময়ের অন্ধকারে নিমজ্জিত সাজেকে এখন আলোর মিছিল।
১০ বছর আগেও এক অজানা অচেনা পল্লির নাম ছিল ‘সাজেক’। দেখতে দেখতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের সাজেক হয়ে উঠেছে দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন নগরীতে। প্রতিদিন শতশত পর্যটকে মুখরিত থাকে সেই প্রত্যন্ত এলাকা। সূর্য ডুবতেই অন্ধকারে ডুবে যেতো যেই সাজেক; সেখানকার অজপাড়া গাঁগুলো এখন আলোয় আলোকিত। সারা দেশের উন্নয়নের ধারায় বদলে যাওয়া সাজেকে এখন বিদ্যুৎও এসেছে। মানুষের কল্পনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে সাজেক আজ উন্নয়নের রোল মডেল। যে সাজেকে কুপি ও সৌর বিদ্যুতের মিটমিট আলোয় পড়াশুনা করতো শিক্ষার্থীরা। এখন তারা বিদ্যুতের ঝলমল আলোয় পড়াশুনা করতে পারছে। একইভাবে মিলছে তথ্যপ্রযুক্তি ও যান্ত্রিক জীবনের নানা সুযোগ-সুবিধা। বিদ্যুতের আলোতে পড়ালেখা করতে পেরে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ আসায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে।
সাজেক রুইলুই মৌজার হেডম্যান এল থাংগা লুসাই বলেন, একটা সময় সাজেকে আমরা সড়ক, বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অনেক অসুবিধায় ছিলাম। জীবনমানও অতটা উন্নত ছিল না। এসব সুবিধা কল্পনায় ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার আসার পর থেকে সড়ক, বিদ্যুৎ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়েছি। শিশুরা ঠিকঠাক মতো পড়ালেখা করতে পারছে।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা বলেন, একটা সময় সাজেককে দুর্গম এলাকা হিসেবে দেখা হতো। এখনতো সবকিছু বদলে গেছে। এখানে বিদ্যুৎ আসবে এবং পাকা সড়ক হবে এটি কল্পনাও করিনি। আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। আস্তে আস্তে সবাই বিদ্যুতের সুফল পাবে। সাজেকের মতো এলাকাতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নানা ধর্মীয় প্রার্থনাঘর গড়ে উঠেছে। পিচঢালা মসৃণ রাস্তা পৌঁছেছে সেসব প্রত্যন্ত গ্রামেও। পথে পথে উন্নয়নের নানা চিত্র। কংক্রিটের বড় বড় সেতু। বিশাল সড়ক হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছাকাছি পর্যন্ত। সীমানা ঘেঁষে সেই সড়ক গিয়ে লাগবে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে। সাজেকের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে পাংখোয়া, লুসাই, ত্রিপুরা ও চাকমারা জানালেন তাদের সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য ও সমৃদ্ধির কথা। পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও আনন্দিত সরকারের এরূপ ভালো উদ্যোগের। কেবল সাজেকই নয়; পাহাড়ের প্রত্যন্ত পল্লিতেও লেগেছে উন্নয়নের ছোয়া। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে মানুষ এখন নিজস্ব উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী যত্ন মানিক চাকমা বলেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে সাজেক এবং তার আশপাশ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি এবং আস্তে আস্তে অনেক দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারব বলে আশা করছি। পার্বত্য চট্টগ্রাম শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, সরকার পাহাড়বাসীর প্রতি আন্তরিক বলে সাজেকের মত জায়গায় এখন বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, সড়ক যোগাযোগের উন্নতি ঘটেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক সাজেক দেখে আকৃষ্ট হচ্ছে। দেশে বিনোদনের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। পাহাড়ের মানুষ মনে করেন একদিন পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের শতভাগ জনগণই যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সামগ্রিক উন্নয়নে সমৃদ্ধ হবে, সেই প্রত্যাশা সবার।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১
এডি/এএটি